shono
Advertisement

‘দলবদলু’দের হাতেই বঙ্গ বিজেপি! আদি কর্মীদের তুমুল বিদ্রোহে ফুটিফাটা সংগঠন

জেলায় জেলায় একই হাল!
Posted: 02:34 PM Apr 23, 2022Updated: 03:14 PM Apr 23, 2022

সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: দলবদলুদের হাতেই চলে যাচ্ছে বঙ্গ বিজেপি (BJP)। দলের আদিরা বহু জেলা ও মণ্ডলে অপসারিত, কোথাও বহিষ্কৃত, আবার অনেক জোনে নিষ্ক্রিয়। অধিকাংশ জেলাতেই সিপিএমের লোকজন নিয়ন্ত্রণ করছে গেরুয়া পার্টি। দলের রাজ্য কমিটির মাথায় সুকান্ত মজুমদার থাকলেও আসলে যে নিচুতলায় যে তাঁর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, তা নিয়ে প্রকাশ্যেই সরব হয়েছেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। প্রাক্তনের বক্তব্য যে সঠিক তা সমর্থন করেই ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় গেরুয়া শিবিরে প্রকাশ্যেই বিদ্রোহ শুরু হয়ে গিয়েছে। আদি বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, পরিকল্পনা করে বাংলায় দলটাকে ‘আউটসোর্স’ করে প্রাক্তন আলিমুদ্দিনপন্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করছে মুরলীধর সেন লেনের ক্ষমতাশালী গোষ্ঠী।

Advertisement

উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ, নতুন বিজেপি কমিটির একটা বড় অংশই যে দলবদলুরাই দায়িত্বে এসেছেন তা তথ্য তুলে অভিযোগ করেছেন বিদ্রোহী নেতারা। তাঁদের স্পষ্ট অভিযোগ, সুপরিকল্পিতভাবে বিজেপি দলটাকে অতি সন্তর্পণে দখল করে নিচ্ছে প্রাক্তন সিপিএম (CPM) নেতারা। যাঁদের গায়ে একসময় স্থানীয় বাসিন্দারা ‘হার্মাদ’ তকমা লাগিয়ে দিয়েছিল। স্বভাবতই এই সমস্ত প্রাক্তন লালপার্টির দাপুটে নেতারা গেরুয়া শিবিরের দখল নেওয়ায় সাধারণ মানুষ পদ্ম থেকে সরে যাচ্ছেন, দল গোহারা হচ্ছে।

সদ্য ঘোষিত নতুন কমিটিতে পূর্ব মেদিনীপুরের (East Midnapore) বিজেপি জেলা সভাপতি পদে যাওয়া তপন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের ঘনিষ্ঠ অনুগামী ছিলেন। প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষের অনুগামী পশ্চিম মেদিনীপুরের অশ্বিনী জানা ও মোহনলাল শী, দু’জনেই একদা জেলার পরিচিত ও প্রভাবশালী সিপিএম নেতা ছিলেন, এখন দু’জনেই জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি। পূর্ব মেদিনীপুরের স্বপন রায়ও সিপিএম থেকে গেরুয়া শিবিরে এসে গেরুয়া দলের জেলা সহ-সভাপতি হলেন। নন্দকুমারের জোনাল সম্পাদক ছিলেন জীমূত মাইতির সঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ছোটভাই সৌমেন্দুও জেলা বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক। কেশপুর জোনাল কমিটির দাপুটে নেতা তন্ময় ঘোষ এখন দারুণ মেজাজে এলাকায় বিজেপি চালাচ্ছেন। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যও গোটা পশ্চিম মেদিনীপুরে এখন পদ্মশিবিরে পরিচিত ও প্রভাবশালী নেত্রী। বামফ্রন্ট সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী মহেশ্বর মুর্মুর পুত্র বিনোদ মুর্মুই এখন বকলমে কেশিয়ারি বিজেপি চালাচ্ছেন।  

[আরও পড়ুন: রাবড়ি দেবীর বাড়িতে ইফতার পার্টিতে নীতীশ, বদলাচ্ছে বিহারের রাজনৈতিক সমীকরণ?]

