রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: দিঘা সমুদ্র সৈকত যেন 'মৃত্যুপুরী'! শুধু দিঘা নয়, মন্দারমণি-সহ সংলগ্ন অন্য সমুদ্র সৈকতগুলিতে স্নানে নেমে তলিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে। সমুদ্রে পর্যটকদের বেপরোয়া মনোভাব এই মৃত্যুর জন্য অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। রবিবারই দিঘায় সমুদ্রস্নানে নেমে তলিয়ে মৃত্যু হয় উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়ের বাসিন্দা দীপঙ্কর নন্দীর (৩০)। সেই হিসাবে, ১৫ দিনের মধ্যেই দিঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমণি মিলিয়ে ৬ জন পর্যটকের মৃত্যু ঘটেছে। গত মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ধরলে সংখ্যাটা ১০।
রবিবার দীঘার সি-হক ঘোলা ঘাটে বন্ধুদের সঙ্গে স্নান করতে নামেন দীপঙ্কর। পুলিশের দাবি, তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন। নুলিয়া এবং পুলিশকর্মীদের নিষেধে কর্ণপাত করেননি। উত্তাল ঢেউয়ের সামনে তাল সামলাতে না পেরে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু ঘটে তাঁর। গত ২২ জুলাই শঙ্করপুরে পাথরের উপর দাঁড়িয়ে জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে সেলফি তুলছিল বাংলাদেশের (Bangladesh) চট্টগ্রামের বাসিন্দা প্রিয়ন্তি পাটোয়ারি (১৭)। বড় ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে যান প্রিয়ন্তি। পরে উদ্ধার হয় দেহ। ১৬ জুলাই মন্দারমণিতে (Mandarmani) সমুদ্রস্নানে নেমে তলিয়ে যান পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের তিন বন্ধু। সেই ঘটনায় মৃত্যু হয় সমর চক্রবর্তী (৩৮), কৌশিক মণ্ডল (৩০) ও ঋত্বিক গড়াইয়ের (২৩) নামের তিন যুবকের।
তার আগের দিনই হাওড়ার আন্দুলের বাসিন্দা অনুপম বর্মন (২৫) নামে এক যুবক মন্দারমণির সৈকতে তলিয়ে যান। মাঝে দিঘায় বেড়াতে আসা হুগলির এক পর্যটক লাগোয়া ওড়িশার (Odisha) উদয়পুর সৈকতে তলিয়ে মারা যান। জুন মাসের ১৬ তারিখ মন্দারমণির সমুদ্রে স্নানে নেমে বিহারের মুজফ্ফপুরের বাসিন্দা মণীশ কুমারের (২৬) তলিয়ে মৃত্যু হয়েছিল। ১৪ জুন দীঘার জগন্নাথ ঘাটের কাছে তলিয়ে মৃত্যু হয় উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের কিশোর শুভজিৎ দে'র (১৫)। গত ২৫ মে ছত্তিশগড়ের বাসিন্দা বেদপ্রকাশ সাহু (২৫) নামে এক যুবক দিঘায় তলিয়ে যান।
[আরও পড়ুন: যান্ত্রিক ত্রুটি, ১৬০জন যাত্রী নিয়ে বাগডোগরা থেকে উড়েও ফিরে এল দিল্লিগামী বিমান!]
এভাবেই একের পর এক পর্যটকের প্রাণ নিয়েছে সমুদ্র। দীঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, "পুলিশ প্রশাসন এ বিষয়ে যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। পর্যটকদের অনেকে মদ্যপ অবস্থায় স্নানে নেমে বেপরোয়া হয়ে বিপদ ডেকে আনছেন। পুলিশ কিংবা নুলিয়াদের পক্ষে তো সবার পিছনে নজরদারি সম্ভব নয়। স্নানে নামা পর্যটকদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে।"
প্রতিবছর জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকে। নিম্নচাপ এবং কোটালের জেরে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে সমুদ্র। ফলে এই সময়টা দুর্ঘটনার প্রবণতা বেশি থাকে। দিঘার সমুদ্রে যেমন ভিড়ের মধ্যেই পর্যটকরা স্নানে নেমে তলিয়ে যান, তেমনি উলটোদিকে মন্দারমণিতে পুলিশি নজরদারি এড়িয়ে ফাঁকা জায়গায় স্নান করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। পুলিশ আধিকারিকদের দাবি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, পর্যটকদের অনেকেই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সমুদ্রে নামছেন। ফলে তাঁদেরই কারও কারও পরিণতি হয় মর্মান্তিক।