ধনরাজ তামাং, দার্জিলিং: ভূমিধসে বিধ্বস্ত পাহাড় যখন একটু একটু করে গুছিয়ে উঠে পুজোর মুখে পর্যটনে ভর দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে তখন সুবাস ঘিসিং এবং পরবর্তীকালে বিমল গুরুংয়ের সেই ধ্বংসাত্মক পথে শৈল শহরকে উত্তপ্ত করার দিকে হাটতে শুরু করল জিএনএলএফ। এবার সুবাস পুত্র, জিএনএলএফের সুপ্রিমো মন ঘিসিং দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, পাহাড়ের দাবি পূরণ না হলে আন্দোলনের পুরনো পথেই ফিরবেন তাঁরা। যার বিরোধিতাও শুরু হয়েছে পাহাড়ের অন্য দলগুলি থেকে। উদ্বিগ্ন পর্যটন ব্যবসায়ীরাও জানিয়ে দিয়েছেন, পাহাড় ফের অশান্ত হলে আর্থিক কাঠামোটাই পুরো ভেঙে যাবে।
পাহাড়ে কার্যত প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলা জিএনএলএফ ঘুরে দাঁড়াতেই যে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনকে হাতিয়ার করতে মরিয়া, সেটা সোমবার মন ঘিসিংয়ের দলের কালিম্পং, কার্শিয়াং ও দার্জিলিংয়ের সম্পাদক-সভাপতিদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর আরও স্পষ্ট হয়েছে। এদিন পাহাড়ের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের দাবিতে দলীয় দপ্তরগুলোতে কালো পতাকা তুলে হুমকি দেওয়া হয় সমস্যার সমাধান না হলে পাহাড়ের পরিস্থিতি খারাপ হবে। জিএনএলএফের ওই হঠকারী পদক্ষেপের সমালোচনায় সরব পাহাড়ের বিভিন্ন মহল। ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সুপ্রিমো অনীত থাপা বলেন, অশান্ত পাহাড় উন্নয়ন চায়। কোনওভাবেই অশান্তি বরদাস্ত করবে না।” পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যখন দার্জিলিংয়ের পর্যটন শিল্প স্বমহিমায় ফিরছে তখন ফের অশান্তির চেষ্টা হলে আমজনতা রুখে দাঁড়াবে। বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য মুখ খোলেননি। এদিকে জিটিএ-র ক্ষমতা নিয়ে সরব হয়েছেন বিনয় তামাং। তাঁর দাবি, গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তৈরি হলেও কেন্দ্র বা রাজ্য এখনও টাকা পাঠায় দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের নামে। টাকা খরচের ক্ষমতাও তাদের হাতে রয়েছে। বিষয়টি আদালতে সম্পূর্ণভাবে তোলার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: রেশন দুর্নীতি মামলায় ফের সক্রিয় ইডি, কলকাতা-সহ ১০ জায়গায় তল্লাশি]
শনিবার ৩৮তম গোর্খাল্যান্ড মাতৃ দিবসে পাহাড়ের দাবি পূরণের জন্য বিজেপিকে সময়সীমা বেঁধে দেয় শরিক দল গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (জিএনএলএফ)। সোমবার একই ইস্যুতে কালো পতাকা তুলেছে দল। এদিনই জিএনএলএফ সুপ্রিমো মন ঘিসিং দলের কালিম্পং, কার্শিয়াং ও দার্জিলিংয়ের সম্পাদক-সভাপতিদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে বিজেপিকে দ্রুত পাহাড়ের দাবি পূরণের জন্য চাপ দিতে আন্দোলনের কথা বলেন। সিদ্ধান্ত হয়, দাবি জানাতে দলীয় দপ্তরগুলোতে কালো পতাকা তোলার। জিএনএলএফ মুখপাত্র ইয়ন্তেন লামা বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারকে পাহাড়ের জন্য কিছু না কিছু করতে হবে। পাহাড়ের সমস্যা সমাধানের দাবিতে এদিন থেকে দলীয় দপ্তরে কালা পতাকা তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” এর পর প্রয়োজনে বন্ধ-এর মতো পদক্ষেপ করবেন তাঁরা।
জিএনএলএফ শুধুমাত্র পাহাড়ের দাবি পূরণের জন্য বিজেপিকে সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে পাহাড়ের রাজনৈতিক ছবি পালটে যাবে। সোমবারও একই হুমকি দিয়েছে জিএনএলএফ নেতৃত্ব। শনিবার মন ঘিসিং রাখঢাক না রেখে প্রকাশ্যে হুমকির সুরে জানিয়েছিলেন, বিজেপিকে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে পাহাড়ের দাবি পূরণ করতে হবে। যদি সেটা না হয় ফল ভুগতে হবে। পাহাড়ের ছবি পালটে যাবে। মনে করা হচ্ছে সেটারই প্রস্তুতি নিতে সম্ভবত মন ঘিসিং সোমবার ফের দলীয় নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করেন। জানা গিয়েছে, বৈঠকে জিএনএলএফ নেতৃত্ব জানান, আর অপেক্ষা করা হবে না। কেন্দ্রীয় সরকারকে পাহাড়ের জন্য কিছু না কিছু করতে হবে। রাজনৈতিক মহলের মতে ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে জিএনএলএফ এগোতে শুরু করেছে। বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে মন ঘিসিং একক শক্তিতে লড়াই করার প্রস্তুতি নিতে চাইছেন। কিন্তু দলের সাংগঠনিক শক্তি সেই জায়গায় নেই। পাহাড়ের রাজনীতিতে ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়েছে দল। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে তবে কি পাহাড়বাসীর আবেগ ব্যবহার করে বাবা সুবাস ঘিসিংয়ের ধ্বংসাত্মক পথে পা বাড়িয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন মন ঘিসিং!
[আরও পড়ুন: ভোটের পর ফের নজরে সন্দেশখালি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রশাসনিক বৈঠকে সুজিত]
সম্প্রতি বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার সঙ্গেও জিএনএলএফের দূরত্ব বেড়েছে। তাদের কোনও অনুষ্ঠানে সাংসদকে দেখা না গেলেও মোর্চা নেতা বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে সব সময় দেখা যাচ্ছে। এদিন জিএনএলএফের তরফে পাহাড়ের দাবি পূরণের জন্য বিভিন্ন দলকে একমঞ্চে আসার আবেদন রাখা হয়। রাজনৈতিক মহলের মতে বিজেপি এবং ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চাকে চাপে রাখতে জিএনএলএফের ওই চাল কতটা সফল হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, পাহাড়ের আমজনতা পুরনো দিনে ফিরতে নারাজ। তারা পর্যটনকে ঘিরে শৈল শহরকে স্বমহিমায় ফেরাতে তৎপর। ওই কারণে শান্তি ও উন্নয়নের পক্ষে সওয়াল করছেন।