উত্তর দিনাজপুরের (North Dinajpur) প্রাক্তন এবিটিএ’র শিক্ষক নেতা কমল দেবনাথ এখন জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক হলেন। হেমতাবাদ ব্লকের লোকাল কমিটির নেতা দিলীপ বর্মনও সাধারণ সম্পাদক। করণদিঘির ফরওয়ার্ড ব্লকের নামী নেতা সুভাষ সিংহ এখন পদ্মশিবিরের নিয়ন্ত্রক। শিলিগুড়ির প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যর ভাবশিষ্য শংকর ঘোষ বিধায়ক হয়ে গোটা জলপাইগুড়ির মণ্ডল থেকে জেলাকমিটিতে প্রাক্তন লালপার্টির নেতাদের বসিয়ে দিচ্ছেন।

পূর্ব মেদিনীপুরের ছবিটাও প্রায় একই। সিপিএম থেকে এসে বিজেপির সহ-সভাপতি হয়েছেন আশিস মণ্ডল। প্রাক্তন বাম বিধায়ক তমালিকা পণ্ডাশেঠের ঘনিষ্ঠ মহিষাদলের নেত্রী শুক্লা দাসও বিজেপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় পূর্ব মেদিনীপুরের আদি গেরুয়া কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। হলদিয়ার মণ্ডল কমিটিগুলি পুরোপুরি বিধায়ক তাপসী মণ্ডলের নেতৃত্বে প্রাক্তন সিপিএম ও সিটু নেতারাই যে পুরোপুরি দখল করেছেন তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে রাজ্য দফতরে চিঠি পাঠিয়েছেন আদিকর্মীরা। আর বন্দর শহরের গেরুয়া শিবির দখলে তাপসীর সঙ্গে সাহায্য করেছেন প্রাক্তন ডিওয়াইএফআই (DYFI) নেতা শ্যামল মাইতি। এমন অভিযোগ দিলীপ ঘোষ,লকেটপন্থী গেরুয়া নেতাদের।

[আরও পড়ুন: রাজস্থান ম্যাচে ‘নো-বল’ ঘিরে ধুন্ধুমারের জের, দল তুলে নিতে চাওয়ায় কড়া শাস্তির মুখে পন্থ]

দলবদলুরাই যে বিজেপিকে দখল করে নিচ্ছে সেই তথ্য সামনে আসে শালতোড়া ১ মণ্ডল সভাপতি পদে প্রদীপ মাঝিকে নিয়োগে। অভিযোগ ২০১৪ সালের আগে শালতোড়া ব্লকের বামুনতোড় গ্রামপঞ্চায়েত এলাকা থেকে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছিলেন এই প্রদীপ মাঝি। লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই তাঁকে মণ্ডলের সভাপতি করা হয়। জঙ্গলমহলের রানিবাঁধেও ক্ষোভ চরমে। রানিবাঁধ দক্ষিণ মণ্ডলে ঝাড়খণ্ড পার্টি থেকে আসা তারক সরেন, খাতড়া ১ মণ্ডল সভাপতি পদে সিপিএম থেকে আগত দিলীপ দুলে, খাতড়া ২ মণ্ডল সভাপতি পদে প্রবীণ বিজেপি নেতা আদিনাথ দে’কে সরিয়ে তৃণমূল থেকে আগত আশিস মাহাতো এবং হীড়বাঁধে তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির থেকে আগত অতনু হালদারের নাম ঘোষণায় ক্ষোভ চরমে।

পুরলিয়ায় (Purulia)বিধানসভা ও পুরনির্বাচনে যে সব মণ্ডলে ভাল ফল হয়নি, সেখানে মণ্ডল সভাপতিদের ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। পুরুলিয়ার ৪৮ মণ্ডলে নতুন কমিটির যে তালিকা কলকাতায় গিয়েছে, তাতে এমন ইঙ্গিতই রয়েছে বলে সূত্রের খবর। শুক্রবার টুইটারে ও ফেসবুকে নাম না করে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে ঠুকেছেন অনুপম হাজরা। তিনি লিখেছেন, ‘আত্ম-অহংকার ছাড়ো..আত্মবিশ্লেষণ করো!!!… পুরনো মানুষগুলো ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে!!’ এরপর লেখেন, ‘মিলে মিশে করি কাজ, হারি-জিতি নাহি লাজ।’

হুগলিতে আবার আরেক কাণ্ড! এখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টের কমেন্টে দলের জেলা কার্যালয় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা লেখেন অভিজিৎ দে নামে এক বিজেপি কর্মী। একইসঙ্গে এক প্রভাবশালী রাজ্য নেতাকেও ‘টাকলুই মেন ভিলেন’ বলে মন্তব্য করেন। এই ঘটনায় মূল পোস্টদাতা সত্যজিৎ সরকার ও সত্যজিৎ দে’র বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। ঘরোয়া কোন্দল সামলাতে এভাবে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ায় হাসছেন সবাই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup রাজধানী এক্সপ্রেস toolbarvideo ISL10 toolbarshorts রোববার