shono
Advertisement

বাবা-ঠাকুরদা কর্মসূত্রে আসানসোলের, হাথরাসের নির্যাতিতা বাংলারই ‘ঘরের মেয়ে’

'ঘরের মেয়ে'র এমন মর্মান্তিক পরিণতিতে ক্ষোভে ফুঁসছেন বার্নপুরবাসী।
Posted: 08:28 PM Oct 04, 2020Updated: 08:36 PM Oct 04, 2020

চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে ওঠা কান্নাভেজা, অসহায় মুখগুলো দেখে চিনে নিতে এক মুহূর্তও বিলম্ব হয়নি আসানসোলের (Asansol) বার্নপুর ইস্পাত কারখানার কর্মীদের। এ তো সেই পরিবার, যারা একসময়ে এই ইস্পাত কারখানাতেই কাজ করত। এভাবেই আচমকা উন্মোচিত হল হাথরাসের নির্যাতিতা (Hathras Gang Rape) তরুণীর বাংলা যোগ। তাঁর বাবা, ঠাকুরদার কর্মসূত্রে দীর্ঘকাল ছিলেন আসানসোলের বাসিন্দা। বার্নপুর ইস্পাত কারখানায় কাজ করতেন ঠাকুরদা। এখন তাঁদের বাস উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে হলেও, প্রাক্তন কর্মীর পরিবারের মেয়েকে এমন নৃশংসতার মুখে পড়তে দেখে ক্ষোভে ফুঁসছেন বার্নপুরবাসী। তাঁদের আবেগ একটু বেশিই। কারণ, এ তো তাঁদের ‘ঘরের মেয়ে’।

Advertisement

জানা গিয়েছে, হাথরাসের নির্যাতিতা যুবতীর ঠাকুরদা বার্নপুর ইস্পাত কারখানার সেনেটারি বিভাগের কর্মী ছিলেন। বাবার কর্মসূত্রে এখানেই থাকতেন তরুণীর বাবাও। তাঁর ছাত্র ও যৌবন কেটেছে শিল্পশহরে। এমনকী তাঁর বিয়েও হয়েছিল এখান থেকে। থাকতেন অন্যান্য আত্মীয়ও। এখনও বার্নপুর জুড়ে ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছেন হাথরাসের বাল্মীকি পরিবারের সদস্যরা। কেউ মৃত যুবতীর সম্পর্কে কাকা, কেউ বা মৃতের বাবার মামাতো ভাই। তাঁরা সকলেই চান, ধর্ষকদের সাজা হোক। পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা এও জানালেন, পশ্চিমবঙ্গে তাঁরা অনেক সুরক্ষিত। কারণ এখানে কোনও জাতপাতের রাজনীতি নেই।

[আরও পড়ুন: আফ্রিকা যাচ্ছে বাংলার চাল, বীরভূম থেকে হলদিয়ায় কন্টেনার পৌঁছে রেলের আয় ন’লক্ষ]

বার্নপুর ইস্পাত কারখানায় নির্যাতিতার ঠাকুরদার সঙ্গে কাজ করতেন নিমাই বাউরি। তাঁর থেকে জানা গেল, ১৯৯৯ সালে ভিআরএস নিয়ে ওই পরিবার বার্নপুর থেকে চলে যায়। প্রথমে তাঁরা থাকতেন নিউটাউনের সুইপার কোয়ার্টারে। পরে চলে আসেন বার্নপুরের রাঙাপাড়ায়। তরুণীর বাবা বার্নপুর বয়েজ স্কুলের ছাত্র ছিলেন। পড়াশোনা শেষ করে বিয়েও হয়েছে বার্নপুর থেকে। নিমাইবাবুর কথায়, ”এই ঘটনায় আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি। হাথরাস গ্রামে আমার আরেক সহকর্মী করণলাল বাল্মিকীর মাধ্যমে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি ওই পরিবারের।”

মৃতা সম্পর্কে ভাইঝি হয় বার্নপুরের ইসকো কারখানার কর্মী জগদীশ বাল্মিকীর। তিনি বলছেন, ”আমরা দুই ভাই একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি। আমাদের যোগযোগও রয়েছে। গত বছর ওর বাবা বার্নপুর কারখানার এরিয়ার বকেয়া টাকা পাওয়ার জন্য এখানে এসেছিল। আমার বাড়িতেই ছিল। সামান্য ওই টাকা পেয়ে সে খুশি হয়ে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছিল। এই ঘটনায় আমরা খুব মর্মাহত। ওদের ওপর ওখানে অত্যাচার হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, ”আমরা এখানে কর্মসূত্রে এলেও স্থায়ী ঘর তৈরি করেছি। পশ্চিমবঙ্গের মত সুরক্ষিত অন্য কোনও রাজ্য নয়। এখানে উঁচু-নিচু, জাতপাত হয় না।” পশ্চিমবঙ্গ বাউরি সমাজ কল্যান সমিতির রাজ্য সভাপতি রাজবংশী বাউরির কথায় ”ওর সঙ্গে আমাদের শহরের রক্তের সম্পর্ক। তাই আমরা বাল্মিকী, হরিজন, হাঁড়ি – সমস্ত জাতি একত্রিত হয়ে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছি। দোষীরা কঠোরতম শাস্তি পাক, এটাই আমরা চাইছি।”

[আরও পড়ুন: ‘করোনার থেকেও ভয়ংকর মমতা’, ফের বেফাঁস মন্তব্য বিজেপি সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের]

এদিকে, ঘটনার পর থেকে সুরক্ষাহীনতায় ভুগছে হাথরাসের এই দলিত পরিবার। নানা দিক থেকে চাপ আসছে বলে অভিযোগ করছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে পরিবারকে ওয়াই ক্যাটাগরির নিরাপত্তা প্রদানের দাবি তুললেন ভীম আর্মি প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ। এও বললেন, তাঁদের Y ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়া না হলে, তিনি এই পরিবারের সদস্যদের নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সুরক্ষার বন্দোবস্ত করবেন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup ছাঁদনাতলা toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার