সুমন করাতি, হুগলি: ডাকাতকালী। শুনলেই যেন শিহরণ জাগে! তবে সেই দেবীর মাহাত্ম্য কথা কিন্তু আজও মুগ্ধ হতে হয়। হুগলির (Hooghly)সিঙ্গুরের ডাকাতকালীর খ্যাতি রয়েছে গত ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। কালীপুজোয় সেখানে ভক্তদের ঢল নামে। অনেক আগে থেকে শুরু হয়ে যায় পুজোর প্রস্তুতি। পুজোয় রয়েছে প্রাচীন রীতিনীতি, যা আজও মেনে চলা হয়। বছরের এই একটা সময় এলাকার চারপাশে একেবারে উৎসবের পরিবেশ। এখানে ডাকাতকালীর (Dakat Kali) মন্দির থাকায় আশেপাশে কোনও বাড়িতে আর কালীপুজো হয় না।
সিঙ্গুরের ডাকাতকালী মন্দিরের ইতিহাসও বেশ গা ছমছমে। ডাকাতকালী মন্দির উন্নয়ন কমিটির মদনমোহন কোলে জানান, অসুস্থ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখতে মা সারদা কামারপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বর (Dakshineswar) যাবার পথে রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত মায়ের পথ আটকে দাঁড়ায় ডাকাতির উদ্দেশ্যে। সেই সময় সারদাদেবীর মধ্যেই রক্তচক্ষু মা কালীর মুখ দেখতে পায় ডাকাতরা। ভুল বুঝতে পেরে মা সারদার কাছে ক্ষমা চায় ডাকাতদল। সন্ধ্যা নামায় সেই রাতে ডাকাতদের (Dacoits) আস্তানায় মা সারদাকে থাকার ব্যবস্থা করে দেয় ডাকাতরা। মা সারদাকে রাতে খেতে দেওয়া হয় চাল কড়াই ভাজা।
[আরও পড়়ুন: বিশ্বকাপের মাঝেই বিরাটের সঙ্গে সময় কাটাতে টিম হোটেলে অনুষ্কা, স্পষ্ট অভিনেত্রীর বেবি বাম্প]
সেই রেওয়াজ মেনেই আজও কালীপুজোর দিনে মায়ের নৈবেদ্যে চাল কড়াই ভাজা দেওয়া হয়। পড়ে বর্ধমানের (Burdwan) রাজার দান করা জমিতে তৈরি হয় এই ডাকাতকালী মন্দির। কালী পুজোর দিন চার প্রহরে চারবার পুজো ও ছাগ বলি হয়। এছাড়া প্রাচীন প্রথা মেনে কালীপুজোর দিন মায়ের প্রসাদ হিসাবে চাল, কড়াই ভাজা দেওয়া হয়। এছাড়া লুচি, পায়েস, ফল, খিচুড়ি, বিভিন্ন পদের ভাজা ও পোলাও দেওয়া হয়। কালীপুজোর দিন গঙ্গা থেকে গ্রামের তফসিলিভুক্ত পরিবারের আনা জল দিয়ে মায়ের ঘটের জল পালটানো হয়।
বছরের এই একদিন ঘটের জল পালটানো হয় মন্দিরের দরজা বন্ধ করে। সেসময় মন্দিরের পুরোহিত ছাড়া কোনও মহিলা মন্দিরের ভিতর থাকতে পারে না। কালীপুজোর পরেরদিন খ্যানের পুজোর পর মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। পুরুষোত্তমপুর গ্রামে এই ডাকাতকালী মন্দির থাকার কারণে আশেপাশের জামিনবেরিয়া, পুরষোত্তমপুর ও মল্লিকপুর গ্রামে কোনও বাড়িতে কালীপুজো হয় না।
[আরও পড়়ুন: গাজায় কি উপনিবেশ স্থাপনের পথে ইজরায়েল? অবস্থান স্পষ্ট করলেন ‘যুদ্ধবাজ’ নেতানিয়াহু]
ডাকাতকালীর মন্দিরে যেতে হলে বৈদ্যবাটী-তারকেশ্বর রোডের পাশে পুরুষোত্তমপুর এলাকায় এই ডাকাতকালী মন্দির। হাওড়া-তারকেশ্বর শাখার সিঙ্গুর (Singur) রেলস্টেশনে নেমে হেঁটে অথবা টোটোয় চেপে মন্দিরে আসা যায়। প্রতিদিন হয় নিত্য পুজো।
দেখুন ভিডিও: