সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৯ শে এপ্রিল, ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ২টো। বসিরহাট জেলা হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে আসেন আলানিন গাজি। ঘাড়ের কাছে সাংঘাতিক কোপের আঘাত নিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় হাজির হন বছর পঁয়ত্রিশের ওই ব্যক্তি। রোগীকে দেখেই অতি তৎপরতার সঙ্গে জটিল অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁর প্রাণ বাঁচালেন চিকিৎসকরা।
মাটিয়া থানার উত্তর দেবীপুরের বাসিন্দার এমন আঘাত দেখেই চিকিৎসকরা তৎক্ষণাৎ অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিলেন। জানিয়ে দেওয়া হল, অস্ত্রোপচার না করতে পারলে রক্তক্ষরণে মারা যাবেন ব্যক্তি। ইমারজেন্সিতে ছিলেন অর্থোপেডিক সার্জেন ডা. সাহির মণ্ডল। আঘাতের গুরুত্ব বুঝে সঙ্গে সঙ্গে কথা বলেন অন-কল ইএনটি সার্জেন ডা: সর্বজিৎ সরকার এবং জেনারেল সার্জেন ডা: লোকনাথ মণ্ডলের সঙ্গে। সর্বজিৎ সরকারআর লোকনাথ মন্ডল। তাঁদের তত্ত্বাবধানেই প্রাণ বাঁচে রোগীর।
[আরও পড়ুন: নেই রোজগেরে ছেলেরা, সরকারি সাহায্য পেয়েও বাঁচার চিন্তায় আকুল নিহত পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবার]
রোগীর প্রাণ সংকট বুঝে শল্যচিকিৎসকদের সম্মিলিত দল অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয়। অ্যানেস্থেটিস্ট ডা. পাপড়ি বিশ্বাসও পরামর্শ দেন, ঝুঁকিপূর্ণ হলেও অপারেশন জরুরি। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় অপারেশনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। মজুত করা হয় রক্তেরও। এরপর শুরু হয় জটিল অস্ত্রোপচার। প্রায় ঘণ্টা দেড়েকের অপারেশনে নতুন জীবন পান গাজি। অনেকখানি রক্তক্ষরণ হওয়ায় দিতে হয় রক্তও।
ডা. সর্বজিতের কথায়, এমনভাবে কোপ লেগেছিল, যে কাটা পড়েছিল ট্রাপিজিয়াস, সোলিয়াস-সহ কয়েকটি মাংস পেশী এবং কিছু ধমনী। রক্ত ঝরছিল অবিরত। অপারেশন সহজ ছিল না। কারণ খুব কাছেই ছিল শ্বাসনালি ট্রাকিয়া, ব্রেকিয়াল প্লেক্সাস। যা কিনা কাঁধের জয়েন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নার্ভের মেলা। একটু এদিক-ওদিক হলেই অকেজো হয়ে যেতে পারত শ্বাসনালি। অকেজো হয়ে পড়ত গোটা হাতটাই। কিন্তু প্রাণ বাঁচাতে ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে ধমনী খুঁজে খুঁজে বেঁধে রক্ত বন্ধ করা হয় ওই রোগীর। ১৮ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন রোগী। হাসপাতালের বেডে শুয়ে লিকুইড ডায়েট খেতে খেতে ধন্যবাদ দিচ্ছেন ডাক্তারদের। শুধু কলকাতার নামী হাসপাতালেই নয়, জেলা হাসপাতালগুলিও যে সাফল্যের জন্য কাজ করে চলেছে, এ ঘটনা তারই প্রমাণ।