অংশুপ্রতীম পাল, খড়গপুর: দীর্ঘ দেড়ঘন্টার টানাপোড়েনের পর শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হল খড়গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। জেলাশাসক আয়েষা রানি জানিয়ে দিলেন, খড়গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। যদিও এই মাঝের দেড়ঘণ্টায় ছিল পরতে পরতে নাটক ও টানটান উত্তেজনা।
বুধবার বিকালে খড়গপুর শহরের ওল্ড সেটেলমেন্ট এলাকার ২০ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিশাল মিছিল নিয়ে প্রদীপ সরকার খড়গপুর মহকুমা প্রশাসনিক ভবনে পৌঁছন। দোতলায় সোজা চলে যান মহকুমা শাসক দিলীপ মিশ্রের কাছে। একপাতার একটি পদত্যাগপত্র তুলে দেন মহকুমা শাসকের হাতে। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে বেরিয়ে আসার পর প্রথমে তিনি জানান পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু মহকুমা শাসক তাঁকে জানিয়েছেন, পুর আইন অনুযায়ী এভাবে পদত্যাগপত্র তিনি গ্ৰহণ করতে পারেন না।
[আরও পড়ুন: ডিসেম্বর ডেডলাইনের শেষদিনেও হল না ধামাকা, কাঁথির সভায় ঢোক গিললেন শুভেন্দু]
নিয়ম অনুযায়ী, পুরপ্রধানকে ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পুরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলরস সভা ডাকতে হবে। সেখানে তাঁর পদত্যাগপত্র গহীত হতে হবে। তারপর সেই পদত্যাগপত্র মহকুমা শাসকের কাছে গ্ৰহণযোগ্য হবে। আর যতদিন এই প্রক্রিয়া শেষ না হচ্ছে ততদিন তিনি পুরপ্রধান হিসাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। সেই মোতাবেক পুরপ্রধান প্রদীপ জানিয়ে দেন আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার পুরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলরস সভা ডাকবেন। পুরপ্রধানের এই বক্তব্যের পরেই কার্যত শোরগোল পড়ে যায়। যোগাযোগ করা হয় মহকুমা শাসক দিলীপ মিশ্রের সঙ্গে। তিনি জানান, পুরপ্রধান পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু সেটি নিয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কোনও এক্তিয়ার তাঁর নেই। পদত্যাগপত্রের কপিটি জেলাশাসকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে গোটা শহরে নতুন করে জল্পনা মাথাচাড়া দেয়।
এই ঘটনার ঠিক এক ঘন্টা পরে পুনরায় পদত্যাগী পুরপ্রধানকে ডেকে পাঠানো হয় মহকুমা শাসকের কাছে। তিনি পৌঁছন। বেরিয়ে আসার পর তিনি জানান দলের সিদ্ধান্ত মেনেই তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। আর ধরে নিচ্ছেন পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। যদিও তারপর থেকেই প্রশাসনিক কর্তারা মুখে কুলুপ আঁটেন। এই ঘটনার ঠিক আধ ঘন্টা পরে ফের পদত্যাগী পুরপ্রধানকে মহকুমা শাসকের ঘরে ঢুকতে দেখা যায়। এবারে বেরিয়ে এসে তিনি বললেন ” মহকুমা শাসক আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন আমার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। ফলে বৃহস্পতিবার থেকে পুরপ্রধান হিসাবে পুর কার্যালয়ে যাওয়ার আর কোনও বিষয় থাকছে না।”
তারপরেই জেলাশাসক আয়েষা রানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “খড়গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে।” এদিকে সন্ধেয় তৃতীয়বার পদত্যাগী পুরপ্রধান বেরনোর পরেই মহকুমা শাসকের কাছে পৌঁছন প্রদীপ বিরোধী বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর ও চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল সদস্য। তার মধ্যে সম্ভাব্য পুরপ্রধান পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীর ঘোষ ছিলেন। তবে এদিন প্রদীপের ডাকা মিছিলে বহু দলীয় কর্মী শামিল হয়েছিলেন।