কিংশুক প্রামাণিক, ভ্যাটিকান সিটি: ‘আগুনের পরশমণি’ গানটি মাদার টেরিজার খুব প্রিয় ছিল৷ ‘টিম বেঙ্গল’কে নিয়ে সেই গান গাইতে গাইতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেঁটে পৌঁছলেন ভ্যাটিকানে৷ ঠিক ব্যাসিলিকার সামনে এসে থমকে দাঁড়াল এসকর্ট করে আসা পোপের রাষ্ট্রের কম্যান্ডোরা৷ সঙ্গে পোস্টার বুকে আঁটা আমরা সকলে৷ এই পর্যন্ত আসার পর তাঁরা ভাবছিলেন, মাদার টেরিজার কর্মভূমি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে কোন দিকে নিয়ে যাবেন৷ পিছনে সেণ্ট পিটার্স স্কোয়ারে তখন লক্ষ লক্ষ মানুষ৷ সামনের সোজা পথটুকু পেরলেই মূল চাতাল৷ ওখানেই পোপের আসন৷ ডানদিকে বসবেন ফাদাররা৷ বাঁদিকে বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ৷ আরও পিছন দিকে অন্য অতিথিরা৷
ওখানেই মিনিট চারেক অপেক্ষা৷ হঠাৎই দেখা গেল হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছেন মিশনারিজ অফ চ্যারিটির প্রধান সিস্টার প্রেমা৷ কোনও কথা না বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঁ হাতটা চেপে ধরলেন তিনি৷ তারপর একেবারে টানতে টানতে সোজা ব্যাসিলিকার সামনে৷ বসালেন একেবারে নিজের পাশের চেয়ারে৷ অত বড় সম্মান ও আন্তরিকতা পেয়ে চোখ চিক চিক করে উঠছিল মমতার৷ ভ্যাটিকান সিটির এই অনুষ্ঠানে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল-সহ অনেকেই এসেছেন৷ কিন্তু সবার নজর একজনের দিকে৷ যিনি মাদার টেরিজার শহর কলকাতার প্রতিনিধি৷
পুরনো স্মৃতি উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী এরপর বলেন, “আমি তো মাদারকে চিনতাম, মাদারও আমায় চিনতেন৷ কলকাতায় দাঙ্গার সময় মাদারের সঙ্গে একদিন পাঁচ মিনিটের জন্য দেখা হয়েছিল৷ শিয়ালদহের লরেটো চার্চে রিলিফ নিয়ে গিয়েছিলাম৷ দেখি উনিও গিয়েছেন৷ আমি বললাম, আপনি কেন পথে৷ উনি বললেন, আপনি কেন পথে৷ আমি বললাম, সাধারণ মানুষ বিপদে পড়েছে৷ ওদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব৷ মাদার বলেছিলেন, আমাদের সবার দায়িত্ব৷ সত্যি মাদারকে নিয়ে বইটি পড়তে পড়তে আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল৷”
ছিলেন ঊষা উত্থুপও৷ কপালে ‘ক’ লেখা তাঁর সেই বিখ্যাত টিপ পরে তিনিও এদিন গান গাইলেন ভ্যাটিকানের পথে৷ তাঁর গান শুনতেও একসময় ভিড় জমে যায় রোমের রাস্তায়৷ মাদার টেরিজার কর্মকাণ্ড কলকাতায়, বাংলায়৷ ফলে এই দিনটি যে তাঁর কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, তা আগেই জানিয়ে রোমে আসেন মমতা৷ গতকাল রাতেই ঠিক করেন বাংলার প্রতিনিধিদলকে আলাদা করে চিনিয়ে দেবেন ভ্যাটিকানে আসা মানুষের সামনে৷ এখানে মমতার সঙ্গী মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, দুই সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেরেক ও ব্রায়েন৷ তাঁদের সঙ্গে সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের নিয়েই মমতা তৈরি করেন ‘টিম বেঙ্গল’৷ শনিবার রাতে রীতিমতো গানের রিহার্সাল হয় হোটেলের লবিতে৷
তবে একটি কথা বলতেই হবে, মাদারের ঈশ্বরত্ব প্রাপ্তিতে বাংলাকে বিশ্ব দরবারে ভাল করেই প্রতিষ্ঠা করে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আবার বোঝালেন, অন্যদের চেয়ে তিনি কোথায় আলাদা৷
