সুমন করাতি, হুগলি: সারারাত হয়েছে পুজো। দিনের আলো ফুটতেই কালীমন্দিরের সামনে ভিড় বেড়েছে ভক্তদের। উপস্থিত আশপাশের দশ-বারোটি গ্রামের বাসিন্দারা। সকলেই উত্তেজনায় ফুটছেন। কারণ কী? এবারই তো শুরু হবে নিলাম প্রক্রিয়া! পুজোয় ব্যবহৃত মা কালীর সামগ্রী, যেমন কাপড় থেকে ফল - সবই রাখা হবে ভক্তদের সামনে। নিলামে ওঠা অর্থ জমা পড়বে ট্রাস্টে। সেই অর্থ ব্যবহার করা হবে আগামী বছরের পুজোয়। শুধু মা কালীর পুজো নয়, রথযাত্রা, দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো এবং সারা বছর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের খরচ উঠে আসে এই টাকাতেই। কয়েকশো বছর ধরে এভাবেই হয়ে আসছে পাণ্ডুয়ার হ্যাপাকালীর পুজো। আর এটাই তার বিশেষত্ব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলুন গ্রামে প্রায় ৩৫৪ বছর আগে এই পুজোর শুরু। বাগদিপাড়ার কয়েকজন ডাকাত এই পুজো শুরু করে বলে জনশ্রুতি। বর্তমানে গ্রামবাসীরা এই পুজো করছেন। তৈরি হয়েছে হ্যাপাকালী বারোয়ারি কমিটি। মায়ের নাম 'হ্যাপাকালী' কেন? ইতিহাস বলছে, গ্রামবাসীরা দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে অনেক বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হন। অর্থাৎ চলতি কথায় প্রচুর 'হ্যাপা' পোহাতে হয়। সেই থেকে দেবীর নাম হয়ে যায় 'হ্যাপাকালী'।
মায়ের পুজোয় ব্যবহার করা শাড়ি গামছা থেকে ধূপ, গঙ্গাজল, আলতা-সিঁদুর, ফল, মিষ্টি - সব সামগ্রীরই নিলাম হয় পুজোর ঠিক পরেরদিন। আর সেই নিলামের টাকায় সারা বছর নানা অনুষ্ঠান, বিভিন্ন পুজো হয়। তবে গ্রামবাসীরা এই সামগ্রী কেনেন কেন? এক ভক্ত সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায় বলেন, "মায়ের স্মৃতি নিজেদের কাছে রাখতেই সবাই তা কেনেন। টাকাটা কোনও ব্যাপার না। সবাই চায় মায়ের জিনিস নিজের কাছে রাখতে।"
চলছে নিলাম।
পুজো কমিটির সম্পাদক সুদীপ ঘোষ বলেন, "পুজোর জন্য গ্রামবাসীদের থেকে কোনও চাঁদা নেওয়া হয় না। এই নিলামের মাধ্যমেই যা অর্থ জোগাড় হয় সেই টাকায় রথযাত্রা, দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো-সহ মা কালীর আরাধনা করা হয়।" মায়ের আশীর্বাদ পেতে বছরের পর বছর ধরে আজও এই নিলামের নিয়ম পালিত হচ্ছে হ্যাপাকালীর পুজোয়।