রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: ফের ‘মানুষখেকো’ চিতাবাঘের (Leopard) হামলা। এবার ৭ বছরের বালককে টেনে নিয়ে গেল চিতাবাঘ। সোমবার রাতের দিকে আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) বীরপাড়ার ঢেকলাপাড়া চা বাগানের নেপানিয়া ডিভিশনের শ্রমিক বসতিতে ঘটে গেল এমন হাড়হিম করা ঘটনা। এলাকার লোকজন কিছুক্ষণ বাদেই পাশের ঝোপ থেকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় বালকটিকে উদ্ধার করে বীরপাড়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত (Death) বলে ঘোষণা করেন।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চিতাবাঘের শিকার মৃত বালকের নাম সানি ওরাওঁ। এর আগে ২৭ আগস্ট ফালাকাটার (Falakata)জটেশ্বরে প্রায় একই সময়ে এক বৃদ্ধাকে টেনে নিয়ে মুন্ডু ছিঁড়ে নেয় চিতাবাঘ। এরপর বনদপ্তরের তরফে এলাকায় খাঁচা বসানো হয়। এছাড়াও চিতাবাঘের গতিবিধি জানতে চারটি গোপন ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। কিন্তু চিতাটি ধরা দেয়নি। এমনকি ক্যামেরাতেও তাকে দেখা যায়নি। সোমবার সানি ওরাওঁ-কে টেনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার পর বিভিন্ন মহলের সন্দেহ, ওই ‘মানুষখেকো’ চিতাবাঘ চা বাগান হয়ে জটেশ্বর সংলগ্ন বীরপাড়ায় পাড়ি দিয়েছে।
[আরও পড়ুন: জি-২০ সম্মেলনের যৌথ ঘোষণাপত্র, বৈঠক শেষে প্রথমবার মুখ খুলল চিন]
পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, সোমবার সন্ধেবেলা বাড়ির বাইরে শৌচকর্মের জন্য বেরিয়েছিল সানি। শৌচকর্ম সেরে বাড়ির কলে হাত-মুখ ধুতে গেলেই চিতাবাঘটি সানির ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে টেনে নিয়ে যায় জঙ্গলের দিকে। সেসময় তার বাবা সুনীল ওরাওঁ বাড়িতেই ছিলেন। তিনি ঘটনাটি দেখে চিৎকার করতে শুরু করলে আশপাশের মানুষজন বেরিয়ে আসেন। সকলের তাড়া খেয়ে ছেলেটিকে কিছুটা দূরে ঝোপের মধ্যে ফেলে পালিয়ে যায় চিতাবাঘটি। পরে স্থানীয়রা চিতাবাঘে খুবলে খাওয়া সানিকে উদ্ধার করে বীরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় সানির। মৃত স্থানীয় ঢেকলাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ কুজুর বলেন, “এভাবে চিতাবাঘের হামলায় শিশুর মৃত্যু হবে, আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। ঘটনার কথা মনে পড়লেই গা শিউরে উঠছে। বনদপ্তরকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
[আরও পড়ুন: মোদি-সৌদি যুবরাজের কৌশলগত বৈঠক, শক্তি, প্রতিরক্ষায় পারস্পরিক সহযোগিতার আশ্বাস]
এদিনের ঘটনাস্থলের কাছেই জলপাইগুড়ি বনদপ্তরের জঙ্গল। জলপাইগুড়ি বনদপ্তরের ডিএফও বিকাশ ভি বলেন, “দুঃখজনক ঘটনা। ওই এলাকায় লেপার্ড ধরতে খাঁচা পাতা হবে। আমাদের আধিকারিকরা হাসপাতালে রয়েছেন। মৃত শিশুর পরিবারের পাশে আছি আমরা। চা বাগানে লেপার্ডের হামলা থেকে সকলকে সুরক্ষিত রাখতে আমরা নিয়মিত প্রচার চালাচ্ছি।” উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে চিতাবাঘের হামলায় পরপর মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালের স্মৃতি আবার ফিরে আসছে। জঙ্গল লাগোয়া চা বাগান জুড়ে এখন শুধু চিতাবাঘের আতঙ্ক।