shono
Advertisement

ফিরে দেখা ২০২২: রাজ্য রাজনীতিতে কেউ রাজা, কেউ ফকির, বছরভর চর্চিত ৮ চরিত্র

কে হলেন রাজনীতির চাণক্য আর কে হারালেন গদি?
Posted: 01:49 PM Dec 23, 2022Updated: 05:53 PM Dec 24, 2022

শেষ হতে চলেছে আরও একটা বছর। চলতি বছরের একের পর এক রাজনৈতিক ঘটনা ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ কেটেছে। কেউ রাজ্য় রাজনীতির মঞ্চে রাজা হয়েছেন তো কেউ হয়েছেন ফকির। পুরনো ক্য়ালেন্ডার বদলে ফেলার আগে একঝলকে দেখে নেওয়া যাক, বছর শেষে কে হলেন রাজনীতির চাণক্য আর কে হারালেন তাঁর গদি?

Advertisement

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়: এই তালিকায় প্রথম নামটাই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদকের। একাধারে জনদরদী জননেতা, বাংলার ইউথ আইকন তো অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) যোগ্য সেনাপতি। শুধু বাংলা নয়, গেরুয়া শিবিরের ঘাঁটি ত্রিপুরা-মেঘালয়-গোয়ার মতো রাজ্যগুলিতেও বিজেপি নেতাদের বুকে ভয় ধরিয়েছেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)। বিরোধীদের সমস্ত আক্রমণ সামলে ভিনরাজ্যে তৃণমূলের (TMC) ঝান্ডা ওড়ানোর অন্যতম কারিগর। ঠান্ডা ঘরে বসে সোশ্যাল মিডিয়া কাঁপানো নয়, মাঠে নেমে শত্রুদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করছেন অভিষেক। শুধু তাই নয়, রাজ্য়ের সংগঠন থেকেও বেনোজল বের করার গুরুদায়িত্ব তাঁর কাঁধে রয়েছে। সবমিলিয়ে এবছর বঙ্গের সবচেয়ে চর্চিত রাজনাতিক নেতা অভিষেক। ধাপে ধাপে যাঁর উত্থান হয়েছে বাংলার রাজনীতিতে।

 

 

শুভেন্দু অধিকারী: বছরভর গর্জেছেন রাজ্য়ের বিরোধী দলনেতা কিন্তু বর্ষালেন কই? বছর শেষে শুভেন্দুর ‘ডিসেম্বর তত্ত্ব’ ডাহা ফেল করার পর এমনই প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের। দল বদলে বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম ছাড়া তেমন সাড়া ফেলতে পারেননি তিনি। এরপর বাইশের পুরভোটেও প্রভাব ফেলতে ব্য়র্থ শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) ক্যারিশমা। বহু পুর আসনে দ্বিতীয় স্থানের পরিবর্তে গেরুয়া শিবির নেমে গিয়েছে তৃতীয় স্থানে। শুভেন্দুর আমলে দলের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙেছেন পুরনো কর্মীরা। বঙ্গ বিজেপির (BJP) অন্দরেই একাধিক গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। রাজ্য়ে রাজনৈতিক পালাবদলের হুঁশিয়ারি দিলেও কাজে তেমন কিছু করে দেখাতে পারেননি বিরোধী দলনেতা। তাই বছরভর চর্চায় থাকলেও রাজ্য রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে ব্য়র্থ শুভেন্দু অধিকারী।

 

পার্থ চট্টোপাধ্যায়: তৃণমূলের শুরুর দিন থেকে একনিষ্ঠ সৈনিক ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভরসাস্থল ‘পার্থদা’। দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ছিলেন দলের মহাসচিব ও শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্য। ২০১১’র পর থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়ানোয় চলতি বছরের আগস্ট মাসে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ED) হাতে গ্রেপ্তার হন পার্থ। বিপুল সম্পত্তি ও নগদের হদিশ মেলে তাঁর সঙ্গী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) বাড়ি থেকে। এর কয়েকদিনের মাথায় তৃণমূলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখতে মন্ত্রিত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। একইদিনে দলের মহাসচিব ও শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় পার্থকে। সবমিলিয়ে চলতি বছর বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম বর্ষীয়ান নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পতন হয় বলে মত রাজনৈতিক মহলের।

 

দিলীপ ঘোষ: ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে থেকে বঙ্গে বিজেপির উত্থানের কারিগর ছিলেন দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। অথচ একুশের শেষের দিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। শুধু পদ হারানো নয়, দলের তরফে বিভিন্ন সময় ‘সেন্সর’ করা হয়েছে দিলীপকে। দলের অবস্থা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে চিঠি দিয়ে চুপ করতে বলা হয়েছে তাঁকে। বঙ্গ বিজেপি সূত্রে খবর, দলের অধিকাংশ কর্মসূচিতেই ডাকা পান না দিলীপ। প্রকাশ্য় সভা থেকে তাঁকে নিশানা করেছেন খোদ বিরোধী দলনেতা। এদিকে আবার বাংলার বদলে অন্য রাজ্য়ের সংগঠনের দায়িত্ব চাপানো হয়েছে তাঁর ঘাড়ে। সবমিলিয়ে বছরভর একের পর এক ঘটনায় এটা প্রমাণিত বঙ্গ বিজেপিতে ক্রমশ গুরুত্ব হারিয়েছেন দিলীপ ঘোষ।

 

