জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: ভাঙড়, তেহট্টের পর এবার হাবড়া। এসআইআর শুরু হতেই কোথাও প্রতিবেশীকে বাবা সাজিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলার অভিযোগ সামনে এসেছে, কোথাও মৃত বলে জীবিত ভোটারের নাম বাদ চলে গিয়েছে। এসআইআর চালু হতেই দীর্ঘদিন আগে ছেড়ে যাওয়া পরিবারের সদস্য বাড়ি ফিরে এসেছেন, এই ঘটনাও নতুন নয়। এর আগে ভাঙড় ও তেহট্টে প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় পর বাড়িতে ফিরে এসেছেন একসময় নিখোঁজ হয়ে যাওয়া সদস্যরা। এবার সেই ঘটনা ঘটল উত্তর চব্বিশ পরগনার হাবড়ায়।
এসআইআর চলাকালীনই হাবড়ার এক বৃদ্ধ দম্পতি ফিরে পেলেন ২৬ বছর আগে বেপাত্তা হয়ে যাওয়া একমাত্র ছেলেকে। বৃদ্ধ দম্পতি প্রশান্ত দত্ত ও সান্ত্বনা দত্তের একমাত্র ছেলে তরুণ একসময় ধান কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। ব্যবসায় লোকসান এবং বেশ কিছু লোকের কাছে দেনা হয়ে যাওয়ায় তা শোধ করতে না পেরে অপমানের ভয়ে প্রায় ২৬ বছর আগে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তারপর থেকে আর তাঁর খোঁজ পাননি অসহায় দম্পতি। নিখোঁজ ডায়েরি করেও ছেলের সন্ধান মেলেনি। সম্প্রতি এসআইআর শুরু হতে দম্পতির পাশাপাশি তাঁর ছেলের এনুমারেশন ফর্ম দেন বিএলও। নিজের পাশাপাশি স্ত্রী ও ছেলের ফর্ম পূরণ করে স্থানীয় বিএলওর কাছে জমা দেন প্রশান্তবাবু।
গত মাসের ২৯ তারিখ হাবড়ার ২৫৯ নম্বর বুথের বিএলও তপন ধর সেই ফর্ম নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ম্যাপিং করার সময় দেখতে পান প্রশান্তর ছেলে তপনের নাম পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি জায়গা থেকে ইতিমধ্যেই ম্যাপিং করা হয়ে গিয়েছে। বিএলও তপন ধর তখন সেই জায়গার বিএলওর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান যে তরুণ তাঁর এলাকার ভোটার। তাঁর বাবা সমস্ত নথি দিয়ে গিয়েছেন। সেদিনই পশ্চিম মেদিনীপুরের সেই বিএলও হাবড়ার বিএলও তপন ধর, তরুণ ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে হাবড়ার বিষয়ে জানতে পারেন। এও জানা যায় যে, তরুণ মেদিনীপুরে বিয়ে করে বসবাস করছেন। বর্তমানে তাঁর কলেজপড়ুয়া ছেলেও রয়েছেন। এরপরই তরুণের ছেলে তপনবাবুর কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে দাদু প্রশান্তকে ফোন করেন। দুই পরিবারের মধ্যে কথোপকথন হয়। হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো এতদিন পর ছেলের খোঁজ পেয়ে চোখে জল বৃদ্ধ দম্পতির।
তাঁরা জানান, ছেলের সমস্ত দেনা মিটিয়ে দিয়েছেন, সে যেন বাড়ি ফিরে আসে। এতদিন পর দুই পরিবারের মিলনে আবেগাপ্লুত তরুণও। তিনিও চান, বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে। কবে দুই পরিবারের দেখা হয়, এখন সেদিকে তাকিয়ে প্রতিবেশীরাও। বৃদ্ধ দম্পতি জানালেন, এসআইআর না হলে শেষ বয়সে আর ছেলেকে ফিরে পাওয়া হত না। এখন মরে গেলেও তাঁদের আক্ষেপ থাকবে না। এখন ছেলে ও তাঁর পরিবারের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছেন বৃদ্ধ দম্পতি।
