সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: ইদের উৎসবে চাই-ই চাই সিমুই। এবার ইদে ব্যাপক চাহিদা মগরাহাটের সিমুই আর লাচ্চার। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জোগান দিতে প্রতিদিন সুস্বাদু স্বাদের কেজি কেজি কাঁচা ও ভাজা সিমুই, লাড্ডু আর লাচ্চা তৈরি করেছেন কারিগররা। এখনও জোরকদমে চলছে সিমুই তৈরির কাজ। উপকরণ বলতে ময়দা, জল, তেল আর ডালডা। প্রথমে ময়দা মেখে যন্ত্রের জালিতে ফেলে কাঁচা সিমুই তৈরি করছেন কারখানার শ্রমিকরা। তারপর তেল ও ডালডায় ভাজা হচ্ছে সেই কাঁচা সিমুই। দক্ষ হাতের পাকে প্রস্তুত হচ্ছে সিমুই, লাড্ডু আর লাচ্চা। এরপর প্যাকেটবন্দি হয়ে সেসব চলে যাচ্ছে নামখানা, কাকদ্বীপ, সাগর, রায়দিঘি, জয়নগর, ডায়মন্ড হারবার, আমতলা ও বারুইপুরের বাজারে।

মগরাহাটের বেলাড়িয়ায় সিমুই ও লাচ্চা তৈরির কারখানায় কারিগররা বেশিরভাগই এসেছেন বিহার ও উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকে। নাওয়াখাওয়া ভুলে নাগাড়ে কাজ করে চলেছেন তাঁরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, মগরাহাট, দেউলা এলাকা থেকেও এসেছেন শ্রমিকরা। সকলেই ব্যস্ত সিমুই তৈরির কাজে। তিন-চার বছর ধরে মগরাহাটে সিমুই তৈরির কারখানায় কাজ করছেন আশিফুল হালদার। তিনি লাড্ডু তৈরির শ্রমিক। আশিফুল জানান, দিনে প্রায় ৫০০ কেজি লাড্ডু তৈরি হচ্ছে।
আর এক কারিগর সোহন হালদার বলেন, তাঁদের এখন প্রচন্ড ব্যস্ততা। সকাল ৫ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। কারণ এবছর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সিমুইয়ের। আর লাড্ডু বা লাচ্চার চাহিদা তো রয়েইছে। কারিগর ও শ্রমিক মিলিয়ে কারখানার ৪০-৪৫ জন কর্মী প্রতিদিন তৈরি করছেন কেজি কেজি মোটা সিমুই, সরু সিমুই, এক নম্বর ও দেড় নম্বর সিমুইয়ের মত প্রায় পাঁচ রকমের সিমুই, ছোট ও বড় আকারের লাচ্চা আর লাড্ডু। সবই তৈরি হচ্ছে পাইকারি খদ্দেরদের অর্ডার অনুযায়ীই।
কারখানার মালিক মহম্মদ সাহাবুদ্দিন মোল্লা জানান, ময়দা এবং তেল ও ডালডার দাম বেড়ে যাওয়ায় এবছর উৎপাদিত দ্রব্যের কিলো প্রতি ১০-১২ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে। তাঁর কারখানায় তৈরি কাঁচা সিমুই প্রতি কিলো ৪৬ টাকা, ভাজা সিমুই কেজি প্রতি ৫৪ টাকা, লাচ্চা ১০৫-১১০ টাকা কেজি প্রতি দরে দেদার বিকোচ্ছে। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জোগানও বেড়েছে। উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকে এসেছেন সিমুইয়ের কারিগর শিউপ্রসাদ। তিনি জানান, এবার উত্তরপ্রদেশ থেকে মগরাহাটের কারখানায় তাঁরা এসেছেন মোট ১২ জনের দল। দেড় -দু'মাস আগে থাকতেই তাঁরা হাজির হয়েছেন মরসুমি পাখির মতো। শিউপ্রসাদ জানান, বছরের অন্য সময় চাষবাস করেন। ইদের আগে প্রতি বছরই মগরাহাটের সিমুই কারখানায় ডাক পড়ে তাঁর। সে ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকা যায় না। প্রতিদিন একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে খুশির উৎসবের আগের দিন সিমুইয়ের চাহিদা তুঙ্গে। চূড়ান্ত কর্মব্যস্ততা তাই এখন বেলাড়িয়ার সিমুই কারখানায়।