গোবিন্দ রায়: গণহত্যার এক যুগ পেরিয়েছে। আজ নেতাইয়ের শহিদ দিবসের ১৪ বছর পূর্তি। ইতিমধ্যেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন সব আসামিরাই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত শেষ হয়নি নেতাই গণহত্যার বিচারপর্ব। আজও বিচারের আশায় দিন গুনছেন স্বজন হারানো শহিদ পরিবারের সদস্যরা।
এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে গত বছর ১৫ জানুয়ারি নিম্ন-আদালতকে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। উচ্চ-আদালতের নির্দেশে নেতাই গণহত্যা মামলার নিষ্পত্তিতে সিবিআই দেরিতে সক্রিয় হলেও মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও সিবিআইয়ের অতি নিষ্ক্রিয়তায় এখনও পর্যন্ত ১১৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব সম্পূর্ণ হয়েছে। আরও ৬ জনের ‘এগজামিনেশন ইন চিফ’ অর্থাৎ সাক্ষ্যগ্রহণের প্রধান পর্ব হয়েছে। কিন্তু ‘ক্রস এগজামিনেশন’ বা সাক্ষ্যগ্রহণের জেরাপর্ব বাকি রয়েছে। তার পরে ২০ জন আসামিদের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং আসামিদের ও সিবিআইয়ের আইনজীবীদের যুক্তি-তর্ক শেষে মামলার রায়দান। এই সময়ের মধ্যে সাক্ষ্যদান থেকে শুরু করে গোটা প্রক্রিয়া কতটা শেষ হয় তা একটা বড় প্রশ্নের মুখে।
জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড় থানার নেতাইয়ে সিপিআইএম কর্মীদের গুলিতে ৯ জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছিল। বহু গ্রামবাসী গুরুতর আহত হন। ওই বছর ১০ জানুয়ারি হাই কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন কার্যকরী কমিটির সাধারণ সদস্যদের সভায় প্রস্তাবমতো তৎকালীন বারের সহ-সভাপতি সুখেন্দুশেখর রায় ও সহ-সম্পাদক সঞ্জয় বর্ধন নেতাই গণহত্যার প্রতিবাদে সিবিআই তদন্ত ও মৃত পরিবারের সদস্য ও আহতদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে। ১৮ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচার জয়নারায়ণ প্যাটেল ও অসীমকুমার রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, মৃতদের পরিবারকে ২ লাখ টাকা ও গুরুতর আহতদের ১ লাখ ও কম গুরুতর আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে অন্তর্বর্তী ক্ষতিপূরণের আদেশ দেয়।
তৎকালীন বাম সরকার সুপ্রিম কোর্টে এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আবেদন করে। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত হাই কোর্টের নির্দেশই বহাল রাখে। ২০১১ সালের জুলাই মাসে ক্ষমতায় এসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৃতদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ও গুরুতর আহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়। এর পর থেকে গত ১৪ বছর ধরে বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে মামলার অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড আইনজীবী সঞ্জয় বর্ধন মামলাটির তদারকি করছেন। তিনি আদালতে জানিয়েছেন, দু’বছর আগে সাংসদ ও আইনজীবী সুখেন্দুশেখর রায়ের আরটিআইয়ের জবাবে প্রধান মন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছিল, ২৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণ হয়েছে। বলা হয়েছে, বিলম্বিত সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণের কারণে সব আসামি জামিন পেয়ে গিয়েছে।
যদিও সিবিআইয়ের আইনজীবী অমাজিৎ দে জানান, অতি দ্রুততার সঙ্গে সিবিআই হাই কোর্টের নির্দেশমতো মামলা শেষ করার চেষ্টা করছে। আশা করা যায়, সময়ের মধ্যে বাকি প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়ে যাবে। এর পরও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, লালগড়ের নেতাই গ্রামের সিপিএমের জেলা, জোনাল ও লোকাল কমিটি পদাধিকারী ও কর্মীর নির্বিচারে গুলি চালানোর ঘটনায় নিরীহ গ্রামবাসীদের ৯ শহিদ পরিবার কি গণহত্যার আদৌ ন্যায়বিচার পাবে? মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও প্রথম থেকে সিবিআইয়ের অতি নিষ্ক্রিয়তায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়ে হতাশ হবেন না তো শহিদ পরিবারের সদস্যরা।