সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হাজার হাজার ভক্তের সমাগম। চারিদিকে সন্ন্যাসী, নাগা সন্ন্যাসীদের ভিড়। তাঁদের মাঝে রয়েছেন সাধারণ পূণ্যার্থীও। পুলিশে ছয়লাপ এলাকা। ঠিকই ধরেছেন, মহাকুম্ভ মেলার কথা বলা হচ্ছে। ১২ বছর পর আয়োজিত মহাকুম্ভ মেলা। প্রতি ছয় বছর অন্তর হরিদ্বার ও প্রয়াগরাজে হয় অর্ধকুম্ভ মেলা। শেষবার মহাকুম্ভ মেলা হয় ২০১৩ সালে। সেই হিসাবে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে ফের অনুষ্ঠিত হবে মহাকুম্ভ মেলা।
মহাকুম্ভের ইতিহাস: মৌর্য ও গুপ্ত বংশের সময়কাল থেকেই এই মেলার শুরু মনে করা হয়। ইতিহাসের পাতা মিলিয়ে দেখলে গুপ্ত বংশের পতনের পর শুরু হর্ষবর্ধনের রাজত্ব। সেই মত ধরে এগোলে রাজা হর্ষবর্ধনের সময়ে ভারতে আসা হিউয়েন সাঙের লেখায় মহাকুম্ভের উল্লেখ পাওয়া খুব একটা ভুল তথ্য নয়।
মুঘল সাম্রাজ্যে মহাকুম্ভ: ভারতবর্ষে মুঘল আমলের সেরা সময় মনে করা হয় সম্রাট আকবরের সময়কালকে। হিন্দুদের তীর্থের উপরে কর তুলে নেওয়া-সহ আকবরের একাধিক সিদ্ধান্ত কুম্ভমেলাকে লালিত করে। কুম্ভমেলার চারটি স্থানে ঘাট নির্মাণ করে দেওয়া আকবরের আমলেই। এই সময়ে কুম্ভমেলা অন্যমাত্রা পায়।
ব্রিটিশের সময়ে মহাকুম্ভ: ক্ষমতা দখলের পর কুম্ভমেলার ক্ষেত্রে মুঘলদের পথই অনুসরণ করে ইংরেজরা। বরং প্রায় ২০০ বছরের শাসনকালে কুম্ভমেলার মান উন্নতি হয়েছে। আজকের বিশেষ ট্রেন, বাসের আয়োজন থেকে নিরাপত্তার পিছনে রয়েছে ইংরেজদের চিন্তাই। প্রয়াগরাজ, উজ্জয়িনী বা হরিদ্বারে রেল যোগাযোগ থেকে নাগা সাধুদের স্নান-মিছিলের নির্ঘন্ট, সবই ব্রিটিশদের তৈরি। সব মিলিয়ে ইংরেজ আমলে বহরে বাড়ে কুম্ভমেলা।
স্বাধীনতার পরবর্তী কুম্ভমেলা: দেশ স্বাধীনের পর থেকেই কুম্ভমেলার আয়োজনে কোনও খামতি রাখেনি ভারত সরকার। জাতীয় ঐক্য ও একতার প্রতীক হয়ে ওঠে এই মেলা। জাতীয় ঐতিহ্য তুলে ধরার জায়গা হয়ে ওঠে কুম্ভমেলা। একটি মেলাকে কেন্দ্র করে এত লোকের বিশ্বাস, অংশগ্রহণ আর কোনও মেলা হয় না। ২০১৭ সালে ইউনেস্কো এই মেলাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজর তকমা দেয়। আজ মহাকুম্ভ এক আলাদা মাত্রা পেয়েছে।
কুম্ভ মেলা কোন স্থানে, কেন হয়? হিন্দু পুরাণ অনুসারে, দেবতা ও অসুরদের যুদ্ধের সময় প্রয়াগরাজে গঙ্গা, যমুনা, ও সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলে, হরিদ্বার গঙ্গায়, নাসিকের গোদাবরী নদী ও উজ্জয়িনীর শিপ্রা নদীতে বারো ফোঁটা অমৃত পড়ে। ফলে নদীগুলি পবিত্র হয়ে ওঠে বলে বিশ্বাস করা হয়। সেই নদীতে স্নান করলে পূণ্যলাভ করা যায় বলেই ধারণা। দক্ষিণের সাধু আদি শঙ্করাচার্য এই মেলা শুরু করেন বলে ধারণা। তারপর থেকে প্রতি বারো বছর অন্তর এই চারটি স্থানে মহাকুম্ভ মেলা হয়। রাজা হর্ষবর্ধনের রাজত্বের সময় ভারতে আসা চিনা- বৌদ্ধ পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙের লেখায় এই মহা কুম্ভমেলার প্রথম লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায়।
কীভাবে ঠিক করা কুম্ভ মেলার তারিখ? রাশিচক্র অনুসারে, বৃহস্পতি, সূর্য, এবং চাঁদের অবস্থানের উপর নির্ভর করে তারিখ ঠিক করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এই সময়গুলোতে মহাজাগতিক শক্তির দ্বারা নদীগুলি প্রভাবিত হয়। মহাকুম্ভ মেলায় স্নান করলে পাপ থেকে মুক্তি মেলে বলেই মানেন হিন্দুরা।
এবছর কোথায় হবে কুম্ভমেলা? ২০২৫ সালে মহাকুম্ভ মেলা হবে প্রয়াগরাজে। ১৩ জানুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একমাসের বেশি সময় ধরে চলবে এই মেলা।
বৃদ্ধ-তরুণ, নাস্তিক- ধার্মিক, সাংসারিক- সন্ন্যাসী সকলকে মিলিয়ে দেয় গঙ্গা। যেমনভাবে মিশেছে গঙ্গা, যমুনা, ও সরস্বতী। মহাকুম্ভে গঙ্গার জল যেন অমৃত ধারা। যা বইতেই থাকে।