সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের বঙ্গ রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়েছে সিঙ্গুর পর্ব। আরবিট্রেশনে জয় পেয়েছে টাটা গোষ্ঠী। রাজ্যকে বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ মেটাতে হবে। সেই আরবিট্রশনের পক্ষে-বিপক্ষে সওয়াল করছেন রাজনীতিকরা। এবার সিঙ্গুর জমিহারাদের নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কী বললেন তিনি?
না, আরবিট্রাল ট্রাইবুনালের আরবিট্রশন নিয়ে অবশ্য় কোনও মন্তব্য করেননি রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। জানাননি রাজ্যের শিল্প নিগম ৭৬৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ মেটাবে কি না। বরং সিঙ্গুরের জমিহারাদের পাশে যে রাজ্য সরকার সবসময় রয়েছে, সোমবার তা আরও একবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। জানিয়েছেন, জমিহারাদের মাসিক ২ হাজার টাকা দেয় রাজ্য। দেওয়া হয় চালও। অর্থাৎ রাজ্য তাঁদের পরিবারকে প্রতিপালন করার ব্যবস্থা করেছে বলে জানিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমান পরিস্থিতি যা অত্য়ন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিঙ্গুরে কারখানা বন্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৭৬৬ কোটি টাকা টাটা মোটরসকে দেবে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি মামলার খরচ স্বরূপ টাটা গোষ্ঠীকে আরও ১ কোটি টাকা দিতে হবে। সব মিলিয়ে রাজ্যের কোষাগার থেকে ৭৬৭ কোটি টাকা পাবে টাটা গোষ্ঠী (Tata Group)। যা সিঙ্গুর মামলায় টাটা গোষ্ঠীর বড় জয় হিসাবে ধরা হচ্ছে। যদিও এই ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আইনি পথ এখনও খোলা আছে।
২০০৬ সালে বুদ্ধদেববাবুর সরকার টাটাকে সিঙ্গুরে ছোটো গাড়ি তৈরির জন্য জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই মতো রাজ্যের শিল্প উন্নয়ন নিগমের সঙ্গে টাটার চুক্তি হয়। সিঙ্গুরের বেরাবেড়ি, খাসেরভেড়ি, সিঙেরভেড়ি, বাজেমেলিয়া ও গোপালনগর মোট পাঁচটি মৌজার ৯৯৭ একর জমি চিহ্নিত করে অধিগ্রহণ করা হয়। সেই জমি ঘিরতেই শুরু হয় আন্দোলন। অনিচ্ছুক কৃষকরা দাবি করেন, তাঁদের উর্বর জমি এভাবে জোর করে নিয়ে নেওয়া যাবে না। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যান সিঙ্গুরের কৃষকরা। কারখানার কাজ প্রায় আশি শতাংশ শেষ হয়ে গেলেও পিছু হটে টাটা। ২০০৮ সালে সিঙ্গুর থেকে কারখানা গুটিয়ে গুজরাটে চলে যায়।
বলা হয়, সিঙ্গুরকে ভর করে রাজ্যে পালাবদল হয়। তার লাভ ঘরে তোলে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নেন তিনি। কিন্তু জনস্বার্থে জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল বলে আদালতে হলফনামায় জানিয়েছিল বাম সরকার। সেই মামলা হাই কোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে যায়। ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ আদালত রায় দেয় কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিতে হবে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। ন্যানো কারখানা এবং অনুসারী শিল্পের শেড ভাঙা হয় রাতারাতি। পনেরো বছর পর সোমবার ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে টাটারা সিঙ্গুরে কারাখানা গড়তে যে টাকা লগ্নি করেছিল তা সুদ সমেত ক্ষতিপূরণ হিসাবে দিতে হবে।