দেবব্রত দাস, খাতড়া: রোগ সারাতে বদ্যির বিকল্প নেই। কিন্তু যিনি অন্যকে সুস্থ করে তোলার মহান ব্রত ধারণ করেছেন, তিনিই যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে রোগী কোথায় যান? তখনও রোগী চিকিৎসকের কাছেই পাবেন পরিষেবা, বছরের অন্য সময়ের মতো। বাঁকুড়ার খাতড়া ব্লকের অসুস্থ চিকিৎসক যেন সেটাই বুঝিয়ে দিলেন নিজের কাজ দিয়ে। এক হাতে স্যালাইনের চ্যানেল, অন্য হাতে দিব্যি রোগী দেখে প্রেসক্রিপশন লিখে দিচ্ছেন চিকিৎসক সুমন সন্নিগ্রহী। গড়েছেন কর্তব্যপরায়ণতার নজির।
বাঁকুড়ার খাতড়া ব্লকের সিমলা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক সুমনবাবু। খাতড়া মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সিমলা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আউটডোরে ডিউটি ছিল চিকিৎসক সুমন সন্নিগ্রহীর। সকালে কাজে যাওয়ার সময়ে আচমকা তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডিহাইড্রেশন জনিত সমস্যা হচ্ছে, বুঝতে পেরে সুমনবাবুকে স্যালাইন দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আউটডোরে শতাধিক রোগী চিকিৎসার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। এত রোগীকে একসঙ্গে দেখে সুমনবাবু নিজে আর বিশ্রাম নেননি।
[আরও পড়ুন: স্ত্রীর পরকীয়ায় বাধা দেওয়ার ‘শাস্তি’! যুবককে হাঁসুয়ার কোপ শ্বশুর ও শ্যালকের]
বাঁ হাতে স্যালাইন নিয়েই আউটডোরে চিকিৎসকের চেয়ারে বসে একের পর এক রোগী দেখতে শুরু করে দেন। প্রায় ছ’ঘন্টা ধরে দু’শোর বেশি রোগীকে দেখেন তিনি। একদিকে, তাঁর শরীরে স্যালাইন চলছে, অন্যদিকে, তিনি রোগীদের বাতলে দিচ্ছেন সুস্থ থাকার রাস্তা। ডান হাতে নাগাড়ে লিখে চলেছেন প্রেসক্রিপশন। তাঁকে এই ভূমিকায় দেখে খুশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী থেকে স্বাস্থ্যকর্মী – সকলেই। লকডাউনের আবহে নিজের অসুস্থতাকে দূরে ঠেলে সুমনবাবু পেশার প্রতি যে দায়বদ্ধতা দেখালেন, তাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরাও।
[আরও পড়ুন: বালাই নেই সামাজিক দূরত্বের, হাসপাতালের আউটডোরেই রোগীর ভিড় বাড়াচ্ছে উদ্বেগ]
এ ব্যাপারে চিকিৎসক সুমনবাবু বলেন, “গত দু’দিন ধরে নাইট ডিউটি করেছিলাম। তারপর শনিবার আউটডোরে ডিউটি পড়েছিল। করোনা সংক্রমণের জেরে এখন আমাদের মাস্ক পরেই কাজ করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে গত দু’দিনের আবহাওয়া একটু উষ্ণ ছিল। শনিবার আউটডোরে ডিউটি করতে আসার পথে সমস্যায় পড়ি। শারীরিক অসুবিধা বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে স্যালাইন নিই। কিন্তু আউটডোরে এত রোগী লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন
দেখে ওই অবস্থায় আমি ডিউটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দু’শোর বেশি রোগীর চিকিৎসা করেছি”। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করাতে আসা অনিমা মণ্ডল, রাখি মণ্ডলরা বলছেন, “ডাক্তারবাবু এক হাতে স্যালাইন নিয়েও আমাদের ডেকে রোগের কথা শুনে চিকিৎসা করেছেন। ডাক্তারবাবুর এমন কাজে আমরা অভিভূত।” সিমলার BMOH তথা খাতড়া মহকুমা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার তাপসকুমার মণ্ডলের কথায়, “শনিবার সুমনবাবুর আউটডোরে ডিউটি পড়েছিল। তার আগে সুমনাবাবু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু স্যালাইন হাতে নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করেছেন। উনি অত্যন্ত কর্তব্যপরায়ণ। তাই অসুস্থ হয়েও চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছেন। ওনার এই কাজে আমরাও গর্বিত।”
ছবি: পরেশ মাইতি।
The post নিজে অসুস্থ, তবু কর্তব্যের টানে বাঁ হাতে স্যালাইন নিয়েই রোগী দেখতে ব্যস্ত চিকিৎসক! appeared first on Sangbad Pratidin.