সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: গ্রেপ্তারির পর প্রথমবার মুখ খুললেন কুড়মি আন্দোলনের নেতা রাজেশ মাহাতো। রবিবার ঝাড়গ্রাম আদালতে প্রিজন ভ্যানে ওঠার সময় তিনি বলেন, “বঞ্চনার বিরুদ্ধে আমাদের এই আন্দোলন চলবে।” শনিবার রাজেশ সাংবাদিক সম্মেলন করে বীরবাহা হাঁসদার কনভয়ে হমলার দায় অস্বীকার করেছিলেন। আর তারপর বিকেলে নয়াগ্রাম থেকে রাজেশ মাহাতো-সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের একদিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।
পুলিশের দাবি, রাজেশ মাহাতো, শিবাজি মাহাতো, রাকেশ মাহাতো ও অনুভব মাহাতো ওড়িশায় গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পুলিশ তাঁদের ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে সন্ধান পায়। রবিবার তাঁদের ঝাড়গ্রাম আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁদের একদিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। এদিকে, শনিবার আরেক কুড়মি নেতা অনুপ মাহাতো-সহ চারজন গ্রেপ্তার হন। তাঁদের তিনদিনের পুলিশি হেফাজত হয়েছিল। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের আবার রবিবার আদালতে তোলা হয়। তাঁদেরও একদিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।
[আরও পড়ুন: ‘অর্জুনের বিরোধিতা করলে নিজের গায়েই থুতু পড়বে’, কাকে বার্তা দিলেন মদন?]
তবে জঙ্গলমহলের কুড়মি আন্দোলনের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ হল রাজেশ মাহাতো। তিনি অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের কংগ্রেসের জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন। কলেজ জীবনে ছাত্র পরিষদ করতেন। তিনি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর গ্রামীণের একটি হাইস্কুলের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক। যদিও সম্প্রতি তাকে কোচবিহার জেলার একটি স্কুলে বদলি করা হয়েছে। প্রায় ২০১৪ সাল থেকে কুড়মিদের এসটি তালিকাভুক্ত করার দাবি নিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করেন। পরপর অনেক কর্মসুচি তিনি নিয়েছিলেন। দিল্লির যন্তরমন্তরে ধরনা দিয়েছিলেন কুড়মি সংগঠনের লোকজন নিয়ে। ২০২০ সালে ডিসেম্বরে ঝাড়গ্রামের জেলাশাসকের দপ্তরের বাইরে মঞ্চ বেঁধে ধরনায় বসেছিলেন। অবস্থান অনশন করেছিলেন সংগঠনের বহু মানুষকে নিয়ে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে খেমাশুলি জাতীয় সড়কে বিভিন্ন কুড়মি সংগঠন গুলি মিলে দাবি আদায়ে জাতীয় সড়কে প্রায় পনেরো দিন অবরোধ কর্মসুচি করেছিল। সেখানেও অন্যতম নেতৃত্বে ছিলেন রাজেশ।
চলতি বছরেও এপ্রিল মাসে খেমাশুলিতে কুড়মি সমাজের (পশ্চিমবঙ্গ) রাজ্য সম্পাদক রাজেশ মাহাতোর নেতৃত্বে কুড়মিরা অবরোধ আন্দোলন করেছিল। রাজেশবাবু ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে গোপীবল্লভপুর ক্ষেত্রে থেকে নির্দল প্রার্থী হয়েছিলেন। যদিও নির্বাচনে তার জামানত জব্দ হয়েছিল। এর আগে ২০১৬ সালেও একবার ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তৃণমূলের দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পর ২০১২ সালে রাজেশবাবু তৃণমূলে যোগদানের ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। তবে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে তাকে দল নেয়নি বলে খবর।
এদিকে, কনভয় হমলার ঘটনায় বিজেপির উসকানি এবং মদত আছে বলে মনে করছে শাসকদলের নেতৃত্বরা। বিজেপি কুড়মি সমাজের মানুষদের উসকিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি তৃণমূলের। রাজ্যের জল অনুসন্ধন এবং উন্নয়ন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, “এই ঘটনার পিছনে রয়েছে সিপিএম এবং বিজেপি। এটা পরিষ্কার তারা পরিকল্পিতভাবে উসকানি দিয়ে ঘটনা ঘটাতে মদত দিয়েছে।” অন্যদিকে, বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য অবনী ঘোষ বলেন, “তৃণমূল একটা মিথ্যাবাদীর দল। ওদের মিথ্যাশ্রী পাওয়া উচিত। ওই ঘটনার সাথে বিজেপির কোথাও কোন যোগ নেই। ধারেকাছে বিজেপি নেই। কুড়মিরা তাদের মতো আন্দোলন করছেন।”