স্টাফ রিপোর্টার: বাংলা ক্রিকেটের প্রতি নাকি ঋদ্ধিমান সাহার দায়বদ্ধতা নেই। তিনি নাকি গায়ে ব্যথা, পায়ে ব্যথার অজুহাত দিয়ে বাংলার হয়ে অনেক ম্যাচ খেলতেও চাননি। সিএবি-র যুগ্ম-সচিব দেবব্রত দাসের এমন বিস্ফোরক অভিযোগ শুনে ফেটে পড়েছে বঙ্গ ক্রিকেট। বলা হচ্ছে, যে ছেলেটা ভারতীয় দলে খেলে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ক্লাবের জার্সি গায়ে নেমে পড়তে পারেন। যে ছেলেটা নিজের সদ্যোজাতকে নাম মাত্র দেখে বাংলার হয়ে রনজি খেলতে চলে যেতে পারেন, তাঁর দায়বব্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে তাঁকে অপমান করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সিএবি যুগ্ম সচিবের এরকম মন্তব্য প্রকাশের পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের ছড়াছড়ি। রোমি (ঋদ্ধির স্ত্রী) ফেসবুকে একটা পোস্ট করেন। সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, বঙ্গ ক্রিকেটের একনিষ্ঠ সেবককে যেভাবে অপমান করতে নেমে পড়েছে সিএবি, সেটা তাঁদের কতটা রক্তাক্ত করছে। রোমি বলেন, ‘রনজি ট্রফিতে গড় পঞ্চাশ। সেটা কি গায়ে ব্যথা, পায়ে ব্যথার অজুহাত নিয়ে খেলে? ও ভাঙা আঙুল নিয়ে খেলেছে, সেটা শুনেছি আর দেখেওছি। আগে যদি জানতাম ওর গায়ে ব্যথা, পায়ে ব্যথা হয়, তাহলে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিতে বলতাম। যেটা ও কোনওদিনও নেয়নি। আমার কঠিন সময়ে স্বামীকে আমি পাশে পাইনি। কেন ওকে পাশে পাইনি, তা নিয়ে আমার কোনও আক্ষেপ নেই। কেন রনজি খেলছে না, সেই কারণ ও জানিয়ে এসেছে। ব্যক্তিগত কারণটা কী, সেটা কেউ জানতে চায়নি। তাই ও সেটা বলেওনি। আমার মনে হয় সেটা ব্যক্তিগত রাখাই উচিত। এখানে আমার একটা প্রশ্ন রয়েছে। ব্রেক কি কিছু নির্দিষ্ট লোকেরাই নিতে পারেন? ঋদ্ধি কামব্যাকের জন্য খেলবে কেন? নতুন করে আর কী প্রমাণ করার আছে? যেখানে বয়সটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য সেটা শুধু কারও কারও ক্ষেত্রে। অন্যদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। প্রাক্তন কোচ থেকে শুরু করে সতীর্থ, ম্যানেজমেন্ট স্টাফ সবাই জানেন, ঋদ্ধি (Wriddhiman Saha) কতটা পরিশ্রমী আর সৎ ক্রিকেটার। শেষের দিকে এসে এরকম কিছুর সামনে পড়তে হচ্ছে, সত্যিই খুব দুর্ভাগ্যজনক।’’
[আরও পড়ুন: নিয়ম বদলাচ্ছে আইপিএলের, কঠিন গ্রুপে KKR, ঘোষিত ফাইনালের দিনক্ষণও]
ঋদ্ধি এটা নিয়ে খুব একটা কিছু বলতে চাননি। শুধু বললেন, “আমি সিএবি কর্তার সঙ্গে দেখা করে যা বলার বলব। এতদিন ধরে খেলছি। সবাই জানে আমি কী রকম, আমার দায়বদ্ধতা আছে কি না।” বঙ্গ ক্রিকেটমহলে কিন্তু তুলোধোনা চলছে। ঋদ্ধি ক্লাব ক্রিকেটে দীর্ঘসময় মোহনবাগানের হয়ে খেলেছেন। ক্রিকেট সচিব সম্রাট ভৌমিক ঋদ্ধি সম্পর্কে এমন অভিযোগ শুনে রীতিমতো অবাক। বলছিলেন, ‘‘দায়বদ্ধতা শব্দটা যদি ঋদ্ধির পাশে না বসে, তা হলে আমার মনে হয় না সেটা আর অন্য কারও ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ঋদ্ধি আইপিএল (IPL) ফাইনালে সেঞ্চুরি করে পরের দিন ভোরবেলায় শহরে ফিরেই মোহনবাগানের হয়ে স্থানীয় ক্রিকেটে খেলেছিল। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খেলে আসার পরের দিনই মাঠে চলে আসে। ও সেই ম্যাচটা না খেললেও মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে গোটা দিন পুরো টিমকে উদ্বুদ্ধ করে গিয়েছে। এমনকী, সতীর্থদের জন্য মাঠে জল পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছে। চোট নিয়েও ওকে ক্লাব ম্যাচে নামতে দেখেছি। কখনও ওকে ফোন করতে হয়নি। ঋদ্ধি নিজেই ফোন করে জানত কবে ক্লাবের ম্যাচ রয়েছে। ওর দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা উচিত নয়। মনে হয় কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। সিএবির উচিত সেটা মিটিয়ে নেওয়া।”
