গোবিন্দ রায়, বসিরহাট: সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরে একই দিনে একই সঙ্গে অপরিচিত দুই মূমুর্ষূ রোগীর জীবন ফিরিয়ে দিলেন বাবা ও ছেলে। বাবার রক্তে প্রাণ ফিরে পেলেন বসিরহাট মির্জাপুরের বাসিন্দা তন্ময় গোলদার (৩৮) ও ছেলের রক্তে নতুন জীবন পেলেন বসিরহাট (Bashirhat) জোড়াপুকুর ধারের বাসিন্দা সোনালী রায়চৌধুরী (৪২)। আর ওই দুই রক্তদাতা হলেন বসিরহাট বড় জিরাকপুর বিশ্বাস পাড়ার বাসিন্দা শিক্ষক চঞ্চল বিশ্বাস(৫৭) ও তাঁর ছেলে বিশ্বায়ন বিশ্বাস(২০)।
জানা গিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘সেবায়ন’-এর থেকে স্কুল শিক্ষক চঞ্চল বিশ্বাস জানতে পারেন, বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি এক ব্যক্তির দুষ্প্রাপ্য ‘এ’ পজেটিভ গ্রুপের রক্তের খুবই প্রয়োজন। দেরি হলে প্রান সংশয় হতে পারে। করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের কারনে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে চলছে সীমাহীন রক্তের সংকট। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে রক্তদানের আয়োজন করা হলেও তাতেও মেটেনা সংকট। বৃহস্পতিবার সেই সংকট আরও প্রকট রূপে দেখা দেয়। খবর পেয়েই এদিন ওই শিক্ষক ছেলেকে বাইকে চাপিয়ে চলে আসেন হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে। কাকে রক্ত দিতে হবে জানেন না চঞ্চলবাবু।
[আরও পড়ুন: এবার উত্তরবঙ্গেও শুরু বিজেপির ভাঙন! তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন আলিপুরদুয়ারের জেলা সভাপতি]
তিনি জানান, সেবায়ন-এর থেকে জানতে পারি একজনের এ পজেটিভ রক্তের খুবই প্রয়োজন। খবর পেয়ে ছুটি বসিরহাট হাসপাতালে। হাসপাতালে গিয়েও জানিনা কাকে রক্ত দিতে হবে। পরে দেখতে পাই খুবই মুমূর্ষু রোগী। দুটো ভাগ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রটোকল মেনে রক্ত দিতে রাজি হয়ে যাই। রক্ত দিয়ে রোগীর সুস্থতা কামনা করে বেড়িয়ে আসতেই আরও এক মুমূর্ষু রোগীর আত্মীয় করুন দৃষ্টিতে আমাদের কাছে সাহায্যের প্রার্থনা করেন। জানান, তাঁরও এ পজেটিভ রক্তের খুবই প্রয়োজন না হলে তাঁর পরিবারের এক সদস্য মারা যাবে। আমার একবার রক্ত দেওয়া হয়ে গিয়েছে তাই ছেলে বিশ্বায়ন রক্ত দিতে রাজি হয়ে যায়। ওরও এ পজেটিভ রক্ত। ও নার্সিং-এর ছাত্র। এবারই আবার প্রথম রক্তদাতাও হল।” তিনি আরও বলেন, “এই করোনা পরিস্থিতিতে চারিদিকে হাহাকার। একদিকে মানুষ খেতে পারছে না। চিকিৎসা করাতে পারছে না। অন্যদিকে, রক্তের জন্য হাহাকার। কারও পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা সত্যিই খুবই খুশি।”
মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচিয়ে আপ্লুত মাস্টামশাই চঞ্চল বিশ্বাস। দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে তিনি রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। মুমূর্ষু আত্মীয়ের প্রাণ ফিরে পেয়ে খুশি দুই রোগীর পরিবারও। দুই হাত ভরে চঞ্চল বাবু ও তাঁর পরিবারকে আশীর্বাদও করেছেন তাঁরা। তাদের বক্তব্য, “এখনও যে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা একটুও কমে যায়নি তার চুড়ান্ত উদাহরণ চঞ্চল বাবু।”