সন্দীপ চক্রবর্তী: আবারও বাংলার মেধার সর্বভারতীয় স্বীকৃতি। কৃষিনির্ভর অর্থনীতির বিজ্ঞানী হওয়ার পরীক্ষায় সেরা বঙ্গকন্যা আদৃতা দাম। কোচবিহারের একেবারে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আদৃতা। সুনীতি অ্যাকাডেমির উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কল্যাণী মোহনপুরের বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এবার গন্তব্য দিল্লির পুসা রোডে কৃষিতে দেশের সেরা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ। র্যাঙ্ক কার্ডের পর দেখা গেল, সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপের পরীক্ষায় এগ্রিকালচারাল ইকনমিক্সে একদম শীর্ষে।
বস্তুত, এবার জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপেও চমকে দিয়েছে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ৭২ জন র্যাঙ্ক পেয়েছেন। গতবারের নিরিখে সাফল্য দ্বিগুণ। উপাচার্য বিকাশ সিংহ মহাপাত্র কৃতিত্ব দিলেন পড়ুয়াদের। বললেন, ‘‘আমাদের কাজ আমরা করেছি। ছেলেমেয়েরা ভাল পড়েছে, প্রচেষ্টা করেছে। সাফল্য এলে ভাল লাগেই।’’ জিআরএফ-এর এন্টেমোলজিতে ফাস্র্ট হয়েছেন সুমন নাটুয়া। সয়েল সায়েন্সেও প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। একাধিক বিষয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় রয়েছেন।
[আরও পড়ুন: ‘আমি হাফপ্যান্ট হলে উনি কি নেংটি মন্ত্রী?’, শিশির অধিকারীকে বেনজির আক্রমণ অখিল গিরির]
বছর চব্বিশের আদৃতার প্রসঙ্গ আসছে আলাদাভাবে। এসআরএফ-এ সেরার নজির সবসময় থাকে না। তার উপর আদৃতার লড়াই ছিল স্কুলের করণিক মাকে সঙ্গে নিয়ে। কোচবিহার শহর লাগোয়া পঞ্চায়েতের শ্যামাপ্রসাদ কলোনিতে বাড়ি। মা মহিষগুড়ি স্কুলের করণিক। মাধ্যমিকে পেয়েছিলেন ৯৩.৪ শতাংশ। উচ্চ মাধ্যমিকে ৯২ শতাংশ। এমএসসি কল্যাণীর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখানেও সর্বোচ্চ নম্বর। বাবা ছিলেন একটি স্কুলের শিক্ষক। একাদশে পড়াকালীনই হারিয়েছেন বাবাকে। কিন্তু জেদ ছাড়েননি। শুরু হয় মাকে পাশে নিয়েই জেতার লড়াই। পড়াশোনার চাপে বন্ধ হয়ে যায় ভালবাসার উচ্চাঙ্গ সংগীত। তবে এখনও রান্না করতে ভালবাসেন। ভালবাসেন অবসরে বন্ধুদের সঙ্গে গল্পে মাততেও। সাধারণের মতোই ফেসবুক করেন। কিন্তু সেটা কখনও নিজের লক্ষ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
সেই আদৃতা দিল্লির পুসা রোডে আইসিআর-এ গবেষণার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কৃষকদের অর্থনীতির উন্নয়নেই এবার অনবরত কাজ করে যেতে চান। আর খুশি হবেন বাংলার কৃষকদের জন্য আলাদাভাবে নিবিড় কাজ করতে পারলে। ২০ সেপ্টেম্বর হয়েছিল এসআরএফ-এর পরীক্ষা। ফল বেরোয় ২০ অক্টোবর। আর র্যাঙ্ক কার্ড হাতে এসেছে তিনদিন আগে। ৪৮০-এর মধ্যে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর, ৩৬৬।