সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ক্ষমতার স্বাদ আরও কিছুদিন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে জাতীয় নির্বাচনে আগ্রহ ছিল না উপদেষ্টা সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস! রাজনৈতিক দলগুলির চাপের মুখে তিনি নির্বাচনের পথে হাঁটতে রাজি হলেও, শেষ মুহূর্তে লন্ডভণ্ড হয়ে গেল সবকিছু। কথা ছিল আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে হবে জাতীয় নির্বাচন। তবে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে নতুন করে হিংসায় জ্বলে উঠেছে গোটা দেশ। অভিযোগ উঠছে, ইউনুস প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার জেরেই পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। প্রশ্নের মুখে সে দেশের নির্বাচন। রাজনৈতিক মহলের আশঙ্কা, অনির্দিষ্টকালের জন্য নির্বাচন পিছিয়ে দিতেই গভীর ষড়যন্ত্র রচিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে দশটা নাগাদ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় হাদির। ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র্য প্রার্থী ছিলেন তিনি। বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। সেই সময় নমাজ সেরে রিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে সেখান থেকে পাঠানো হয় সিঙ্গাপুরে। পুলিশ সূত্রে খবর, মোটর সাইকেলে এসে দুষ্কৃতীরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। তবে কে বা কারা হামলা করল, তা এখনও অজ্ঞাত। বুধবার রাতেই ইউনুসের প্রেস উইং জানিয়েছিল, হাদির শারীরিক অবস্থা রীতিমতো উদ্বেগজনক। সেই ঘোষণার পর থেকেই বাড়ছিল আশঙ্কা। অবশেষে বৃহস্পতিবার মেলে দুঃসংবাদ। তারপরই উত্তপ্ত হয় বাংলাদেশ। পুড়িয়ে দেওয়া হয় একের পর এক সংবাদমাধ্যমের অফিস। মুজিবের ধানমাণ্ডির বাড়ি। গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এক হিন্দু যুবককে।
এই অবস্থায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেশের একটা বড় অংশ চাইছে পিছিয়ে দেওয়া হোক বাংলাদেশের নির্বাচন। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম কালের কণ্ঠ সূত্রের খবর, আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কিছু না জানানো হলেও, দেশের নির্বাচন কমিশনও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, গোটা পরিস্থিতি বিচার করে নির্বাচনের কাজের সঙ্গে যুক্ত রিটার্নিং অফিসার ও কমিশন দপ্তরের নিরাপত্তা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার কথা ইতিমধ্যেই কমিশনকে জানিয়েছে সেখানকার সম্ভাব্য দুই প্রার্থী। নেত্রকোনা-২ আসনের প্রার্থী গাজি আবদুর রহিম রুহি কড়া সুরে জানান, ওসমান হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত দেশে কোনও নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। তাঁর অভিযোগ, "ভারতের ষড়যন্ত্রে প্রকাশ্য দিবালোকে আমার ভাই ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।" হত্যার বিচার না হলে দেশে আরও একটি গণঅভ্যুত্থানের হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এখন বিশ বাঁও জলে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন একই সঙ্গে হবে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটও। গত ১২ ডিসেম্বর থেকেই মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হয়েছে। চলবে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর মনোনয়ন পরীক্ষা, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর ১২ ফেব্রুয়ারি হবে নির্বাচন। তবে বর্তমান পরিস্থিতি একেবারেই নির্বাচনের পক্ষে নেই। এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলের অনুমান, ঠিক এটাই চাইছিল ইউনুস প্রশাসন। তারা চাইলে শুরুতেই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারত। এক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, সংবাদপত্রের অফিসে আগুন দেওয়ার জন্য সেনার কাছে ২০ মিনিট সময় চায় হামলাকারীরা। সেনা আশ্বস্ত করে ওই সময় দেওয়া হবে তাদের। এরপরই চলে হামলা। বুলডোজারে ধানমান্ডির বাড়ি ভাঙা হলেও সেখানে কোনও পুলিশবাহিনী দেখা যায়নি। একের পর এক সংখ্যালঘু হত্যা ও প্রকাশ্যে জ্বালিয়ে দেওয়া হলেও পুলিশের দেখা মেলেনি। সবমিলিয়ে গোটা ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ইউনুস প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা।
