নন্দন দত্ত, সিউড়ি: বিসর্জনে ধূমধাম নয়। ক্লাবের সদস্যকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা। তাই কালীপ্রতিমার বিসর্জন এবার বন্ধ। তার বদলে ক্লাবের সদস্য পলাশ হাজরার চিকিৎসার টাকা দিলেন সিউড়ির বিবেকানন্দ ক্লাবের বাকি সদস্যরা। এ এক অনন্য নজির বটে! আর এমন মানবিক কাজে সকলের প্রশংসা কুড়োচ্ছেন বিবেকানন্দ ক্লাবের সদস্যরা।
শুধু নামেই নয়, সিউড়ির জোড়া শিবতলার এই ক্লাব সদস্যরা যে স্বামী বিবেকানন্দ কথিত 'জীবসেবা'য় বিশ্বাসী, এবারের সর্বজনীন কালীপুজোয় তার প্রমাণ মিলল। সেহেড়াপাড়ার ক্লাবটি পুজোর চেকে এবার তাদের ক্লাব সদস্য, অসুস্থ পলাশ হাজরার ছবি ছেপে তাতে কিউআর কোড দিয়েছে। একইসঙ্গে তার ফোন নম্বর দিয়ে আবেদন করেছে সাহায্যের। যাতে সরাসরি তার অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে পারেন সহমর্মী ব্যক্তিরা। কালীপুজো উপলক্ষ্যে সদস্যকে বাঁচাতে এমন সাহায্যের জন্য বাড়ি বাড়ি চাঁদা তুলতে যাওয়া ৫৬ বছরের একটা ক্লাব শহরে দৃষ্টান্ত করে রাখল। শুধু চাঁদা তোলা নয়, সদস্যরা আবেদন করেছিলেন বাবা মরা ছেলেটার পাশে তার বাড়িতে গিয়ে যেন সকলে দাঁড়ায়।
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের মেধাবী ছাত্র ছিল পলাশ। কিন্তু বাবার প্রয়াণের পর তাঁকে পড়া ছেড়ে কাজের সন্ধানে ছুটতে হয়েছে। তার মধ্যে এবার তাঁর 'রাজ রোগ' ধরেছে। দুটি কিডনি নষ্ট। পলাশের জ্যাঠামশাই মনোজ হাজরা জানান, ‘‘ছেলেটার কপাল খুব খারাপ। আমাদের ক্লাবের সক্রিয় সদস্য ছিল। সকলের আশীর্বাদে, সাহায্যে যদি তাকে মা বাঁচিয়ে রাখেন।’’ বৃহস্পতিবার ছিল বিবেকানন্দ ক্লাবের বর্ণাঢ্য বহু প্রতীক্ষীত বিসর্জনের শোভাযাত্রা। সেদিনই পলাশকে পাড়া থেকে নিয়ে যেতে হল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে। ক্লাবের সম্পাদক উজ্জ্বল কাহার জানান, ‘‘এবার আমরা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবারের পুজো হবে পলাশের জন্য। তাই আমরা ছোট মন্ডপে পুজো করেছি। মন্ত্রোচারণের জন্য মাইক ব্যবহার হয়েছে, এছাড়া কোনও বিনোদনমূলক গান বাজেনি। আমরা পুজোর সব টাকা পলাশের বাড়িতে দিয়ে এসেছি।’’
ক্লাব সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫৬ বছরের বিবেকানন্দ ক্লাবের সর্বজনীন পুজোয় এই পরিস্থিতিতে তাঁদের দুবার পড়তে হল। এর আগে বছর ২০ আগে এভাবেই তারা বিসর্জন বন্ধ করেছিলেন। আসলে বিবেকানন্দ ক্লাব মানে রাস্তার দু ধারে দাঁড়িয়ে থেকে লোকে তাদের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা দেখে। পুজোর থেকে তাদের শোভাযাত্রায় দ্বিগুন বাজেট থাকে। আগে বাজি পোড়ানো ছিল একটা আকর্ষণের বিষয়। এখন কয়েকবছর বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ। তবু নতুনত্বর টানে শহরের লোক অপেক্ষা করতেন বিবেকানন্দ ক্লাবের বিসর্জনের জন্য।
ক্লাবের সভাপতি বাপি কাহার বলেন, ‘‘সেবার বিসর্জনের জন্য সব কিছুর অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিসর্জনের দুদিন আগেই আমাদের এক সদস্যের মৃত্যু হয়। তার জেরে আমরা লোকসানের মুখে পরেও আনন্দোৎসব সব বন্ধ করে দিয়েছিলাম।’’ জোড়া শিবতলার এই ক্লাবটি যে এলাকায় এভাবেই একসূত্রে বেঁধে রেখেছে তা ভেবেই খুশি এলাকার বাসিন্দারা। পলাশ বর্ধমান যাওয়ার আগে অ্যাম্বুল্যান্সে চেপেই ক্লাবে এসে কালী ঠাকুরকে প্রণাম করে গেলেন। আর পাড়ার সকলে ভিড় করে একটাই প্রার্থনা করলেন, ''তুমি সুস্থ হয়ে ফিরে এসো। তোমার জন্য বিসর্জনের আনন্দ আমরা বন্ধ রাখলাম।''