shono
Advertisement

লকডাউনের মধ্যেই নতুন আতঙ্ক, মাওবাদী পোস্টার পড়ল পুরুলিয়ায়

তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। The post লকডাউনের মধ্যেই নতুন আতঙ্ক, মাওবাদী পোস্টার পড়ল পুরুলিয়ায় appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:07 PM Apr 03, 2020Updated: 09:41 PM Apr 03, 2020

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: লকডাউনের মধ্যেই ‘মাওবাদী’ নামাঙ্কিত পোস্টারে উনিশ বছর আগের হাড় হিম করা স্মৃতি ফিরে এল বাঁশগড়ে। পুরুলিয়ার কোটশিলার একেবারে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পাহাড়-জঙ্গলাকীর্ণ বাঁশগড় থেকে বৃহস্পতিবার মাও হুমকি পোস্টার উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় কোটশিলার থানার পুলিশ গোপনীয়তা অবলম্বন করলেও শুক্রবার তা চাউর হয়ে যায়। এই বাঁশগড়েই ‘জোতদার’ জগদীশ তেওয়ারিকে নকশাল সংগঠন এমসিসি ২০০২ সালের ২৬ নভেম্বর তার পরিবারের সদস্যদের সামনেই দুর্গা মন্দিরের হাড়ি কাটে বলি দেয়। বাড়ি থেকে আগ্নোয়াস্ত্র-সহ নানান জিনিসপত্র লুট করে ধরিয়ে দেয় আগুন। তারপরই ওই পরিবার ওখান থেকে চলে যায়। ফলে দোতলা বাড়ির এক অংশ পরিত্যক্ত হয়েই রয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পরিত্যক্ত বাড়ি ও লাগোয়া জমি গত বছর আনন্দমার্গীরা ওই পরিবারের কাছ থেকে ক্রয় করেন। যদিও এই বিষয়ে আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ পরিষ্কার করে কিছু বলতে চায়নি। সাদা কাগজের ওপর লাল কালিতে লেখা পোস্টারে হিন্দি ভাষায় হুমকি দিয়ে লেখা রয়েছে, এই জমি মাওবাদীদের। এই জমিতে ঘর বানাতে হলে মাওবাদী পার্টিকে পাঁচ দিনের মধ্যে এক লক্ষ টাকা না দিলে সেই ঘর উড়িয়ে দেওয়া হবে। মাওবাদীদের এই হুমকি পোস্টারের পরেই ঝাড়খণ্ড লাগোয় বিস্তীর্ণ বাঁশগড়, বেলামু, খটঙ্গা, চিতমু, বড়রোলা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তবে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস. সেলভামুরুগন বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। 

[ আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় শামিল, ভাঁড় ভেঙে মুখ্যমন্ত্রীর তহবিলে আর্থিক সাহায্য ভাইবোনের ]

গত ২৮ মার্চ এই কোটশিলা থানা এলাকার বড়রোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একইভাবে পুলিশের চরদেরকে হুমকি দেওয়া মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার মেলে। তার চার দিনের মাথায় বাঁশগড়ে ফের মাও হুমকি পোস্টার মেলায় চাপে পুলিশ। কারণ বড়রোলা গ্রামের পোস্টারের যেমন কিনারা হয়নি। তেমনই কিনারা হয়নি মাসখানেক আগে ঝালদা এলাকা থেকে পাওয়া মাও পোস্টারেরও। তবে বাঁশগড়ের এই পোস্টারকে ঘিরে প্রাথমিকভাবে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। পোস্টারের তলায় ডান দিকে লেখা রয়েছে, ‘সিপিএম, এনসিসি, ডব্লিউ বি।’ মাওবাদীরা সাধারণত পোস্টারের নিচে লেখে, ‘সিপিআই (মাওবাদী)। তবে তার উলটো দিকেই লেখা আছে, ‘নিবেদক মাওবাদী’। আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের জনসংযোগ সচিব দিব্যচেতনানন্দ অবধূত বলেন, “এই পোস্টারের বিষয়ে আমরা পুলিশকে জানাব। তবে জমি কেনার বিষয়ে এখনই কোন মন্তব্য করব না।” এই বাঁশগড় থেকে কিছুটা দূরে এই সংগঠনের সদর দপ্তর জয়পুরের পুনদাগ বা আনন্দনগর।

বাঁশগড় যাওয়ার পথে বেলামু গ্রামই শেষ জনপদ। তারপর যেখানে পিচ রাস্তা শেষ হচ্ছে সেখানে মাইল ফলকে লেখা ‘বাঁশগড় শূন্য।’ সেখান থেকে অর্ধসমাপ্ত কালভার্ট পার হয়ে প্রায় পাঁচশ মিটার দূরেই ওই অভিশপ্ত নিহত জগদীশ তেওয়ারির বাড়ি। চারপাশ শুধু জঙ্গল। আর পাহাড়ের লম্বা রেঞ্জ। এখানে পা রাখলেই গা ছমছম করে ওঠে। শরীরে যেন কাঁটা দেয়। ‘মাওবাদী’ নামাঙ্কিত এই পোস্টার যেন প্রায় দু’দশক আগের ভয়ার্ত স্মৃতিকে আবার ফিরিয়ে আনল। এই এলাকার বয়স্ক মানুষজন বলেন, ওই ২৬ নভেম্বর বিকাল দিকে ঝাড়খন্ড থেকে পাহাড় ডিঙিয়ে প্রায় একশো জনের বেশি নকশাল সংগঠন এমসিসির নেতা-কর্মীরা ওই ‘জোতদার’ বাড়ির ওপর চড়াও হয়। জগদীশ তেওয়ারিকে বাড়ি থেকে টেনে তাদের ছেলেদের সামনেই হাড়িকাটে বলি দেয়। রক্তে ভেসে যায় ওই দোতালা বাড়ির মন্দিরের চারপাশ। ওই নকশাল নেতারা সেইসময় জানিয়ে যায়, ওই বাড়িতে তারা সংগঠনের কার্যালয় তৈরি করবে। তারপর থেকেই এই এলাকায় আনন্দমার্গীদের একটি দোতালা বাড়িতে বিএসএফের ক্যাম্প বসে। কিন্তু এখন আর সেই শিবির নেই। ফলে এই পোস্টার আবার নতুন করে আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে এই পাহাড়তলীতে।

ছবি: অমিতলাল সিং দেও

[ আরও পড়ুন: দিনমজুরি বন্ধ, লকডাউনে রোজগারের বিকল্প রাস্তার ধারে সবজি বিক্রি ]

The post লকডাউনের মধ্যেই নতুন আতঙ্ক, মাওবাদী পোস্টার পড়ল পুরুলিয়ায় appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement