সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মাথা নিঁচু করে নিপুন হাতে দুর্গার ছৌ মুখোশে তুলি দিয়ে রঙের প্রলেপ দিচ্ছেন জন্মেঞ্জয়। পাশেই আরেকটি ছোট্ট বিপনীতে সিক্স, সেভেনে পড়া পড়ুয়ারাও তার, কাগজ ইত্যাদি সহযোগে ছোট্ট দুর্গার অবয়ব তুলে ধরতে ব্যস্ত। সেখানেই আরেকটি মুখোশ ঘরে সারি দিয়ে সাজানো কথাকলি স্টাইলে দুর্গা। আগমনী গানে কাশ ফুল দুলিয়ে মা উমা আসছেন চড়িদায়। তাই দুর্গার রঙবাহারি মুখোশে সেজে উঠেছে অযোধ্যাপাহাড়তলির এই গ্রাম। কিন্তু ছৌ মুখোশ গ্রাম চড়িদাকে যেন অদ্ভুত বিষন্নতা গ্রাস করেছে। ‘শক্তিরূপেন সংস্থিতা’র একের পর এক মুখোশ গড়েও মনমরা তারা। পুজোয় যে ছৌ নাচের থিমের কোনও বরাতই পায়নি এই মুখোশ গ্রাম।
[আরও পড়ুন: আগমনি ফটোশুটে মজেছে জেন-ওয়াই, কদর বাড়ছে ফটোগ্রাফারদের]
পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে বাঘমুন্ডির ছৌ মুখোশ গ্রাম চড়িদা। এই চড়িদাই পুরুলিয়ার ছৌ নাচের আঁতুড়ঘর। বীর রসের ছৌ নেচে এই গ্রামের শিল্পী গম্ভীর সিং মুড়া পদ্মশ্রী পান। সেই থেকে শুধু এদেশ নয়, বিদেশও জানে এই গ্রামকে। ছৌ-এর এই পীঠস্থানেই মুখোশ তৈরি করে হস্তশিল্পীরা আজ নজর কেড়েছেন দেশ-বিদেশে। ফলে ছৌ নৃত্য ও ছৌ মুখোশের হাত ধরেই আর্থ-সামাজিক অবস্থা বদলেছে চড়িদার। তবে পুজোর সময় ফি বছর তাদের যে ব্যবসা হয় এবার তাতে ভাটা। তাই মন ভাল নেই চড়িদার। ছোট-ছোট দুর্গার মুখোশ তৈরি করা জন্মেঞ্জয় সূত্রধর বলেন, “প্রায় ফি বছরই আমরা পুজোর সময় মণ্ডপ সাজাতে বরাত পাই। কলকাতা-শহরতলী এমনকী ঝাড়খণ্ড থেকেও কাজের সুযোগ আসে। কিন্তু এবার কোনও বরাতই মেলেনি। তাই এই ছোট-ছোট দুর্গার মুখোশগুলো তৈরি করে রাখছি। যদি পুজোর সময় বেড়াতে এসে পর্যটকরা এই মুখোশ কেনেন।”
[আরও পড়ুন: রূপান্তরিত অ্যানি এবার দুর্গা, জীবনের সেরা চ্যালেঞ্জ ভারতসুন্দরীর]
চড়িদার অধিকাংশ মুখোশ ঘরেই এখন একশো থেকে একশো কুড়ি টাকার এই ছৌ মুখোশ বানাচ্ছেন শিল্পীরা। পুজোয় বরাত না পাওয়ায় বড় মুখোশ পড়েই রয়েছে। কোনওটা আবার সামান্য রং করা হলেও সাজানো হয়নি। কোনওটা স্রেফ কাঁচা অবস্থাতেই রয়েছে। পড়েনি রঙের প্রলেপও। এই গ্রামের আরেক হস্তশিল্পী গৌতম সূত্রধরও বলেন, “পুজোর বাজার এবার এমন মন্দা যাবে তা ভাবতে পারিনি। একটা বরাতও এল না।” পুজোর আগে কবে যে এমন ছৌ মুখোশ বিক্রিতে মন্দা দেখেছিল তা মনে করতে পারছে না শিল্পী গম্ভীর সিং মুড়ার এই গ্রাম। আরেক শিল্পী শুভম সূত্রধর বলেন, “পুজোয় পরিবারের সকলকে যে কীভাবে নতুন জামা-কাপড় তুলে দেব ভাবতে পারছি না। আসলে এবার মনে হয় ছৌ নাচের থিমে সেভাবে মণ্ডপই হচ্ছে না। তাই এমন অবস্থা।” মহিষাসুরমর্দিনী ছৌ পালায় শিল্পীদের অনুশীলনে ভেসে আসছে গান। কিন্তু সেই গানেও যেন বিষাদের সুর।
ছবি: অমিত সিং দেও
The post পুজোয় জোটেনি বরাত, ছৌ গ্রাম চড়িদাকে গ্রাস করেছে অদ্ভুত বিষণ্ণতা appeared first on Sangbad Pratidin.
