shono
Advertisement

তাণ্ডব চালাচ্ছে হাতির দল, মাধ্যমিকের সময়ে রাতের ঘুম উড়েছে পরীক্ষার্থীদের

ঝালদায় কাঁচা বাড়ি ভেঙে, মিড-ডে মিলের চাল তছনছ করছে ১২৯ হাতি।
Posted: 05:11 PM Feb 06, 2024Updated: 09:23 AM Feb 07, 2024

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বাংলা-ঝাড়খণ্ডের সাঁড়াশি অভিযানে বিরক্ত হাতির দল রাতভর তাণ্ডব চালাল পুরুলিয়ার (Purulia) ঝালদার দুই গ্রামে। পুরুলিয়ার ঝাড়খণ্ড লাগোয়া ঝালদা বনাঞ্চলের কলমা বিটের কোচাজারা ও বান্দুলহরে সোমবার সন্ধে থেকে রাত পর্যন্ত দৌরাত্ম্য চালিয়েছে প্রায় ৩৫ টি হাতি। এর মধ্যে শাবক ছিল প্রায় ১৫ টি। সেই শাবকগুলোও মিড-ডে মিলের চালের গন্ধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদর গেট-সহ স্টোর রুমের দরজা ভেঙে একাধিক বস্তার চাল সাবাড় করে। দুটি গ্রাম মিলিয়ে একাধিক কাঁচা বাড়ি, সবজির জমি তছনছ করে দেয় ওই হাতির (Elephants) দল। ওই হাতির দলকে সরাতে এক বনকর্মীর মোটরবাইকে চেপে যাওয়ার সময় মুখোমুখি পড়ে কোনওক্রমে প্রাণে বাঁচেন ঝালদা (Jhalda) রেঞ্জ আধিকারিক বিশ্বজ্যোতি দে-সহ ওই কর্মী।

Advertisement

ঝালদার দুটি গ্রামে হাতিদের দৌরাত্ম্য। ছবি: অমিত সিং দেও।

রাতভর এই তাণ্ডবলীলায় ওই এলাকার একজন মাধ্যমিক (Madhyamik) পরীক্ষার্থীও দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি। বিনিদ্র রজনী কাটিয়েই পরীক্ষাকেন্দ্রে যায় তারা। তবে বনদপ্তর এদিন তাদের মোটরবাইকে করে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে দেয়। এই এলাকায় হাতির দল আগে ছিল না। তাই বনদপ্তর কোনও গাড়ির ব্যবস্থা করেনি। তবে বুধবার থেকে এলাকার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও (DFO) কার্তিকায়েন এম বলেন, “কলমা বিটের ওই দুটি গ্রামে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত তা আমাদের সমীক্ষা চলছে। ওই এলাকার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য যাতে গাড়ির ব্যবস্থা করা যায় সেই বিষয়টি রেঞ্জ আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তবে এই কাজ আমরা বুধবার থেকে করতে পারব।” সমগ্র পুরুলিয়া ও লাগোয়া ঝাড়খণ্ড সীমানা জুড়ে মোট ১২৯টি হাতি চোখ রাঙাচ্ছে।

[আরও পড়ুন: নামবিভ্রাট! ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির তদন্তে ভুল ঠিকানায় ইডি!]

গত রবিবার থেকেই ঝালদা বনাঞ্চলের সীমান্তে ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) রামগড় জেলার গোলা রেঞ্জে ৩৫টি হাতি ছিল। ওই হাতির দলটি হাজারিবাগের বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। ঝাড়খণ্ডের ওই এলাকায় বুনো হাতির দল ধারাবাহিকভাবে তাণ্ডব চালানোয় সেখানকার বনদপ্তর হুলা পার্টি দিয়ে সবসময়ই বাংলায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ওই রাজ্যের মানুষজনদের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচাতেই নিয়মিতভাবে ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ এমন কাজ করে বলে অভিযোগ।

স্কুলঘর থেকে মিড ডে মিলের চাল লুট করল হাতির দল। ছবি: অমিত সিং দেও।

গত রবিবার থেকে ওই এলাকায় হামলা চালানো ৩৫ টি হাতির দলকে সোমবার সন্ধ্যা থেকে ঝাড়খণ্ডের প্রায় ১৫০ জন হুলা পার্টির সদস্য ঝালদা দিয়ে বাংলায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালান। এই কাজ করতে তারা রাঁচি থেকেও হুলা পার্টি নিয়ে আসেন। এদিকে ওই হাতির দল যাতে কোনভাবে ঝালদা বনাঞ্চলে না ঢোকে সেইজন্য এখানকার ৫০ জন হুলা পার্টির সদস্য প্রতিরোধ করে। উভয়ের সাঁড়াশি অভিযানে বিরক্ত হয় হাতির দল। তারা দল থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে এদিক সেদিক গিয়ে হানা দেয়।

