অর্ণব আইচ: এরই পূর্বসূরী একসময় সন্ধান পেয়েছিল ওসামা বিন লাদেনের (Osama Bin Laden)। তারই সাহায্য নিয়ে লাদেনকে খতম করেছিল আমেরিকার ‘সিল টিম সিক্স’। তার জন্যই যে পাকিস্তানের আব্বোত্তাবাদের গোপন ডেরায় আল কায়দার শীর্ষ নেতার সন্ধান পেয়ে আমেরিকার ‘অপারেশন নেপচুন স্পিয়ার’ সফল হয়েছিল, তা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। ‘কায়রো’ নামের সেই বিশ্ববিখ্যাত কুকুরটি বেলজিয়ান ম্যালিনোস প্রজাতির। এবার ‘কায়রো’রই উত্তরসূরী ‘জুয়েল’ আসছে কলকাতায়। প্রশিক্ষণের শেষে সোমবারই কলকাতা পুলিশের বেলজিয়ান ম্যালিনোস (Belgian Malinois) তথা বেলজিয়ান শেফার্ড ‘জুয়েল’কে নিয়ে কলকাতায় নিয়ে আসছে কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) বিশেষ টিম।
‘জুয়েল’-এর সঙ্গেই কলকাতায় এসে পৌঁছচ্ছে ল্যাবরাডর ‘গিনি’। ‘জুয়েল’ ও ‘গিনি’ দু’জনই বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। চণ্ডীগড়ের পাঁচকুলার ভানুতে ইন্ডো টিবেটিয়ান বর্ডার পুলিশের শিবিরে টানা ৬ মাস ধরে প্রশিক্ষণের শেষে শনিবার রাতে কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়্যাডের এই দুই সদস্যকে নিয়ে কালকা মেলের বিশেষ বাতানুকূল কামরার ক্যুপে ওঠে পাঁচজন পুলিশ আধিকারিক ও পুলিশকর্মীর একটি টিম। প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার এই যাত্রাপথে যাতে দু’জনের কোনও কষ্ট না হয়, সেদিকেই বিশেষ নজর রয়েছে এই টিমের। সোমবারই তাদের নিয়ে হাওড়ায় এসে পৌঁছচ্ছে ডগ স্কোয়্যাডের টিম। এখনও কলকাতা পুলিশের গোল্ডেন রিট্রিভার লাকি, দু’টি ল্যাবরাডর স্মাইল ও ভানু এবং আরও দু’টি জার্মান শেফার্ডের প্রশিক্ষণ চলছে ভানুতে।
পুলিশ জানিয়েছে, এর আগেও উপহার হিসাবে একটি বেলজিয়ান শেফার্ডকে পেয়েছিল ডগ স্কোয়্যাড। কিন্তু ব্যাধিতে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হয় সেটির। এর পর কুকুরপ্রেমী এক যুবক তাঁরই বন্ধুর কাছ থেকে একটি মেয়ে বেলজিয়ান ম্যালিনোসকে জোগাড় করে নিয়ে এসে কলকাতা পুলিশকে উপহার দেন। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখে বুঝতে পারেন যে, সে পুলিশের কাজে উপযুক্ত। এর পরই তাকে ডগ স্কোয়্যাডে নিয়োগ করা হয়। বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ হিসাবে ‘জুয়েল’কে ৬ মাস আগে প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। লালবাজারের কর্তারা জানান, অন্যান্য ব্রিড, এমনকী, অনেকটা একই রকম দেখতে জার্মান শেফার্ডের থেকেও অনেক ক্ষেত্রে বেলজিয়ান ম্যালিনোসের তফাৎ রয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘ঝুমে জো রিঙ্কু…’, ‘পাঠান’-এর মেজাজেই নাইটদের নতুন নায়ককে শুভেচ্ছা শাহরুখের]
দেখা গিয়েছে, অন্য ব্রিডের কুকুরের থেকে অনেক বেশি কর্মঠ ও কার্যকর বেলজিয়ান ম্যালিনোস। অত্যন্ত হালকা প্রজাতির এই কুকুর যেমন প্রচণ্ড জোরে দৌড়তে বা অনেক উঁচুতে লাফাতে ওস্তাদ, তেমনই তাদের বুদ্ধি ক্ষুরধার। অতি অল্প সময়ের মধ্যে শেখার প্রবণতা রয়েছে। গন্ধ শোঁকার ক্ষমতাও অনেকের থেকে বেশি। আবার একই সঙ্গে সহজে অপরাধী বা খুনি ধরতে অথবা ‘গার্ড ডগ’ হিসাবে কাজ করতেও তাদের জুড়ি নেই। আবার যতই ঠান্ডা বা গরম পড়ুক না কেন, যে কোনও আবহাওয়ায় সমানভাবে কাজ করতে পারে এই প্রজাতির কুকুর। লালবাজারের এক আধিকারিক জানান, প্রশিক্ষণের পর অন্য প্রজাতির কুকুরদের নিয়ে বিশেষ ভাবতে হয় না, কারণ তারা গতানুগতিক ডিউটি করে। কিন্তু বেলজিয়ান ম্যালিনোস প্রজাতির কুকুরদের জন্য রীতিমতো ভেবে নতুন নতুন কাজ দিতে হয়। নতুন কিছু শেখাতে হয়। না হলে তারা একঘেয়ে বোধ করে, যার প্রভাব পড়ে কাজে।
সোমবার ‘জুয়েল’ ও ‘গিনি’ কলকাতায় আসার পর কলকাতা পুলিশ ট্রেনিংয়ের ডগ স্কোয়াডে থাকতে শুরু করবে ৪২ সদস্য। যদিও ২১ দিন কোয়ারানটাইনে থাকতে হবে জুয়েল আর গিনিকে। তার পর তারা কাজে যোগ দেবে। বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ হিসাবে ভিআইপি ডিউটি করবে তারা। যদিও এই প্রচণ্ড গরমে অন্যান্য সদস্যদের মতো প্রত্যেকদিন দই, ঘোল, গ্লুকোজ খেতে দেওয়া হবে তাদের। প্রয়োজনে পরানো হবে আইস প্যাক। অন্য সদস্যরা সোমবার থেকেই সুইমিং পুলে দিনে দু’বার করে সাঁতার কাটবে। কোয়ারানটাইন পিরিয়ডের শেষে জুয়েল ও গিনিও সাঁতরে পুল এপার ওপার করবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।