অভিরূপ দাস: দুয়ারে নির্বাচন। শিয়রে ‘দ্বিতীয় ঢেউ’। করোনা আবহে ভোট নিয়ে চিকিৎসকদের কপালে ভাঁজ। রাজনৈতিক নেতাদের সচেতনতা বাড়াতে যৌথভাবে আবেদন করলেন পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) চিকিৎসকদের সাত সংগঠন ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস’। রাজ্যের চিকিৎসকদের আবেদন, দেশের পাঁচ রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। গত দু’সপ্তাহ ধরে পশ্চিমবঙ্গেও বাড়ছে সংক্রমণ। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক প্রচারে কোভিড বিধি মানতেই হবে।
মাঝে কয়েকদিন দু’শোর নীচে নামলেও ফের উর্ধ্বমুখী রাজ্যের কোভিড গ্রাফ। গত ২৬ আর ২৭ ফেব্রুয়ারি মিলে রাজ্যে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন ৪২৬ জন। নির্বাচনের পরে আক্রান্তের সংখ্যা লাগামছাড়া হওয়ার আশঙ্কা করছেন রাজ্যের চিকিৎসকদের সাত সংগঠন। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের কাছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরসের যৌথ আবেদন, প্রচার হোক। কিন্তু মানুষের জীবনকে বাজি রেখে নয়।
[আরও পড়ুন: নৃশংস! কুকুর শাবকদের গায়ে গরম পিচ ঢেলে ‘খুন’, নিষ্ঠুরতায় স্তব্ধ দুর্গাপুরবাসী]
পুজোর বাজারের ভিড়ের পর নভেম্বরে লাগামছাড়া হয়েছিল সংক্রমণ। নিয়ম না মানলে প্রাক নির্বাচন প্রচারের ভিড় সেই দিন ফিরিয়ে আনবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তার জন্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে কিছু নিয়ম। তার মধ্যে অন্যতম মিছিলে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা। কোভিড প্রোটোকল প্রণয়নকারী টিমের অন্যতম সদস্য ক্লিনিকাল ফার্মোকোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. শান্তুনু ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, রাজনৈতিক মিছিল গুলোয় প্রচুর মানুষের জমায়েত হচ্ছে। তার মধ্যে উপসর্গহীন করোনা রোগীও রয়েছেন। ফলে উপসর্গহীনদের থেকে সংক্রমণ বাড়ছে। উপসর্গ না থাকায় কনট্যাক্ট ট্রেসিং করতে অসুবিধা হচ্ছে।
চিকিৎসকদের আবেদন, মিছিল লম্বা হোক কিন্তু এক জনের সঙ্গে অন্যজনের দুরত্ব রাখতে হবে তিন ফুট। শুধু তাই নয়, বন্ধঘরে কোনও কর্মী সম্মেলন না করার আবেদন জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. কৌশিক লাহিড়ীর কথায়, লালারসের মাধ্যমেই ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা সর্বাধিক। সাধারণত আলাপচারিতা ১০ ডেসিবেল রেঞ্জের মধ্যে থাকে। কিন্তু বন্ধঘরে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য ৭০ ডেসিবেলে পৌঁছে যায়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের ভেতরের পরিবেশে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা মারাত্মক। খোলামাঠে উচ্চঃস্বরে কথা বললেও করোনা ছড়ানোর সংম্ভাবনা কম।
[আরও পড়ুন: ‘তৃণমূলের সরকার গড়ার’ মন্তব্য নিছকই ‘স্লিপ অফ টাং’, সাফাই বিজেপি নেতা সুনীল মণ্ডলের]
রাজনৈতিক মিটিং মিছিলে পাড়ায় পাড়ায় সভা করে দলগুলি। একই মাইকে দশজন লোক কথা বলেন। তা থেকেও সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। ডা. ত্রিপাঠি জানিয়েছেন, সারফেস কনট্যাক্ট থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছেই। প্রয়োজনে প্রত্যেককে আলাদা আলাদা মাইক্রোফোন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ১০ কোটি রাজ্যবাসীর মধ্যে এখনও টিকা নিয়েছেন ১০ লক্ষের কম মানুষ। টিকাকরণ নিয়ে দোনামোনা রয়েছে আমজনতার মধ্যেও। কেউ পার্শ্ব- প্রতিক্রিয়ার ভয় পাচ্ছেন। কেউ গা ছাড়া মনোভাব নিয়ে বলছেন, “টিকা নিলেও যখন করোনা হবে। নিয়ে আর কি লাভ?” এমন অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলিকেই দায়িত্ব তুলে নিতে বলছেন চিকিৎসকরা। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্টের কথায়, “অন্যান্য প্রতিশ্রুতির মতো করোনা সংক্রান্ত সচেতনতাও রাজনৈতিক দলগুলিকে কর্মসূচিতে আনতে হবে। প্রয়োজনে নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে যেনো প্রত্যেকটি মানুষ টিকা নেন।” তবে বাড়ি বাড়ি প্রচারে অনেক দলীয় কর্মী নয়। দু’তিন জন নিয়েই প্রচারে যেতে বলছেন চিকিৎসক।