রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: বিরোধী পরিসর দখল করতে মরিয়া সিপিএম (CPM)। বিজেপিকে পিছনে ফেলতে আন্দোলনের স্ট্র্যাটেজিতেও বদল করছে আলিমুদ্দিন। স্থানীয় কোনও ইস্যু পেলেই তা নিয়ে তৎক্ষণাৎ রাস্তায় নেমে পড়তে হবে। প্রয়োজনে সেই আন্দোলনকে জঙ্গি আন্দোলনের রূপ দিতে হবে। স্থানীয় জ্বলন্ত ইস্যু হাতে পেলে এরিয়া বা জেলা কমিটির উপর নির্ভরশীল না থেকে শাখার নেতাদেরই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। বিরোধী পরিসর কোনওভাবেই বিজেপিকে (BJP) ছাড়া যাবে না। নিচুতলায় আন্দোলনের স্ট্র্যাটেজি বদলের এই নির্দেশ রাজ্য কমিটির তরফে পৌঁছে গেলেও একটাই প্রশ্ন কিন্তু ঘুরপাক খাচ্ছে পার্টির অন্দরে। জঙ্গি আন্দোলনই পথ, এই স্ট্র্যাটেজিতে কি আদৌ ভোট বাড়বে? একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ‘শূন্য’ আসনের ক্ষত কি মুছবে?
এলাকায় রাজনৈতিক কোনও ঘটনা, জনগণের স্বার্থ বিষয়ক কোনও ইস্যু সামনে এলে শাখা কমিটির নেতাদের সেটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। স্থানীয়দের সংগঠিত করতে হবে সেই আন্দোলনে। এতদিন কোনও আন্দোলনে নামার আগে এরিয়া কমিটি বা জেলা কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করতে হত। কিংবা কোনও ঘটনা ঘটলে সেটা নিয়ে স্মারকলিপি দিয়েই কর্মসূচি শেষ হয়ে যেত। এবার থেকে রাস্তায় নেমে ঝাঁজ বাড়াতে হবে আন্দোলনের। প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাতের পথে যেতে হবে। প্রয়োজনে আইন অমান্য করতে হবে। পথ অবরোধ, বিক্ষোভ দেখানো, গ্রেপ্তারও হতে হবে।
[আরও পড়ুন: অফিস টাইমে ফের মেট্রো বিভ্রাট, ব্যাহত পরিষেবা, চূড়ান্ত ভোগান্তির শিকার যাত্রীরা]
পার্টি নেতৃত্ব মনে করছে, জঙ্গি আন্দোলনই পথ। এতেই সাফল্য আসবে। সম্প্রতি সন্দেশখালির ঘটনা নিয়েও বসিরহাটে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি চলে সিপিএম নেতা-কর্মীদের। তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বের মধ্যে ডিওয়াইএফআইয়ের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক আভাস রায়চৌধুরি, ডিওয়াইএফআইয়ের বর্তমান রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা আন্দোলন কর্মসূচিতে গ্রেফতার হয়ে জেলেও গিয়েছিলেন। কাজেই সিপিএম নেতৃত্ব এখন মনে করছে নিরামিষ আন্দোলনে লাভ নেই, আমিষ আন্দোলন দরকার। সিপিএম নেতৃত্বের কথায়, লাগাতার আন্দোলনে থাকা আর জনসংযোগই হচ্ছে পার্টির প্রধান কাজ। আর নিচুতলায় এই কাজকে আরও বেশি করে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সংগঠিত করতে হবে।
সম্প্রতি পার্টি চিঠিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় ইস্যুগুলোকে চিহ্নিত করা ও নাছোড় আন্দোলনের সম্ভাবনা থাকলে সেদিকে পার্টি ও গণফ্রন্ট অগ্রসর হতে পারলে তাকে কেন্দ্র করে জেলা, রাজ্য, এমনকী সর্বভারতীয় আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে। নেতৃত্বের দক্ষতা ও সামর্থ্যের উপরও এই আন্দোলনের সাফল্য অনেকটা নির্ভর করে। বুথে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হলেও আকাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসছে না বলেও পার্টি চিঠিতে স্বীকার করা হয়েছে। একইসঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামের দুর্বলতাগুলিকে চিহ্নিত করে তার থেকে মুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে অগ্রসর হতে হবে। পার্টির তরফে নিচুতলায় সর্বস্তরের কর্মী ও সমর্থকদের বলা হয়েছে, ফেসবুকে শুধু সরব না হয়ে একেবারে মাঠে নেমে আন্দোলনে অংশ নিতে হবে। লোকসভা ভোটের (Loksabha Election 2024) আগে আন্দোলনের স্ট্র্যাটেজিতে বদল এনে ঝাঁজ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আলিমুদ্দিন নিলেও প্রশ্ন সেই একটাই থেকে যাচ্ছে, ভোট কতটা বাড়বে?