নিজস্ব সংবাদদাতা: আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় নতুন করে ৭৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (Primary School) শুরু হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন চালু করতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামো ঠিক আছে কি না, শিক্ষক সংখ্যা যথাযথ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান অনিমেষ দে। তিনি জানিয়েছেন, "রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ থেকে আমাদের জেলায় ৭৮টি বিদ্যালয়ের তালিকা এসেছে। সবক'টি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো-সহ বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট জমা পড়বে। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই বিদ্যালয়গুলিতে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন চালু করা হবে। ধাপে ধাপে জেলার সবক'টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন শুরু করা হবে।" বছরের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয় শিক্ষাবর্ষ।
উল্লেখ্য, জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে ২০৩০ সালের মধ্যে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর রাজ্যের সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ধাপে ধাপে হাই স্কুলগুলি থেকে পঞ্চম শ্রেণি সরিয়ে নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, তা চালু করতে চায় শিক্ষা দপ্তর। ইতিমধ্যেই বেশকিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন চালু হয়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, রাজ্যে রয়েছে ৪৯ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তার মধ্যে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন চালু হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে কোনও হাই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির অস্তিত্ব থাকবে না।
রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষে দুই হাজার ২০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৭৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন। যদিও স্কুল বাছাই নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন ঘাটালের দাসপুর দুই নম্বর ব্লকের সীতাপুর বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপনকুমার জানা। তিনি বলেন, "আমার বিদ্যালয়ে যথেষ্ট পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও পঞ্চম শ্রেণি চালু করা হয়নি। ছাত্র, শিক্ষক সংখ্যা এবং শ্রেণিকক্ষ ও পরিবেশ সবই পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন চালু করার উপযুক্ত। তাহলে কেন এই বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি চালু করা হয়নি? অথচ, এমন বহু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি চালু করা হয়েছে, যেখানে পরিকাঠামো, পড়ুয়ার ও শিক্ষক সংখ্যা উপযুক্ত নয়। আমরা খুবই আশা করছি আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এই বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন চালু হবে।"
এবিপিটিএর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ধ্রুবশেখর মণ্ডল বলেন, "রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলেছি যত দ্রুত সম্ভব সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন চালু করতে। বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামো, এসিআর (অতিরিক্ত ক্লাসরুম) ও শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। আমরা লক্ষ্য করেছি রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা অবহেলিত হয়ে পড়ছে। ঠিকমতো পরিকাঠামোর উন্নতি হচ্ছে না। শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। আমরা চাই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামোর উন্নতি করে ও শিক্ষক নিয়োগ করে পঞ্চম শ্রেণি চালু করা হোক। সেই সঙ্গে এসিআর তৈরির জন্য অর্থ মঞ্জুর করা হোক। পরিকাঠামো নেই, অথচ পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন চালু করা হয়ে গেল, তা লাভের চেয়ে ক্ষতিই হবে বেশি।"