ঋদ্ধির এক সময়ের সতীর্থ আর বঙ্গ ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা পেসার অশোক দিন্দাও রীতিমতো বিস্মিত। বললেন, “ঋদ্ধি কীভাবে বাংলার অবনমন বাঁচিয়েছিল, সেটা কী করে সবাই ভুলে গেল? একজন টেস্ট প্লেয়ারের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এটা হাস্যকর ছাড়া আর কী বলব? আমরা যারা দীর্ঘদিন বাংলার হয়ে খেলেছি, তাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার ওঁরা কে? আমার মনে হয় না সিএবিও এরকম কিছু বলবে। ঋদ্ধির সঙ্গে দীর্ঘদিন খেলেছি। কখনও মনে হয়নি ওর দায়বদ্ধতার অভাব রয়ছে। কারও কোনও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকতেই পারে। তার মানে এই নয় যে, তাঁর দায়বদ্ধতা কম। আমার মনে হয় সিএবি (CAB) কর্তাদের উচিত ঋদ্ধির সঙ্গে বৈঠকে বসা। ঋদ্ধি কী চায়, সেটা ও বলুক। আবার সিএবিও ঋদ্ধির থেকে কী চাইছে, সেটাও ওরা পরিষ্কার করে দিক। তাহলেই দেখবেন আর কোনওরকম সমস্যা থাকছে না। আলোচনার মাধ্যমে সব কিছু মিটিয়ে নেওয়া সম্ভব।”
মোহনবাগানের (Mohun Bagan) কোচ পলাশ নন্দীর বক্তব্য, ‘‘ঋদ্ধির দায়বদ্ধতার অভাব রয়েছে, কখনও মনে হয়নি। ক্লাবের যে ম্যাচে খেলেনি, সেখানেও জলের বোতল নিয়ে মাঠে দৌড়ে যেত।’’ এই ব্যাপার নিয়ে সিএবিও স্পষ্টত দুটো ভাগ হয়ে গিয়েছে। এক প্রাক্তন কর্তা তো বলেই দিলেন, চূড়ান্ত নোংরামো চলছে। তিনি এতটাই বিরক্ত যে কিছু বলতেও চাইলেন না। সিএবির প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে আবার বলেছেন, “ঋদ্ধিমানকে আমি তেরো বছর বয়স থেকে চিনি। বাংলার ক্রিকেটে ওকে দেখেছি। ভারতীয় টিমের (Team India) ম্যানেজার থাকার সময়ও ওকে দেখেছি। পুরো পৃথিবীর লোক জানে যে ঋদ্ধি খুব কম কথা বলে। অত্যন্ত ভদ্র ক্রিকেটার। কারও সাতে-পাঁচে থাকে না। নিজের খেলার প্রতি ফোকাসড। দলের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান ও দায়িত্বশীল। ভারতীয় ক্রিকেটে, বাংলা ক্রিকেটে কেউ বলতে পারবে না ঋদ্ধিমান কখনও ১০০ শতাংশ দেয়নি। ঋদ্ধি যে যে ক্লাবে খেলেছে, তারাও বলতে পারবে না যে, ও দায়িত্ব নিয়ে খেলে না। ক্লাব ক্রিকেটের প্রতিও একইরকম যত্নবান। এসব কথা বলে একজন ক্রিকেটারকে ছোট করা হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, এটা দেবব্রত দাসের নিজের কথা নয়। দেবব্রত দাসকে দিয়ে কোনও উচ্চমহল থেকে এসব বলানো হয়েছে। যাতে তীরটা ঋদ্ধির দিকে ঘুরে যায়। যাঁরা এসব বলাচ্ছে, আমার মনে হয় না, তাঁরা বাংলা কিংবা ভারতীয় ক্রিকেটের ভাল চাইছে।”
[আরও পড়ুন: গার্হস্থ্য হিংসার মামলায় দোষী সাব্যস্ত লিয়েন্ডার পেজ, দিতে হবে মোটা টাকা খোরপোশ]
সিএবির তরফ থেকে এদিন খুব বেশি কিছু বলা হয়নি। ধরমশালার ফ্লাইট ধরতে যাওয়ার মাঝে প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া বলে গেলেন, “এটা সিএবির ভার্সান নয়।” সিএবি প্রেসিডেন্ট বললেন বটে যে, এটা সিএবির ভার্সান নয়। দেবব্রত দাস কথাগুলো কিন্তু যুগ্ম সচিবের চেয়ারে বসেই বলেছেন!