গোবিন্দ রায়, বসিরহাট: চোখে-মুখে আতঙ্ক, ক্লান্তি আর অনিশ্চয়তার ছাপ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরতে শুরু করেছেন এ দেশের বহু নাগরিক। শনিবার বসিরহাট মহকুমার ঘোজাডাঙা আন্তর্জাতিক সীমান্তে সেই উদ্বেগজনক ছবিই ধরা পড়ল। ভোর থেকেই সীমান্তের ওপারে অপেক্ষমাণ মানুষের লম্বা লাইন, হাতে সামান্য ব্যাগপত্র, কারও কোলে শিশু। সব মিলিয়ে এক চাপা উৎকণ্ঠার আবহ তৈরি হয়। ফিরে আসা মানুষদের অনেকেই জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অশান্ত পরিস্থিতি, নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কের জেরে সেখানে থাকা কার্যত কঠিন হয়ে উঠেছিল।
কেউ কাজের সূত্রে, কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে বা ব্যবসায়িক কারণে ওপারে গিয়েছিলেন। পরিস্থিতি ঘোরালো হতেই দ্রুত দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন তাঁরা। সীমান্তে দাঁড়িয়ে কারও মুখে স্বস্তির নিশ্বাস, আবার কারও চোখে জল। দীর্ঘ অপেক্ষা ও দুশ্চিন্তার পর অবশেষে নিজের দেশে ফেরার তৃপ্তি। ঘোজাডাঙা সীমান্তে এদিন বিএসএফ ও ইমিগ্রেশন দপ্তরের তরফে কড়া নজরদারি ছিল। সমস্ত যাত্রীর বৈধ নথিপত্র খতিয়ে দেখা হয়। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যেককে নিয়ম মেনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরিচয় যাচাইয়ের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও ঝুঁকি এড়াতেই এই সতর্কতা। সীমান্তে বাড়তি পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ছিল, যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না তৈরি হয়। ফিরে আসা একাধিক নাগরিকের কথায় উঠে এসেছে ভয়ের অভিজ্ঞতা।
ব্যাগপত্র নিয়ে অপেক্ষা।
কেউ বলছেন, হঠাৎ করেই চারপাশের পরিস্থিতি বদলে যায়। রাস্তাঘাটে আতঙ্ক, দোকানপাট বন্ধ, চলাচলে অসুবিধা। আবার কেউ জানিয়েছেন, পরিবার-পরিজনের চাপেই দ্রুত দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের নিয়ে থাকা পরিবারগুলির মধ্যে উদ্বেগ ছিল সব চেয়ে বেশি। সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারাও এই দৃশ্য দেখে চিন্তিত। তাঁদের মতে, এমন পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চললে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে। একই সঙ্গে মানবিক দিকটি মাথায় রেখে দ্রুত ও সুশৃঙ্খলভাবে নাগরিকদের ফেরানোর ব্যবস্থা করার দাবি উঠেছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতির উপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে দেশে ফেরা নাগরিকদের কোনও রকম হয়রানির মুখে পড়তে না হয়।