ওই হাতির দলের একাধিক হাতি প্রথমে ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা কলমা বিটের কোচাজারা গ্রামে ঢুকে পড়ে। সেখানে একের পর এক ঘর ভেঙে ফসল নষ্ট করে বাড়িতে থাকা মজুত ধান খেয়ে নেয়। এর পর হাতির দলটি চলে যায় বান্দুলহর এলাকায়। ওই গ্রামে ঢোকার মুখেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদর দরজা দুমড়ে-মুচড়ে দেয়। ভেঙে দেয় সীমানা প্রাচীরের একাংশ। তার পর স্টোর রুমে গিয়ে ড্রামের উপরে থাকা চার বস্তা চাল খেয়ে নেয় দলে থাকা একাধিক শাবক। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয়কুমার সাহু বলেন, “আমার পাশের গ্রাম ব্রজপুরে বাড়ি। স্থানীয় শিক্ষক আমাকে এই খবর দেয় সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ। আমি আধঘণ্টার মধ্যে ৭ টা নাগাদ এখানে এসে পৌঁছে দেখি স্কুল একেবারে লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে। সদর গেট দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে। এছাড়া মোট তিনটি দরজা ভেঙেছে। ক্ষতি করেছে একটি জানলা। দেড় কুইন্টাল মিড ডে মিলের চাল খেয়ে নষ্টও করে। আলমারি সহ রান্নার বাসনপত্রও দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে। সমগ্র বিষয়টি অবর বিদ্যালয়ের পরিদর্শককে জানিয়েছি।”

[আরও পড়ুন: কুকুরের পাত থেকে বিস্কুট তুলে দলীয় কর্মীকে দিলেন রাহুল গান্ধী! ভাইরাল ন্যায় যাত্রার ভিডিও]

এদিন এই তাণ্ডব চিহ্নের মধ্যেই ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খানিকটা দেরি করে ক্লাস শুরু হয়। স্কুলের পাশে থাকা ঝালদার মাহাতোমারা গ্রামের বাসিন্দা বিজয় মাহাতোর স্টেশনারি দোকানের জিনিসপত্রও তছনছ করে দেয়। লাগোয়া সৃষ্টিধর ও বিদ্যাধর মাহাতোর বাড়িতেও হামলা চালায় হাতির দল। তাদের আদি বাড়ি কিছুটা দূরে মাহাতোমারায়। কিন্তু সোমবার রাতে তারা বান্দুলহরে ছিলেন। হাতি হামলা চালানোয় কোনওক্রমে পালিয়ে বাঁচেন। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে রাতেই বনদপ্তর সেখানে গেলে পটকা ফাটায়। এর পর ঝালদা-কোটশিলা সীমানায় চলে যায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ওই বুনো হাতিরা।

হাতিদের দৌরাত্ম্যে ব্যাহত গ্রামবাসীদের জীবনযাপন। ছবি; অমিত সিং দেও।

পুরুলিয়া বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে বলরামপুর রেঞ্জের এরকা এবং ঝাড়খণ্ড সীমান্তে একটি, ঝালদা-কোটশিলা রেঞ্জের বড়গাথা, বেকো, কারিয়র মৌজায় ৩৫ টি হাতির একটি দল রয়েছে। এছাড়া মাঠা বনাঞ্চল এবং গোবরিয়া সীমান্তে রয়েছে ১৩ টি হাতি। বাঘমুন্ডি বনাঞ্চলের কালিমাটি এলাকার ঝাড়খণ্ড সীমানায় আছে ৩৫টি হাতি। কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের ঝাড়খণ্ড সীমানায় চোখ রাঙাচ্ছে মোট ৪৫ টি হাতি। তার মধ্যে বরাবাজার রেঞ্জের ঝাড়খণ্ড সীমানায় ১ টি, বান্দোয়ান এক রেঞ্জের সিরকা সীমান্তে ৭ টি এবং বান্দোয়ান ২ রেঞ্জের দুয়ারসিনি ঝাড়খন্ড সীমানায় ১৩ টি ও যমুনা বনাঞ্চলের সীমানায় ২৪ টি হাতি রয়েছে বলে বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে।

দেখুন ভিডিও: 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup রাজধানী এক্সপ্রেস toolbarvideo ISL10 toolbarshorts রোববার