সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সাত দিন পার। ঝাড়খণ্ডের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আগমনের রহস্যভেদ আজও করতে পারল না ঝাড়খণ্ড বন বিভাগ। আক্ষরিক অর্থেই এ যেন রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য!
ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ অনুমান করছে, এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটি পালামৌ টাইগার রিজার্ভ থেকে এসেছে। এই তত্ত্বে একেবারে সবুজ সংকেত তারা দিতে পারেনি। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত দলমা পাহাড়ে থাকা ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটির অবস্থান বুঝতে পালামৌ টাইগার রিজার্ভের ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞরা এলেও তারা ওই তথ্যে সিলমোহর দিতে পারেনি। ফলে তার আগমনের পথ অজানাই। সেই কারণেই ওই রয়্যালের স্বভাব, বৈশিষ্ট্য, গতিবিধি, পদচারণা সেভাবে ঠাহর করতে পারছে না ঝাড়খণ্ড-সহ বাংলা।
ছবি: অমিতলাল সিং দেও।[/caption]
যেভাবে জিনাতের ফেলে আসা পথে ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার হেঁটে যাচ্ছে তাতে সিমলিপাল তত্ত্ব উড়িয়ে দিচ্ছে না ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞরা। সেইসঙ্গে হাজারিবাগ, ছত্তিশগড় থেকে আসার সম্ভাবনাও রয়েছে। আসলে এই জঙ্গলগুলি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। দলমা বনাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে সিমলিপালেরও। তাহলে কি ওড়িশা থেকেই বাঘ ঢুকেছে? ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ এখনই এই তথ্য মানতে চাইছে না। ঝাড়খণ্ড বলছে, অতীতে ওই রাজ্যে যেসব এলাকায় বাঘ দেখা গিয়েছিল সেখানে বহুদিন ওই বন্যপ্রাণের কোন পদচারণা ছিল না। ঝাড়খণ্ড বনবিভাগের তথ্য বলছে, হাজারিবাগ অভয়ারণ্যে গত বছর জানুয়ারিতে যে বাঘের দেখা মিলেছিল তা চার দশকেরও বেশি সময় পর। পালামৌ টাইগার রিজার্ভে ২০২৩-র আগে বাঘ সেভাবে দেখা মিলতো না। একথা ব্যাঘ্র দর্শন করতে আসা পর্যটকদের নয়। ঝাড়খণ্ড বন বিভাগেরই। তাদের কথা, শুধু যে সিমলিপাল থেকেই ঝাড়খন্ডে বাঘ আসে তা কিন্তু নয়। অতীতে ছত্তিশগড় থেকেও ছোটনাগপুর মালভূমির ওই রাজ্যে একাধিকবার বাঘ ঢুকেছিল। সবে মিলিয়ে জিনাতের পুরুষসঙ্গীর আগমন নিয়ে রীতিমতো ধোঁয়াশায় ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ। তাদের সঙ্গে সমন্বয়সাধন করেও আগমন বুঝতে পারছে না অরণ্য ভবনও।
[caption id="attachment_1010974" align="aligncenter" width="900"]ছবি: অমিতলাল সিং দেও।[/caption]
এখানেই শেষ নয় ঝাড়খণ্ডের বনবিভাগ আবার বলছে, দলমা পাহাড়ে ওই রয়্যাল মঙ্গলবার সকালে ঢুকেছে এ তথ্য সম্পূর্ণ অংশে নিশ্চিত, তা বলা যাবে না। জঙ্গলের মধ্যে তার পদচিহ্ন বা কোন কিছু কিলিং দেখা গেলে তবেই তারা নিশ্চিত হবেন। তবে প্রাথমিক অনুমান থেকে ঝাড়খণ্ড বনবিভাগের ধারণা ওই বাঘ দলমায় রয়েছে। সেই কারণেই দলমা পাহাড়জুড়ে সতর্কতা জারি করেছে ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ। দলমার এলিফ্যান্ট প্রজেক্ট ডিভিশন জামশেদপুরের পশ্চিম সার্কেলের রেঞ্জার দীনেশ চন্দ্র বলেন, "আমাদের প্রাথমিক অনুমান ওড়িশার জিনাতের পথ ধরে যাওয়া রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটি দলমা বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যে রয়েছে। কিন্তু এই মর্মে আমরা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত নই। যতক্ষণ না তার পদচিহ্ন বা কোনরকম কিলিং আমরা চোখে দেখছি।" আর সেই কারণেই মঙ্গলবার দিনভর দলমার অভয়ারণ্যের কোর এলাকায় গিয়ে জিনাতের পুরুষসঙ্গীর পায়ের চিহ্ন হন্যে হয়ে খুঁজেছেন বনকর্মীরা।
বাঘের খোঁজে। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।
চলছে রাত জাগাও। সব মিলিয়ে দলমা পাহাড়ের গ্রামগুলিতে শুধু আতঙ্ক নয়। দলমা পাহাড়কে ঘিরে শহরাঞ্চল চান্ডিল, বড়াম, জামশেদপুরেও বাঘ ভীতি রয়েছে। নতুন করে বাঘ আতঙ্কে কাঁটা পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের বান্দোয়ানও।