শেখর চন্দ্র, আসানসোল: বহু টানাপোড়েন শেষে চার বছর পর কয়লা পাচার কাণ্ডের চার্জ গঠন হল। মঙ্গলবার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে ৪৯ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। এর আগে সিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসেবে মোট ৫০ জনের নাম ছিল। কিন্তু এই মামলায় অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র পলাতক। সেই কারণে আজ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে গঠিত হল চার্জ। এদিন বিকাশ মিশ্র-সহ তিনজনকে আদালতে ভারচুয়ালি হাজির করানো হয়।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছিল, গত শুনানিতে মামলাটিকে দুভাগে ভাগ করা হয়। একটিতে ২৩ জনের নাম ছিল। অন্যটিতে ২৭ জনের নাম ছিল। প্রথম ২৩ জনের মধ্যে রয়েছেন অনুপ মাজি ওরফে লালা, রত্নেশ বর্মা এবং বিকাশ মিশ্র। এই তিনজনের বিচারপ্রক্রিয়া আলাদাভাবে হবে। কারণ, কয়লা পাচার মামলায় যত অভিযোগ উঠেছে, তার সব কটিতেই ওই তিনজনের যোগ রয়েছে। বাকি ২৭ জনের মধ্যে কেউ কোলিয়ারির ম্যানেজার, কেউ নিরাপত্তারক্ষী, কেউ আবার স্থানীয় দোকানদার। ১০টি কোম্পানি ১২ জন ইসিএল আধিকারিক, ২০ জন লালার ব্যক্তিগত সহযোগী, ৪ জন কোলমাফিয়া ও তিনজন বিশেষ অভিযুক্ত অনুপ মাজি, বিকাশ মিশ্র ও রত্নেশ বর্মা। এদের বিরুদ্ধে চারটি পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন ধারায় চার্জ গঠন হয়।
অনুপ মাজির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সময়কালে ইসিএলের লিজ হোল্ড এলাকা থেকে প্রায় ৩১ লক্ষ মেট্রিক টন কয়লা চুরি ও পাচার করা হয়েছে। যার ফলে সরকারের প্রায় ১৩৪০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। নিজের লাভের জন্য নকল কাগজ তৈরি করে সেগুলিকে আসল বলে ব্যবহার করেছে। এছাড়াও ইসিএলের বেশ কয়েকজন আধিকারিককে ঘুষ দিয়ে নিজের কাজ হাসিল করেছেন বলে অভিযোগ। প্রত্যেকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে গোটা কাজটা সংগঠিত করেছেন অনুপ মাজি ওরফে লালা। বিচারক তাঁকে প্রশ্ন করেন, 'আপনি দোষী না নির্দোষ?', লালা উত্তরে জানান, তিনি নির্দোষ।
২০২০ সালে কয়লা পাচার মামলার তদন্ত শুরু করে সিবিআই। রাজ্যে রেলের বিভিন্ন সাইডিং এলাকা থেকে কয়লা চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই প্রথমে আয়কর দপ্তর, তার পরে সিবিআই কয়লা কাণ্ডের তদন্তে নামে। এর আগে একাধিকবার চার্জগঠনের দিন স্থির হলেও তা পিছিয়ে যায় বিভিন্ন কারণে। এই মামলায় সিবিআইয়ের এই মামলায় ৩৯৬ জন সাক্ষী রয়েছেন। মামলায় অভিযুক্ত ৫০ জন। প্রত্যেকের জন্য রয়েছে ২৫ হাজার পাতার নথি। রয়েছে ১১৪৯ পাতার তথ্যপ্রমাণ। এই মামলায় সিবিআই মোট তিনটি চার্জশিট জমা দিয়েছে। অবশেষে চার্জফ্রেম গঠন হল মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর।