অমিত সিং দেও, মানবাজার: কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের ঘটনার তদন্তে এসে বনবাংলোকেই অস্থায়ী শিবির বানিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই (CBI)। কলকাতা হাই কোর্টের তত্ত্বাবধানে পুরুলিয়া (Purulia) বনবিভাগের ঝালদা বনাঞ্চলের ফরেস্ট রেস্ট হাউসেই সাক্ষীদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরবর্তীকালে এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিরঞ্জন বৈষ্ণবের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনাতেও হাই কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। অবশেষে এই দুটি ঘটনার তদন্ত শেষে ৬৬৬ দিন পর পুরুলিয়ার ঝালদা (Jhalda)রেঞ্জের বনবাংলো খালি করল ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তবে তার ভাড়া বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা এখনও বাকি। তার একটি টাকাও হাতে পায়নি বনদপ্তর। পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও (DFO)কার্তিকায়েন এম বলেন, “জেলাশাসকের তরফে ঝালদা বনবাংলোটি বুকিং করা হয়েছিল। ভাড়ার টাকা চেয়ে আমরা জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছি।”
২০২২ সালের ১৩ মার্চ ঝালদা পুরসভার ২ নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু (Tapan Kandu) খুন হন। দুষ্কৃতীরা বাইকে করে এসে তাঁকে গুলিতে ঝাঁজরা করে দেয়। এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয় রাজনৈতিক উত্তেজনা। শাসক দল থেকে তৎকালীন ঝালদা থানার আইসির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেন নিহতের স্ত্রী কংগ্রেস কাউন্সিলর পূর্ণিমা কান্দু। সিবিআই তদন্তের দাবি চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta HC) আবেদন জানান। বিচারপতি রাজশেখর মান্থা এই ঘটনার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। ৪৫ দিনের মাথায় আদালতে তদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।
হাই কোর্টের নির্দেশের পরেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা পুরুলিয়া জেলাশাসকের মাধ্যমে ওই বছরের ৫ মার্চ পুরুলিয়া বন বিভাগের ঝালদা রেঞ্জ কার্যালয়ের ভিতরে থাকা বনবাংলো ‘বুক’ করা হয়। খুনের মামলার তদন্তে ৬ এপ্রিল রাতে সিবিআই তপন কান্দু খুনের মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে সিবিআই। ওইদিনই তপন কান্দু খুনের ঘটনায় অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী নিরঞ্জন বৈষ্ণবের বাড়ি থেকে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনাতেও পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত শুরু হয়। অর্থাৎ কয়েকদিনের ব্যবধানে একটি খুন ও আরেকটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলার তদন্ত শুরু করে ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
[আরও পড়ুন: বিয়ের ৫ মাস পেরনোর আগেই বধূর রহস্যমৃত্যুর, দাবিমতো পণ না মেলায় খুন?]
তপন খুনের ঘটনায় জেলা পুলিশের সিটের হাতে গ্রেপ্তার ঝাড়খণ্ডের বোকারোর বাসিন্দা কলেবর সিংকে নিজেদের হেফাজতে নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিক। তার পরে এই ঘটনায় একে একে মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। বাজেয়াপ্ত হয় দুটি মোটর বাইক, খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত পিস্তল ও গুলি। দুটি মামলার তদন্ত চলাকালীন সিবিআই-র তৎকালীন ডিআইজি অখিলেশ সিং-সহ একাধিক আইপিএস অফিসার এই শিবিরে আসেন। ডজন খানেক আধিকারিক ওই বাংলোতে থাকতে শুরু করেন। পাশাপশি ধৃতদেরও সেখানে রাখা এবং বিভিন্ন নথিপত্র রাখার জন্য কার্যত লকআপ থেকে মালখানাও হয়ে যায়। চার কামরার ডবল বেড রুম ছাড়াও ওই বন বাংলোতে রান্নাঘর ও একটি হল ঘর রয়েছে। সেখানেই জিজ্ঞাসা করার জন্য ডাক পড়ত প্রত্যক্ষদর্শী-সহ এই ঘটনার তদন্তে বিভিন্ন জনের।
[আরও পড়ুন: কুণালের গলায় অনুব্রতর সুর! রেড রোডের ধরনা থেকে বিজেপিকে ‘চড়াম চড়াম’ হুঁশিয়ারি]
ফলে গেস্ট হাউসের পাশাপশি রেঞ্জ কার্যালয়ে ঢোকার মূল গেটেও বন্ধ করে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পাহারা দিত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। নিরঞ্জন বৈষ্ণবের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত সিবিআই পুরুলিয়া আদালতে অভিযোগের বাস্তবতা নেই বলে রিপোর্ট জমা করে। অন্যদিকে তপন কান্দু খুনের ঘটনায় দুই ধাপে ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা করে। শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, আদালতের নির্দেশে এই মামলার নথি ভর্তি একটি টিনের ট্রাঙ্ক আদালতে জমা দেওয়া হয়। পাশাপশি জমা দেওয়া হয় গুলি, পিস্তল ও দুটি বাইক।