ধীমান রায়, কাটোয়া: ভিনরাজ্যে মাদক (Drugs) পাচারের ছক বানচাল। কাটোয়ার দাঁইহাট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার করল কাটোয়া থানার পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪ জনকে। তারা সকলেই মণিপুরের (Manipur) বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। এদের কাটোয়া আদালতে তোলা হলে ১১ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ধরপাকড় মাদক বিরোধী অভিযানে কাটোয়া পুলিশের বড় সাফল্য বলেই মনে করা হচ্ছে।
রবিবার রাতে কাটোয়ার (Katwa) দাঁইহাট বাসস্ট্যান্ড মোড় থেকে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাটোয়া থানার আইসি তীর্থেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়। তারা সকলেই মণিপুরের বাসিন্দা। ধৃতদের নাম সইখম রোহন কুমার সিং(৩২), ইয়েনখোম প্রেমচন্দ্র সিং(২৭), লাইসরাম বিজয় সিং(৩১) এবং সংঘম সুমফাম নাসির আলি(৪১) ওরফে নাসিব আলি। ধৃতদের কাছ থেকে ১৩ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। আটক করা হয়েছে একটি হন্ডা সিটি চারচাকা গাড়ি। ধৃতদের এদিন সোমবার কাটোয়া আদালতে তোলা হয়। তাদের ১৫ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানায় পুলিশ। বিচারক ১১ দিনের হেফাজতের নির্দেশ দেন।
[আরও পড়ুন: অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে দিল্লি নিয়ে যেতে পারবে ইডি, অনুমতি দিল আদালত]
গত শনিবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এসটিএফ (STF) ও কাটোয়া থানার পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালায় পঞ্চাননতলা বাসস্ট্যান্ডে বাদশা মল্লিকের বাড়িতে। বাদশার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় দু’কেজি হেরোইন উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় বাদশাকে। উদ্ধার করা হেরোইনের বাজারমূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা বলে জানা যায়। বাদশা বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাদশাকে জেরা করে মণিপুরের এই চক্রের কথা জানতে পারে পুলিশ। তারপর পুলিশ এদের ধরার জন্য ওঁত পেতে ছিল। অবশেষে রবিবার রাতে চারচাকা গাড়িতে করে যাওয়ার সময় দাঁইহাট বাসস্ট্যান্ডের কাছে ধরা পড়ে।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, বাদশা মণিপুরের এই চক্রের কাছ থেকে হেরোইন (Heroine) কিনত। তারপর সেই হেরোইনের সঙ্গে আরও কিছু মিশিয়ে বিক্রি করত বিভিন্ন জেলায়। পুলিশ জেনেছে যে হেরোইন বাদশার কাছে উদ্ধার হয় তার বর্তমান বাজারমূল্য কেজি প্রতি ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। বাদশাকে ওই দামেই কিনতে হত। তারপর নদিয়া জেলায় নিয়ে গিয়ে আরও কিছু মিশিয়ে এক কেজি মণিপুরী হেরোইনকে তিন কেজি করা হত। সেই হেরোইন বিক্রি করত বাদশা। আর তাতেই তার মোটা অঙ্কের মুনাফা পকেটে আসত।
[আরও পড়ুন: মালবাজারে পৌঁছেই নিহতদের বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা]
মণিপুরের চক্রের সঙ্গে কথাবার্তার পর বাদশা তাদের প্রথম দফায় ১১ লক্ষ টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পেমেন্ট দিয়েছিল। গত শনিবার দু’কেজি হেরোইন লেনদেন হয়। সেদিন নগদ দেওয়া হয় ১৪ লক্ষ টাকা। বাকি টাকা নেওয়ার জন্য ওই চারজনকে অপেক্ষা করতে বলেছিল বাদশা। তারা কাটোয়ার আশপাশে একটি ডেরায় থেকে যায়। কিন্তু মণিপুরী ওই চার যুবক জানতেন না শনিবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গিয়েছে বাদশা। পুলিশ তাদের ধরার জন্য তক্কে তক্কে ছিল। রবিবার রাতে পুলিশের কাজ হাসিলও হয়ে যায়। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে এই চক্রের মাথা নসিব নামের এক ব্যক্তি। সে বিমান ধরে কলকাতায় আগেই চলে আসে। আর ধৃত চারজন এসেছিল হন্ডা সিটি গাড়িতে চড়ে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায় এই মাদক সাধারণত উৎপাদন হয় মায়ানমার চিনের সীমান্ত এলাকায়। সেখান থেকে মণিপুর হয়ে এদেশের বিভিন্ন রাজ্যে সাপ্লাই করা হয়। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে মাদক চক্রের আরও কয়েকজনকে ধরা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী পুলিশ।