নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: প্রাইভেট টিউটরের দেওয়া বিজ্ঞানের হোমওয়ার্ক করে আনেনি বছর তেরোর কিশোর। বাড়িতে গেলে বাবা বকতে পারেন। এই ভয়ে টিউশন থেকেই পালিয়ে গেল সৌম্যদীপ। সন্ধে গড়িয়ে রাত নামলেও মা-মরা ছেলে বাড়ি না ফেরায় থানায় মিসিং ডায়েরি করেন বাবা প্রদীপ দাস। ছেলের চিন্তায় যখন দিশেহারা প্রদীপবাবু আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করে ক্লান্ত, সেই সময়ই বনগাঁ স্টেশনের আরপিএফ থেকে এল ফোন। আরপিএফের ফোন পেয়ে প্রথমটায় চমকে গিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। পরে ছেলের খবর পেয়ে মনে আশার সঞ্চার হয়। আরপিএফ কর্মীদের পরামর্শে এরপর বনগাঁ থেকে ছেলেকে নিয়ে নিউ বারাকপুরের বাড়িতে ফেরেন ওই ব্যবসায়ী।

প্রিন্টিং প্রেসের মালিক প্রদীপ দাসের সংসারে নিজের বলতে আছে ওই ছেলেই। বছর চারেক আগে মারণ রোগে স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। পরিজনদের অনেকেই ফের বিয়ের পরামর্শ দিলেও ছেলের মুখের দিকে চেয়ে সেসব পাত্তা দেননি তিনি। স্ত্রী যখন চলে যান, সৌম্যদীপ চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। মাকে হারিয়ে বাবাকেই আঁকড়ে ধরে সে। দেখতে দেখতে চার বছর কেটে গিয়েছে। মাতৃবিয়োগ ভুলে শৈশবেই অনেকখানি বড় হয়ে গিয়েছে সৌম্যদীপ। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। সারাদিন ছেলেকে চোখে চোখে রাখা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার পড়া না পারার ভয়ে মধ্যমগ্রামের মামাবাড়িতে পালিয়ে গিয়েছিল ওই কিশোর। তাই প্রথমটায় ছেলেকে দেখতে না পেয়ে শ্বশুরবাড়িতেই ফোন করেছিলেন প্রদীপবাবু। কিন্তু সেখান থেকে যখন জানানো হয় সৌম্যদীপ আসেনি। তখনই বিনা মেঘে যেন বজ্রপাতের আভাস পেয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। স্ত্রীকে হারানোর দুঃখ ভুলে যখন একটু একটু করে সামলে উঠছেন, ঠিক সেই সময় সৌম্যদীপের নিখোঁজ হওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলেন তিনি। আরপিএফের সৌজন্য ফের তাঁর মুখে হাসি ফুটেছে।
[হায় কপাল! বিধায়কের মায়ের শ্রাদ্ধের কার্ডও জাল]
ছেলেকে ফিরে পেয়ে আরপিএফ কর্মীদের ধন্যবাদ দিতে ভোলেননি প্রদীপ দাস। তিনি বলেন, ‘আরপিএফ ছিল বলে ছেলেকে ফিরে পেলাম। নাহলে বিপদ হয়ে যেত।’ আরপিএফের তরফে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে উদ্দেশ্যহীন ভাবে বনগাঁ স্টেশনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল ওই কিশোর। বেশ কিছুক্ষণ নজরদারি করার পর আরপিএফ কর্মীদের সন্দেহ হয়। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে আরপিএফ। এদিকে রাত নামতেই ভয়ে মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল কিশোরের। বাবার ভয় ছাপিয়ে তখন বাড়ি ফিরতে না পারার ভয়ে প্রায় কেঁদে ফেলে আর কি। আরপিএফ কর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে সবকিছু খুলে বলে। জানায়, নিউ বারাকপুর থেকে ট্রেনে চেপেই বনগাঁতে চলে এসেছে। এরপর ওই কিশোরের থেকেই বাবা প্রদীপ দাসের ফোন নম্বর জেনে তাঁকে খবর দেওয়া হয়। সকালেই বনগাঁয় গিয়ে ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছেন ওই ব্যবসায়ী।