সৈকত মাইতি, তমুলক: চিকিৎসক দেখানো হোক বা হাসপাতালে ভরতি। সবেতেই ভরসা এই নবতিপর তরুণী! চিকিৎসা পরিষেবার জন্য বহু মানুষকে রূপনারায়ণ পেরিয়ে তমলুকে (Tomluk) নিয়ে গিয়ে হাজির হন একানব্বইয়ের গৌরী বেরা। বয়সকে তোয়াক্কা না করে গ্রামের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা (Treatment)সংক্রান্ত যে কোনও বিপদে-আপদে সংসারের টান ফেলে আজ, এই বয়সেও ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। এক ডাকে তিনি ‘হাওড়া জেলার মাসি’ বলে পরিচিত। তা সে তমলুকের চিকিৎসক মহলেই হোক বা সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা বিভিন্ন ঔষধ দোকান (Medicine Shop) এবং প্যাথলজি সেন্টারে। এক ডাকে চেনেন সবাই।

৯১ বছরের গৌরী বেরা হাওড়া (Howrah) জেলার শ্যামপুর থানার ডিহিমণ্ডল ঘাট এলাকার বাসিন্দা। প্রায় বছর ৪৫ আগে যখন তাঁর স্বামী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখন প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে রূপনারায়ণ নদী পেরিয়ে দূর শহরে তমলুকে চিকিৎসা করতে এসেছিলেন। অ্যাপেন্ডিক্সের সফল অস্ত্রোপচারে সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন স্বামী মুরারি মোহন। নিত্যদিন যাতায়াতের জন্য বেশ কিছু চিকিৎসকের সান্নিধ্যে এসেছিলেন। আর তখন থেকেই গ্রামের মানুষের চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোনও বিপদে-আপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন গৌরীদেবী। উপকার পেয়ে মানুষ খুশি মনে সামান্য যা দিতেন, তাতেই তাঁর সংসার চলত। এভাবেই পার হয়ে যায় কয়েক দশক।
[আরও পডুন: হার্টের অসুখকে অস্ত্র করে সুজয়কৃষ্ণের জামিনের আরজি, পালটা কী বলল ইডি?]
প্রায় ১৫ বছর আগে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গিয়েছেন স্বামী মুরারি মোহন বেরা। তবুও জোটেনি সরকারি বার্ধক্য ভাতা কিংবা বিধবা ভাতা। উন্নয়ন পরিবর্তন অনেক হলেও নিজের সেই দীর্ঘ কর্মজীবনে আজও ছেদ পড়েনি গৌরীদেবীর। বর্তমানে ছেলে,মেয়ে, নাতি, নাতনিদের নিয়ে ভরা সংসার। তবু আজও তিনি রূপনারায়ণের উজান বেয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম ছেড়ে নিত্যদিন যাতায়াত করেন তমলুকে। সঙ্গে থাকেন চিকিৎসার জন্য আসা নদীর ওপারে শ্যামপুরের আশপাশ এলাকার প্রায় ১০-১২টি গ্রামের সাধারণ মানুষ। চিকিৎসক দেখানো হোক বা হাসপাতালে ভরতি, সবেতেই যেন গ্রামের মানুষের অগাধ ভরসা ৯১ বছরের বৃদ্ধা! তমলুকের চিকিৎসক মহলেও এক ডাকে তার নাম ‘হাওড়া জেলার মাসি’। এই নাম শুধুমাত্র তাঁর কাজের পরিচায়ক।
কারণ, ভৌগলিক অবস্থানগতভাবে হাওড়া জেলার শ্যামপুর থানার অন্তর্গত রূপনারায়ণ নদী তীরবর্তী এই গ্রামের মানুষগুলির আজও ভরসা এই তাম্রলিপ্ত শহর। চিকিৎসা পরিষেবার জন্য আজও তাই বহু মানুষ নদী পেরিয়ে তমলুক শহরে আসেন। আর চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোনও বিপদে-আপদে তাঁদেরই ভরসা এই বৃদ্ধা ‘মাসি’। তমলুকের স্টিমার ঘাটে রূপনারায়ণের পাড়ে নৌকায় চড়ে শ্যামপুর থেকে এসে নেমেছিলেন গৌরীদেবী। চিকিৎসা পরিষেবা নিতে সঙ্গে ছিলেন অনেকেই।
[আরও পডুন: আগস্টে তৃতীয় বৈঠক INDIA জোটের, এবার মুম্বইয়ে বসতে চলেছে আলোচনা সভা]
বয়সকে তোয়াক্কা না করে নিরলসভাবে এই কাজ করে চলা গৌরীদেবী জানান, প্রতিদিনই রূপনারায়ণ নদী পেরিয়ে তমলুক শহরে আসেন তিনি। সামান্য পয়সার বিনিময়ে ঝড়-জল-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই এভাবে তিনি মানুষকে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন বিগত প্রায় ৪৫ বছর ধরে। প্রথম দিকে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা পরিষেবায় তমলুক শহরে যাতায়াত শুরু হলেও জীবনের শেষ দিন অবধি তিনি এই কাজই করে যেতে চান। তাঁর কথায়, ‘‘পরিবারের সকলে বাধা দিলেও সংসারে কোনওভাবেই মন বসাতে পারি না। তাই প্রয়োজনে যে কেউ ডাকলেই ছুটে যাই তমলুকে।’’