shono
Advertisement

সাঁওতালি ভাষায় জনসংযোগ, আদিবাসীদের মন জয় পুরুলিয়ার জেলাশাসকের

সরকারি ভাতা আচমকা বন্ধ, অভিযোগ পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলেন জেলাশাসক। The post সাঁওতালি ভাষায় জনসংযোগ, আদিবাসীদের মন জয় পুরুলিয়ার জেলাশাসকের appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:18 PM Nov 02, 2019Updated: 01:56 PM Nov 03, 2019

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সরকারি প্রকল্পের সুবিধা যেন ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ তেমনই। প্রতিটি জেলা সফরে গিয়ে যেখানেই জনসংযোগের সুযোগ থাকে, সেখান থেকে তিনি বারবারই এই নির্দেশ দিয়ে থাকেন। তো সেই নির্দেশ মেনে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজটি গোড়া থেকে করে আসছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। সেই প্রশাসনিক কাজে আদিবাসীদের সঙ্গে  সহজে জনসংযোগের জন্য তিনি শিখে নিয়েছেন সাঁওতালি ভাষাও। শনিবার সাঁতুড়িতে ‘গো টু ভিলেজ’ কর্মসূচিতে গিয়ে আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে গিয়ে সাঁওতালিতে জনসংযোগ করে বুঝিয়ে দিলেন, কাজে সত্যিই কতটা সক্রিয় তিনি।   

Advertisement

সপ্তাহভর কাজের ব্যস্ততা। কিন্তু ছুটির দিনেও সেভাবে ছুটি কাটাননি জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। রীতিমতো শিক্ষকের কাছে সাঁওতালি ভাষার পাঠ নিয়েছেন তিনি। অলচিকি হরফ খাতায়–কলমে লিখে একেবারে ছাত্রের ভূমিকায় নেমেছেন। এই ভাষা শিখতে তাঁর ‘শিক্ষক’–এর ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের অধীনে থাকা সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের অযোধ্যা পাহাড় প্রকল্পের এক
কর্মী।

[আরও পড়ুন: দুষ্কৃতীদের বোমার আঘাতে মৃত্যু তৃণমূল কর্মীর, চাঞ্চল্য রামপুরহাটে]

২০১২–১৩ সালে দার্জিলিংয়ের তৎকালীন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন ওই জেলায় তাঁর কাজের সুবিধায় নেপালি ভাষা শেখেন। জঙ্গলমহল পুরুলিয়ায় আদিবাসী মন পেতে রাহুল মজুমদার কার্যত সেই পথে হেঁটে সাঁওতালি ভাষা শেখা শুরু করেন। রবিবার তাঁর বাংলোয় গিয়ে ভাষা শেখানোর কাজ করেন সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের ওই কর্মী তিমির হাঁসদা।

এই জেলার কুড়িটি ব্লকের মধ্যে বেশ কয়েকটি আদিবাসী অধ্যুষিত। বান্দোয়ান, মানবাজার এক, মানবাজার দুই, পুঞ্চা, বাঘমুন্ডি, বলরামপুর, আড়শা ও সাঁতুড়িতে আদিবাসী মানুষজনের সংখ্যা বেশি। তাই এসব এলাকায় গ্রামে–গ্রামে আদিবাসী মহল্লায় গিয়ে তাঁদের ভাষায় কথা বলে একেবারে হেঁশেল পর্যন্ত পৌঁছতে চেয়েছেন তিনি। যাতে বনমহলের এই জেলার আদিবাসী মানুষজন বুঝতে পারেন, জেলাশাসক তাঁদেরই লোক। এনিয়ে রাহুল মজুমদার বলছেন, “জেলার বেশ কয়েকটি ব্লক আদিবাসী অধ্যুষিত। ‘গো টু ভিলেজ’ কর্মসূচিতে যখন আমরা গ্রামে–গ্রামে গিয়ে তাঁদের সমস্যার কথা শুনতে চাই, তখন ভাষার একটা সমস্যা হয়। একাধিক ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রামের আদিবাসী মানুষজন সাঁওতালি ভাষাতেই কথা বলেন। ফলে সবটা পরিষ্কার বোঝা যায় না। তাছাড়া আমাদের কথাও তারা সেভাবে বুঝতে পারেন না। ফলে একটা ফাঁক থেকে যায়। যার প্রভাব পড়ে যায় উন্নয়নের কাজে। তাই উন্নয়নের কাজে যাতে কোন সমস্যা না হয় সেই
জন্যই সাঁওতালি ভাষা শেখা।”

আদিবাসী উন্নয়নে স্বয়ং জেলাশাসক সাঁওতালি ভাষা শেখায় তাঁর এই কাজকে তারিফ করছেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যান বিভাগের প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু। তাঁর কথায়, “আদিবাসী উন্নয়নে জেলাশাসকের সাঁওতালি ভাষা শেখার বিষয়টি সত্যিই দারুণ। যারা জঙ্গলমহলের জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তাঁদেরও এই ভাষা শেখা উচিত। তবেই তো একে–অপরের কথা বুঝে আরও ভালভাবে উন্নয়নের কাজ করা যাবে।”

[আরও পড়ুন: সন্দেশখালিতে গুলিবিদ্ধ ভিলেজ পুলিশের মৃত্যু, থমথমে এলাকা]

শনিবার ‘গো টু ভিলেজ’ কর্মসূচিতে আদিবাসী অধ্যুষিত খাড়বাড় গ্রামে জনসংযোগে গিয়ে সাঁওতালি ভাষাতেই কথা বলেছেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। তিনি সাঁওতালি ভাষায় সরকারি প্রকল্পগুলির সুযোগ–সুবিধা তুলে ধরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মন জয় করে নেন। তাঁরাও নিজেদের ভাষাতেই জেলাশাসককে নানান সমস্যার কথা জানান। ওই এলাকার বাসিন্দা ব্রজেন মুর্মু ও সতীশ হেমব্রম বলেন, “উনি সাঁওতালি ভাষায় আমাদের সঙ্গে কথা বলায় আমরা এদিন জেলাশাসককে সমস্ত সমস্যার কথা খোলামেলা বলতে পারি। এতদিন যা হচ্ছিল না। একটা ভাষাগত সমস্যা থাকার কারনে দূরত্ব তৈরি হয়ে যাচ্ছিল।”

এদিন জেলাশাসক  সাঁতুড়িতে গিয়ে অভিযোগ পান যে আচমকাই বয়স্ক ভাতা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তা শুনে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই তদন্তের নির্দেশ দেন বিডিওকে। এছাড়া রেশনে গণবণ্টন নিয়েও অভিযোগ তাঁর কানে আসায় সেই সংক্রান্ত সমাধানেরও দ্রুত ব্যবস্থা করেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার।

ছবি: অমিত সিং দেও।

The post সাঁওতালি ভাষায় জনসংযোগ, আদিবাসীদের মন জয় পুরুলিয়ার জেলাশাসকের appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement