সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: এলাকায় উচ্চমাধ্যমিক স্কুল বলতে এই একটিই। সুপ্রিম-নির্দেশে এক লহমায় চাকরি গিয়েছে স্কুলের সকল শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর। একা কুম্ভ রক্ষা করছেন পাথরপ্রতিমার উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। কীভাবে সামলাবেন স্কুল, তা ভেবেই দিশেহারা তিনি। তাঁকে সাহায্য করতে ও ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিনা স্বার্থেই প্রাথমিকভাবে এগিয়ে এসেছেন চাকরি খোয়ানো সেই ছয় শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীই।
সুন্দরবনের এক প্রত্যন্ত দ্বীপ পাথরপ্রতিমা। তারও অনেক ভিতরে অচিন্ত্যনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। সেখানেই রয়েছে পশ্চিম শ্রীপতিনগর ডা. বি সি রায় মেমোরিয়াল বিদ্যাপীঠ। গত বছরই মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়েছে এই স্কুল। স্কুলের ৬০০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রীর জন্য বরাদ্দ ছিল সাকুল্যে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক-সহ পাঁচজন শিক্ষক ও গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি পদের দু'জন অশিক্ষক কর্মচারী। আদালতের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন তাঁদের ছয়জনই। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে এখন চলছে ছাত্রছাত্রীদের পর্যায়ভিত্তিক পুনর্মূল্যায়নের পরীক্ষা। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের পক্ষে একা সেই পরীক্ষা নেওয়া ছিল একেবারেই অসম্ভব। ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে এবং ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন ওই চাকরিহারা শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরাই। তাঁরা সকলেই স্কুলে আসছেন যাতে ছাত্রদের পরীক্ষা বানচাল না হয়ে যায়।
ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক পার্থসারথি মিশ্র চাকরিহারা শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের এমন মানবিকতার দৃষ্টান্তে অভিভূত। তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। বলেন, "আদালতের নির্দেশ শোনার পর উদ্বিগ্ন ছিলাম কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া যাবে। ওঁদের উদার মানসিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। কিন্তু এর পর কী হবে? পরীক্ষার পর খাতাগুলি কে দেখবেন, পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস কারা নেবেন, স্কুলের গেট খোলা, ঘণ্টা বাজানো, গেট বন্ধ করা এবং অফিসিয়াল কাজকর্ম এসব কে করবেন ভেবেই ঘোর দুশ্চিন্তায় রয়েছি। দুজন প্যারাটিচার স্কুলে থাকলেও মাত্র দু'জনকে দিয়ে কি আর অত ক্লাস নেওয়া সম্ভব?"
ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও। তাঁরা জানিয়েছেন, দ্বীপ এলাকায় কাছাকাছি উচ্চমাধ্যমিক স্কুল বলতে এই একটিই। একজন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দিয়ে তো আর স্কুল চলে না। শিক্ষকের অভাবে স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে তাঁদের ছেলেমেয়েরা কোথায় পড়বে সে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। মনখারাপ ছাত্র-ছাত্রীদেরও। ছাত্র সুজিত জানা জানায়, "স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে কোথায় পড়ব জানি না। আমাদের পড়াবে কে? টিআইসি ছাড়া স্কুলে আর একজন স্যরও তো আর রইলেন না।"