অর্ণব দাস, বারাকপুর: হিন্দু বিদ্বেষ ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশ। অস্থির পরিস্থিতিতে সীমান্ত পারাপারে জটিলতা। এই মুহূর্তে দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক যাতায়াত প্রায় বন্ধ। এই অবস্থায় বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা সবচেয়ে বিপাকে। নৈহাটির বড়মার মন্দিরে পুজো দেন প্রচুর বাংলাদেশি ভক্ত। সশরীরে না আসতে পারলে অনলাইনে পুজো দিয়ে থাকেন তাঁরা। 'জয় বড় মা' অ্যাপের মাধ্যমে সেই পুজো নেওয়া হয় এবং পুজোর পর প্রসাদ হিসেবে শুকনো ফল পাঠানো হয় ভক্তদের। কিন্তু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অশান্ত পরিস্থিতির কারণে সেখানকার ভক্তদের প্রসাদও পাঠাতে পারছে না মন্দির কমিটি।
রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশের ভক্তরা যাতে পুজো দেওয়া থেকে বঞ্চিত না হন, তার জন্য বড় কালীপুজো সমিতির তরফে চালু হয়েছে 'জয় বড় মা' অ্যাপ। এই অ্যাপে নাম, গোত্র, ঠিকানা, তারিখ, ফোন নম্বর এবং মনস্কামনা পূরণ করলেই পুজো দেওয়া যায়। চলতি ১০১ তম বর্ষের কালীপুজোর আগে চালু হওয়া এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিদিনই পুজোর সংখ্যা বেড়েছে। অনলাইনে পুজো দেওয়া এই ভক্তদের গত অমাবস্যা থেকেই প্রসাদ পাঠানো শুরু করেছে পুজো সমিতি। ন্যূনতম খরচে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে 'ড্রাই ফ্রুট' প্রসাদ পাঠানো হচ্ছে। পুজোর সমিতিই এই খরচ বহন করছে। রাজ্য সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেমন ভক্তরা বড়মায়ের কাছে পুজো দিচ্ছেন। তেমনই বিদেশে বসবাসকারী প্রবাসী বাঙালি এমনকি বিদেশিরাও 'জয় বড় মা' অ্যাপের মাধ্যমে পুজো দিচ্ছেন।
নৈহাটিতে নতুন করে বড়মার প্রতিষ্ঠার পর পুজোর ভিড় ক্রমশ বাড়েছে। ফাইল ছবি।
বাংলাদেশের ভক্তরাও এই অ্যাপের মাধ্যমে পুজো দিচ্ছিলেন বড়মার মন্দিরে। এরই মধ্যে ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেপ্তার করে দেশদ্রোহের মামলা দায়ের করেছে। সেদেশের হিন্দুদের উপর লাগাতার মৌলবাদীদের হামলা, লুঠতরাজের অভিযোগে উত্তাল হয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র। দেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার এই বেআব্রু ছবির প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়েছে এপার বাংলাতেও। এহেন আবহে এবার ওপার বাংলার হিন্দুরা অ্যাপের মাধ্যমে পুজো দিয়ে বড়মার কাছে একটাই প্রার্থনা, শান্তি ফিরুক স্বদেশে। বৃহস্পতিবার বড়মার দান বস্ত্র বিতরণের পুজো সমিতির সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য জানালেন, "প্রতিদিনই বাংলাদেশের হিন্দুরা অ্যাপে পুজো দিয়ে লিখছেন, 'আমরা ভালো নেই। বড়মা, দেশে শান্তি ফেরান।' এখনও পর্যন্ত এরকম প্রায় শতাধিক পুজো এসেছে। এমনিতে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ঠিকানায় প্রসাদ পাঠানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে পুজো দেওয়া ভক্তদের প্রসাদ পাঠালে পৌঁছবে কি না, এনিয়ে চিন্তায় আছি। তাই প্রসাদ পাঠাতে পারছি না।"
নৈহাটির বড়মার মন্দিরে অনলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশি ভক্তদের পুজো।
বৃহস্পতিবার বড়মার মন্দিরে বস্ত্রদান অনুষ্ঠানে মোট আট হাজার শাড়ি পুজো সমিতির তরফে বিতরণ হয়েছে। এছাড়াও দুর্গাপূজার সময় বিভিন্ন ক্লাবের মাধ্যমে ও সারা বছর মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার শাড়ি-সহ দুস্থ পরিবারের মেয়েদের বিয়ের জন্য হাজার খানেক বেনারসি বিতরণ হয়েছে। ভক্তদের ভিড় ও অন্যান্য সামাজিক প্রকল্পের কাজ ঠিকমতো চললেও এই মুহূর্তে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন সমিতির সদস্যরা। অহরহ শান্তি কামনায় প্রার্থনা করছেন তাঁরা। আর দূরে বসে ওপার বাংলার ভক্তকুলও করজোড়ে একই প্রার্থনায় মগ্ন।