অনুব্রত মণ্ডল: বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mandal)। তাঁর কথায় বাঘে গরুতে একঘাটে জল খেত! অথচ সেই দাপুটে নেতাকেই গরুপাচার মামলায় গ্রেপ্তার করে সিবিআই। পরে ইডির হাতেও গ্রেপ্তার হন তিনি। ক্রমশ প্রকাশ্যে আসে তাঁর বিরাট সাম্রাজ্য়ের হদিশ! প্রায় চারমাস ধরে জেলবন্দি তিনি। আইনি লড়াই লড়েও রেহাই পাননি। বছরের শেষে এসে অনুব্রতকে রাজ্য় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হতে হয়। অভিযোগ, তিনি নাকি কার্যালয়ে দলের এক কর্মীকে গলা টিপে মারার চেষ্টা করেছিলেন। আইনি প্য়াঁচ যতই থাকুক, বিরোধীরা যতই প্রচার করুক না কেন, দলে কিন্তু তাঁর গুরুত্ব একফোঁটাও কমেনি। ১২০ দিনের বেশি জেলার বাইরে থাকলেও বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি এখনও তিনি। খোদ দলনেন্ত্রী তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। দলের পুরনো দিনের সৈনিক ফিরহাদ হাকিমও তাঁকে ‘বীরভূমের বাঘ’ বলে উল্লেখ করেছেন। আদালত থেকে তৃণমূলকর্মীদের পঞ্চায়েত ভোটে জেতার টোটকা দেন অনুব্রত। এর থেকেই এটা স্পষ্ট হয় যে, বিরোধীরা যাই বলুক, যতই আইনি প্য়াঁচ থাকুক না কেন, এখনও বীরভূমের রাজনীতির শেষকথা কিন্তু অনুব্রত মণ্ডল।

মহম্মদ সেলিম: তিনি সাংসদ ছিলেন। ছিলেন পলিটব্য়ুরো সদস্যও। এবছর রাজ্যের বাম রাজনীতির মুখ হয়ে উঠলেন মহম্মদ সেলিম। একাধিক হেভিওয়েট নেতাকে পিছনে ফেলে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Md. Selim)। পার্টি ভাগের পর এই প্রথম রাজ্য সম্পাদক হলেন কোনও সংখ্যালঘু ব্যক্তি। যা বামপন্থী ইতিহাসের নতুন অধ্যায়। তবে রাজ্য সম্পাদক পদে সেলিম আসার পরই রাজ্যের বাম রাজনীতিতে নতুন এক জোয়ার আসে। বিভিন্ন ইস্যুতে ঠান্ডা ঘরে বসে শুধু বিবৃতি না দিয়ে রাতারাতি ঘটনাস্থলে পৌঁছে যেতে দেখা গিয়েছে নেতাদের। আন্দোলনে যুব প্রজন্মকে সামনে রেখে পিছনে থেকেছেন সাদাচুলের নেতারা। একাধিক পুরভোটে দেখা গিয়েছে, বিজেপিকে হারিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বামেরা। হারানো ভোটব্যাংক ফেরাতেও বেশকিছুটা সফল বামেরা। তাই বছর শেষে বলাই যায় ২০২২ সালে রাজ্য রাজনীতিতে উত্থান ঘটেছে মহম্মদ সেলিমের।

 

জগদীপ ধনকড়: রাজ্য় রাজনীতি থেকে সরাসরি সংসদীয় রাজনীতিতে ‘এন্ট্রি’ নিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar)। বাংলার রাজ্য়পাল থেকে দেশের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। বছরভর রাজ্য়ের বিরোধিতার কারণে চর্চায় থাকতেন ধনকড়। কখনও টুইট আবার কখনও চিঠি পাঠিয়ে নবান্নের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিতেন রাজ্যপাল। দু’পক্ষের অসন্তোষের জেরে শিক্ষাক্ষেত্রে রাজ্যপালের ক্ষমতাও খর্ব করে রাজ্য সরকার। অভিযোগ উঠেছে, বিজেপির হয়ে কাজ করতেন জগদীপ ধনকড়। এই বিতর্কের মাঝেই আচমকা উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থীপদে তাঁকে মনোনীত করে বিজেপি। ভোটে জিতেও যান। ২২-এর বঙ্গ রাজনীতির ময়দানে সেরা চমক হয়তো এটাই।

অধীররঞ্জন চৌধুরী: সংসদীয় রাজনীতিতে নিজের পদ টিকিয়ে রাখলেও বঙ্গ রাজনীতিতে বেশ চাপে মুর্শিদাবাদের দাপুটে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। বিধানসভা ভোটে বাংলা থেকে মুছে গিয়েছে কংগ্রেস। পুরভোটেও অধীরের গড়ে আহামরি ফল করতে পারেনি হাত শিবির। কংগ্রেসের অন্দরে গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতার পদ কোনওক্রমে টিকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসে যে তাঁর বিরুদ্ধে অঘোষিত জোট তৈরি হয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে যুব কংগ্রেস সভাপতির নির্বাচনেই। প্রদেশ সভাপতি ঘনিষ্ঠ শাহিনা জাভেদকে হারিয়ে দিয়েছেন আজহার মল্লিক। আবার সংসদে বিতর্কিত মন্তব্য করে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন অধীর। যার জেরে খোদ সোনিয়া গান্ধীর কাছে বকুনি খেয়েছেন। তাই বছর শেষে বলাই যায়, বছরটা ভাল গেল না অধীরের।

ফাইল ফটো
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup অলিম্পিক`২৪ toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার