দেব গোস্বামী, বোলপুর: পূর্বপল্লির মাঠে ফিরেছে পৌষমেলা। মানুষের ঢল নেমেছে সেখানে। কিন্তু এবার ছেদ পড়ল অন্য এক ঐতিহ্যে। এবার আর আতসবাজি প্রদর্শনী হল না।
অতীতে নির্দিষ্ট তারিখ ৮ পৌষ সন্ধ্যায় আতসবাজি প্রদর্শনী হত পৌষমেলায়। তার অন্য এক আকর্ষণ রয়েছে মেলাপ্রেমীদের কাছে। সেই আতশবাজি বন্ধ হওয়ায় খানিকটা হলেও আক্ষেপ সাধারণ মানুষের।
মেলা প্রেমীদের কাছে যেমন আতশবাজি না পাওয়ার আক্ষেপ রয়েছে। তেমনই শ্রীনিকেতন সুরুল মালাকার বাড়ির রীতিও ব্রাত্য। লোকসানে ধাক্কা-সহ জেলা প্রশাসন থেকে নবীকরণ না দেওয়ায় বন্ধ আতশবাজির কারখানাও। প্রসঙ্গত ২০১৬ সালে পৌষমেলায় দূষণ রুখতে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে জাতীয় পরিবেশ আদালত। ২০১৭ সাল থেকে বন্ধ হয়েছে আতশবাজি প্রদর্শন। বাজি প্রদর্শন দেখতে ভিড় করতেন লক্ষাধিক মেলাপ্রেমী। পরিবেশ আদালতকে মান্যতা দিতেই এ বছরও শব্দ ও বায়ু দূষণ রুখতে পৌষমেলায় আতশবাজি পোড়ানো বন্ধ রেখেছে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত জানান, "পৌষমেলার পরম্পরাগতভাবে বাজি পোড়ানো প্রদর্শন হত। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ পরিবেশ আদালতের রায়কে মান্যতা দিয়ে বাজি প্রদর্শন বন্ধ রেখেছে। বিশ্বভারতীর এই পদক্ষেপ আগামী দিনেও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। যদিও পূর্বে বিশ্বভারতী আদালতে রায়কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি পৌষমেলা বন্ধ করে দেয়। পরিবেশ আদালত কোনওদিনই বলেনি মেলা বন্ধ করতে।" যদিও ট্রাস্টের ডিড থেকে জানা যায়, ব্রাহ্ম মন্দিরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ১৮৯৪ সালে শান্তিনিকেতন সংলগ্ন ভুবনডাঙার মাঠে ছোট আকারে সূচনা হয় পৌষমেলা। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের শতবর্ষে ওই মেলা স্থানান্তরিত হয়েছিল পূর্বপল্লির মাঠে। তখন থেকে ধারাবাহিক ভাবে পৌষমেলা চললেও ছেদ পড়েছিল ২০১৯ সালের পর থেকেই।
শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা যতীন্দ্র রায় ও শ্যামল মুখোপাধ্যায় বলেন, "ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ছিল ৮ পৌষের বাজি প্রদর্শন। সেই রীতি আর নেই।" শ্রীনিকেতনের বাসিন্দাদের দাবি, "বাজি কারখানা প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। সুরুলের জমিদার বাড়ি ছাড়াও রায়পুর জমিদার বাড়ি, শান্তিনিকেতন পৌষমেলায় বরাত মিলত। শব্দবাজি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ক্ষতির শিকার হয়েছেন বাজি কারখানার সঙ্গে জড়িত সকলেই।" চিন্ময় মালাকার বলেন, "৮ পৌষ এলে মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু কি করব, পাঁচ পুরুষের এই কারখানা কার্যত ধুঁকছে। অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছেন পরিবারের অনেকেই।" শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার বলেন, "আতশবাজি রীতি পরম্পরাতে মানুষজন ভীষণভাবে আনন্দ করত।" আতশবাজি প্রদর্শন বন্ধ হওয়ায় মন খারাপ পর্যটক থেকে স্থানীয় বাসিন্দা, পড়ুয়া, প্রাক্তনী ও প্রবীণ আশ্রমিকদের।