shono
Advertisement

সম্বল মাত্র পঞ্চাশ টাকা, ১৩ দিন সাইকেল চালিয়ে বিহার থেকে বাংলায় যুবক

শুধু জল আর বিস্কুট খেয়ে কাটিয়েছেন ১৩ দিন। The post সম্বল মাত্র পঞ্চাশ টাকা, ১৩ দিন সাইকেল চালিয়ে বিহার থেকে বাংলায় যুবক appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:54 PM May 10, 2020Updated: 03:54 PM May 10, 2020

ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: বেলা দেড়টা নাগাদ দেগঙ্গা থানার সামনে মাথা ঘুরে পরে যান এক সাইকেল আরোহী। পুলিশকর্মীরা ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় এনে শুশ্রূষা করেন। সারা শরীর ধুলোয় ঢাকা। পায়ের তলায় বড় বড় ফোস্কা। চোখ মুখ একেবারে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল তার। মিনিট দশেক পর জ্ঞান ফেরে। কোথা থেকে আসছেন, কী বৃত্তান্ত জানতে চায় পুলিশ। উত্তরে ওই ব্যক্তি যা বললেন, শুনে হতবাক হয়ে গেলেন তাবড় পুলিশ অফিসাররাও।

Advertisement

১৩ দিন সাইকেল চালিয়ে, বিহার থেকে বাংলায় ফিরছিলেন ওই পরিযায়ী শ্রমিক। নাম সফিকুল মণ্ডল। বাড়ি দেগঙ্গার অম্বিকানগরে। শুধু জল আর বিস্কুট খেয়ে রোদ, ঝড়, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মাইলের পর মাইল প্যাডেল ঘুরিয়ে চলেছিলেন তিনি। সম্বল পঞ্চাশ টাকা। যখন হাঁফিয়ে গিয়েছেন, রাস্তার ধারে কোনও গাছের তলায় শুয়ে বিশ্রাম নিয়েছেন। কখনও আবার বিশ্রাম নিতে গিয়েও এলাকাবাসীর রোষের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে মানুষ। তার পরও মনের জোর হারাননি। তবে এদিন বাড়ির কাছে এসে শরীর ছেড়ে দিয়েছে। খালি পেটে এই প্রখর দাবদাহের চাপ নিতে পারেননি তিনি। সাইকেল চালানো চালাতে মাথা ঘুরে পরে যান দেগঙ্গা থানার সামনে।

[আরও পড়ুন: ফের ভিনরাজ্যে মৃত্যু মুর্শিদাবাদের ২ পরিযায়ী শ্রমিকের, দেহ ফেরানো নিয়ে ঘোর সংশয়]

দেগঙ্গা থানার পুলিশ তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর খেতে দেন। তারপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্বনাথপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁর পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন, যে করোনার প্রাথমিক কোনও উপসর্গ আছে কি না। পরীক্ষার পর সফিকুলকে বাড়ি পৌঁছে দেয় পুলিশ। সফিকুল জানিয়েছেন, আগে চাষের কাজ করতেন তিনি। কিন্তু বিশেষ জমি জায়গা না থাকায় দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই লকডাউনের দশ দিন আগে বিহারের মধুবনিতে একটি ঝাঁটার কারখানায় কাজ করতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে থাকাকালীনই লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। কারখানার মালিক দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা। লকডাউনের আগেই রাজ্যে ফিরে চলে আসেন তিনি। সফিকুল-সহ রাজ্যের ১৩ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন সেখানে। তারা প্রত্যেকেই আটকে পড়েন।

সফিকুল বলেন, “প্রথম কয়েকদিন ঘরে মজুত করা কিছু খাবার দিয়ে চলে যায়। এরপর একজন এসে দু’কেজি চাল দিয়ে গিয়েছিল। তার পর থেকে কোনও ত্রাণ পাইনি। ভেবেছিলেন কষ্ট করে কয়েকদিন চালিয়ে লকডাউন উঠতেই বাড়ি ফিরে যাব। কিন্তু লকডাউন উঠলো না। বেড়েই চলেছে।” খাবার শেষ। থাকার জায়গা নেই, তাই সফিকুল-সহ বাকি শ্রমিকরা সিদ্ধান্ত নিলেন, যেভাবেই হোক এবার বাড়ি ফিরতে হবে। কিন্তু কীভাবে? “কারখানার সামনে যে চায়ের দোকানে চা খেতাম তিনি আমার অবস্থা দেখে এগিয়ে এলেন। নিজের সাইকেল দিয়ে বললেন এটি নিয়ে বাড়ি যাও। আবার যদি কখনও ভাল দিন আসে, তখন ফেরত দিয়ে যেও।” বললেন সফিকুল।

[আরও পড়ুন: দুধের বদলে সন্তানদের ভাতের ফ্যান! আদিবাসী শিশুদের বেবিফুড দিলেন পুলিশ আধিকারিক]

২৭ এপ্রিল মধুবনি থেকে সাইকেল যাত্রা শুরু করেন সফিকুল। বাকি ১২ জন শ্রমিক পায়ে হেটে রওনা দিলেন। তাঁরা দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা। সফিকুল বলেন, “এই ১৩ দিন জল আর বিস্কুট ছাড়া কিছু জোটেনি। মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েও কোথাও পাইনি। উলটে পশুর মতো আচরণ করেছে কিছু মানুষ। ক্লান্ত হয়ে গাছের নিচে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছি। হঠাৎ লোকজন এসে চিৎকার শুরু করে। কিছু সোনার আগেই মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। তেষ্টায় গলা ফেটে যাচ্ছে। অথচ জল চেয়েও পাইনি। কোথাও কোথাও দূরপাল্লার গাড়ির চালকরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এক এক সময় মনে হচ্ছিল হয়তো বাড়ি ফেরা হবে না।”

এত সংগ্রামের পর অবশেষে এদিন বাড়ি ফিরলেন সফিকুল। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং বাড়ি ফিরেও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তিনি। সফিকুলের বড় ছেলে ক্লাস এইটে পড়ে। ছোট ছেলে ফাইভে। স্ত্রী আগে দর্জির কাজ করতেন। কিন্তু লকডাউনের জেরে সেটাও বন্ধ। বিহারের ওই কারখানায় কাজ করে সফিকুল যে ক’টি টাকা আয় করেছিলেন, তা শেষ। এখন কীভাবে খাওয়া জুটবে, সে আশঙ্কাতে ভুগছেন ওই শ্রমিক ও তাঁর পরিবার।

[আরও পড়ুন: ২১ দিনের জন্য পুরোদমে লকডাউন জারি বনগাঁয়, শর্তসাপেক্ষে খুলবে ওষুধের দোকান]

The post সম্বল মাত্র পঞ্চাশ টাকা, ১৩ দিন সাইকেল চালিয়ে বিহার থেকে বাংলায় যুবক appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement