দেবব্রত মণ্ডল, জয়নগর: সংসদীয় গণতন্ত্রের শক্তি কেমন, তা নিয়ে তর্কবিতর্ক চলতেই পারে। তবে যুগ যুগ ধরে SUCI-এর শক্ত জমি যে জয়নগর, তা চরম বাস্তব। দোসর বামশরিক আরএসপি (RSP)। ১০ বছর আগে পর্যন্তও জয়নগর (Jaynagar) লোকসভা কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে আরএসপি বা বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দলের দখলে ছিল। ২০১১ সালে রাজ্য জুড়ে বাম শিবিরে ধস নামলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন লাগোয়া কেন্দ্রে লাল পতাকা উড়েছে। ২০১৪ সাল থেকে জয়নগরের দখল নিতে সক্ষম হয়েছে তৃণমূল (TMC)। তৃণমূলের দীর্ঘদিনের বিধায়ক গোবিন্দচন্দ্র নস্করের মেয়ে প্রতিমা মণ্ডলের হাত ধরে। তিনিই দুবার এখানকার সাংসদ হয়েছেন। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) তাঁর কাছে হ্যাটট্রিকের হাতছানি। এবারও তৃণমূলের প্রতীকে লড়ছেন প্রতিমা। পাশাপাশি এই কেন্দ্রে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির অশোক কাণ্ডারী, আইএসএফের মেঘনাথ হালদার। লড়াইয়ে রয়েছেন SUCI প্রার্থীও। বামেরা এখনও প্রার্থী ঘোষণা না করলেও আরএসপি যে নিজেদের শক্ত ঘাঁটিতে এবারও লড়বে, তা নিশ্চিত। কেমন হতে চলেছে জয়নগর কেন্দ্রের এবারের লড়াই, দেখে নেওয়া যাক।
রাজনৈতিক ইতিহাস
১৯৬২ সাল থেকে তফসিলি (SC) কেন্দ্র জয়নগরে লোকসভা ভোট হচ্ছে। প্রথমবার এখানে বাজিমাত করেছিল কংগ্রেস। পরেশনাথ কয়াল সাংসদ হন। কিন্তু ১৯৬৭-র ভোটে কংগ্রেসের থেকে এই কেন্দ্র ছিনিয়ে নেয় SUCI. সাংসদ হন চিত্ত রায়। তার পরবর্তী দুটি লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও ভারতীয় লোক দলের পর এখানে ধীরে ধীরে আধিপত্য বিস্তার করে বামফ্রন্ট শরিক আরএসপি (RSF)। পর পর ৮ বার জয়নগর কেন্দ্র থেকে সাংসদ হন আরএসপি-র সনৎকুমার মণ্ডল। ২০০৯ সালে SUCI-এর প্রার্থী তরুণ মণ্ডল সাংসদ হন। তার পর অবশ্য কেন্দ্রটি চলে যায় তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে।
জনবিন্যাস
জয়নগর কেন্দ্রটি তফসিলি সংরক্ষিত। এখানে হিন্দুদের সংখ্যা মোটামোটি ৬৪ শতাংশ, তার মধ্যে ৪১ শতাংশ তফসিলি। মুসলিম ভোটার ৩৬ শতাংশ। জয়নগরের মোট ভোটার ১৮ লক্ষ ৪০ হাজার ৮৭৬। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৯ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫১৭। মহিলা ৯ লক্ষ ১ হাজার ২৬৭। উভলিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ১০০।
[আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটের প্রচারে ভিন রাজ্যে মমতা, কবে কোথায় সফর?]
বিধানসভা কেন্দ্র
জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র -
- জয়নগর
- গোসাবা
- বাসন্তী
- মগরাহাট পূর্ব
- ক্যানিং পূর্ব
- ক্যানিং পশ্চিম
- কুলতলি
অতীতের নির্বাচনী ফলাফল
জয়নগরের রাজনৈতিক জমি মূলত আরএসপি-র। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত টানা ৮ বার আরএসপি-র সনৎ মণ্ডল এখানকার সাংসদ ছিলেন। এর বাইরে SUCI এত বছর ধরে এখানে লড়াইয়ে রয়েছে। যে দলকে নিয়ে সে অর্থে চর্চা হয় না, চমক দেওয়ার তাড়না নেই, শুধু ভিতরে ভিতরে সংগঠনের জোরে প্রতিবার নির্বাচনী ময়দানে নামে শিবদাস ঘোষের দল। প্রার্থীরা জ্বলন্ত সমস্ত ইস্যু নিয়ে জনতার দরবারে ভোট প্রার্থনা করেন। ১৯৬৭ ও ২০০৯ সালে মাত্র দুবার SUCI সাংসদ পেলেও লড়াইয়ের জমিতে বরাবর তারা সক্রিয়। ২০১৪ সাল থেকে জয়নগরের সাংসদ তৃণমূলের প্রতিমা মণ্ডল। একুশের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়নগরের সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, বিধানসভায় ঘাসফুলেরই আধিক্য। মাঝেমধ্যে এখানে যুব তৃণমূল ও তৃণমূলের মধ্যে চোরাগোপ্তা সংঘাত হলেও তা নির্বাচনে তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ভোটের মুখে রাইমাকে হুমকি! ‘সুচিত্রার নাতনি হয়েও প্রোপাগান্ডা ছবিতে কেন?’ চিন্তায় সেন পরিবার]
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের লড়াই
তৃণমূলের (TMC) প্রার্থী গত দুবারের বিদায়ী সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল। বিজেপির তরফে লড়ছেন ডাক্তার অশোক কাণ্ডারী। বামেদের তরফে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে সমরেন্দ্র মণ্ডলের। আইএসএফ প্রার্থী মেঘনাথ হালদার। আর SUCI-এর হয়ে লোকসভা ময়দানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নিরঞ্জন নস্কর। তবে এতজনের লড়াইয়ের মাঝে এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী প্রতিমা নস্কর। তবে ভোট কাটাকাটির খেলায় আইএসএফ এবং SUCI কে, কাকে, কতটা বেগ দেয়, সেটাই দেখার। আগামী ১ জুন, শেষ দফায় ভোট জয়নগর কেন্দ্রে।