শেখর চন্দ্র, আসানসোল: ‘পিপ্পা’ সিনেমা রিলিজের পর থেকেই সংবাদের শিরোনামে এ আর রহমান। ছবির গুণগত মানের থেকেও তুলনামূলক আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ (Karar Oi Louho Kopat)-এর রিমেক ভার্সন গান। আর রহমানের নজরুলগীতি বিকৃতি নিয়েই নিন্দার ঝড় সর্বত্র। তীব্র নিন্দা কবিতীর্থ চুরুলিয়াতেও।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’কে যেভাবে নিজের আঙ্গিকে পরিবেশন করেছেন রহমান, তা শুনে রীতিমতো ক্ষুব্ধ চুরুলিয়ার মানুষ। চলছে চরম সমালোচনা। চুরুলিয়ার কাজী পরিবারের এবং নজরুল অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। গানটি প্রত্যাহার না করলে আইনি পথে হাঁটার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে কাজী পরিবার। তাঁদের আক্ষেপ, “আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে লেখা যে গান শুনলে আজও গায়ে কাঁটা দেয় আপামর বাঙালির, যে গান স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলো চোখের সামনে তরতাজা করে তোলে, সেই গানের সুরটাই বদলে দিয়েছেন এ আর রহমান।”
প্রসঙ্গত, কবিতীর্থ চুরুলিয়ায় গেলে দেখা মিলবে কবির ব্যবহৃত গ্রামোফোন। তানপুরা এবং বিভিন্ন গানের পাণ্ডুলিপি। যা যত্ন করে রাখা রয়েছে চুরুলিয়ায়। কবি এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বহু স্মৃতি রয়েছে গ্রামে। কবির স্ত্রী প্রমিলা কাজী এই গ্রামেই মারা যান। কাজী নজরুল ইসলাম ও প্রমীলা দেবীর সমাধিস্থলও এই চুরুলিয়াতে। রয়েছে নজরুল অ্যাকাডেমি, নজরুল গবেষণাগার।
[আরও পড়ুন: ‘মামলা হওয়া উচিত!’, রহমানের নজরুলগীতি রিমেক নিয়ে ক্ষুব্ধ পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী]
কবির ভ্রাতুষ্পুত্র ও চুরুলিয়া নজরুল অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠাতা কাজী রেজাউল করিম জানিয়েছেন, “এই ঘটনা খুব দুঃখজনক। আগুন নিয়ে খেলা করছেন রহমান সাহেব” বলেও দাবি করেছেন তিনি। পাশাপাশি নজরুল অ্যাকাডেমির সদস্য ও কবির নাতনি সোনালী কাজী প্রশ্ন তোলেন, “এই কাজটি করার আগে কারও সঙ্গে কথা বলেছিলেন উনি? অতীতে যখন মহম্মদ রফি ও অনুপ জালোটা কাজী নজরুল ইসলামের গান বা নজরুল গীতি গিয়েছিলেন তখন কল্যাণী কাজীর তত্ত্বাবধানে গেয়েছিলেন। মূল সুর পরিবর্তন হয়নি। তাই কোনও বিতর্ক হয়নি। আপামার বাঙালি সেই গানকে মেনে নিয়েছেন এবং জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। কিন্তু রহমান সাহেব যেটা করেছেন তা অনৈতিক ও বেআইনি কাজ করেছেন। বহুদিন আগের একটা গান কোন অধিকারে তিনি বদলে দিতে পারেন, এটাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।”
এই গান শুনে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন, সারা বিশ্বে এই গান কারাগারের গান হিসেবে চিহ্নিত হয়। সমগ্র বাঙালি জাতিকে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে আহ্বান জানান কাজি পরিবার। উল্লেখ্য, কাজী নজরুল ইসলাম গ্রামোফোন কোম্পানিতে পেশাদারী সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেছিলেন। তার স্বদেশ প্রেমের, শোষিত মানুষের মুক্তি সংগ্রামের, মানবিক প্রেমের, ভক্তিমূলক, পল্লীগীতি হাসির গান বাঙালিকে অভিভূত করে তুলেছিল। আকাশবাণী চলচ্চিত্র নাট্যমঞ্চের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। গীতিকার ও সুরকার হিসেবে সঙ্গীত জগতের সমৃদ্ধ করেছেন নজরুল ইসলাম। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে রাগের মিশ্রিত রূপ প্রয়োগ করেছেন। বাংলা গানে সাধনার মাধ্যমে ১৭টির মতো রাগ তিনি সৃষ্টি করেছিলেন। নজরুল রচিত গানের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। সঙ্গীত জগতে যা বিশ্ব রেকর্ড! সেই কিংবদন্তী কবির কাজ নিয়ে এমন ছেলেখেলা মানতে পারছে না চুরুলিয়ার মানুষজন।