সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ধ্বনির সংজ্ঞা বোঝানোর পরই বর্ণ কয় প্রকার তা ব্ল্যাকবোর্ডে লিখছিলেন শিক্ষক। তা দেখে পড়ুয়ারাও লিখতে শুরু করে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ। নবম শ্রেণির ক্লাস চলছিল। লেখা শেষ করে স্বরবর্ণের দু’ভাগ হ্রস্বস্বর ও দীর্ঘস্বর নিয়ে বিশদে আলোচনা শুরু করেন শিক্ষক। ঠিক তখনই তাল কাটে। কলম ছেড়ে সজোরে পায়ে চাপড় মারল পড়ুয়া। সবাই চুপ। কী হল? সেদিকে তাকাতেই চোখে পড়ল মশা। হ্যাঁ, মশা (Mosquitoes)। ক্লাসরুমের কোণা থেকে উঠে আসছে ঝাঁক ঝাঁক মশা! মঙ্গলবার এমনই অবস্থা দেখা গেল পুরুলিয়া জেলার একাধিক স্কুলে।
মারণ ভাইরাস কোভিড ১৯ (COVID-19) হানা দেওয়ার প্রায় কুড়ি মাস পর মঙ্গলবার স্কুলের দরজা খুলেছে। করোনাবিধি মেনেই ক্লাস শুরু করেছে রাজ্যের পড়ুয়ারা। পুরুলিয়া শহরের ক্ষেত্রেও তা অন্যথা হয়নি। কিন্তু মশার উপদ্রবে প্রথম দিনের ক্লাসেরই দফারফা। শিক্ষক-পড়ুয়া নির্বিশেষে সকলেই মশার হুলে বিদ্ধ। ছোট্ট প্রাণীর গুনগুন শব্দে ক্লাস করাই যেন দায় হয়ে যায়।
[আরও পড়ুন: নারদ মামলা: অন্তর্বর্তী জামিন নিতে আদালতে শোভনের সঙ্গে বৈশাখী, জামিন ফিরহাদ-মদনেরও]
দু’হাতে থাপ্পড় দিয়ে মশা মারবে নাকি ক্লাসরুমে বর্ণের পাঠ নেবে? তা ঠিক করেই উঠতে পারছিল না পড়ুয়ারা। প্রায় প্রত্যেক স্কুলের ক্লাসরুমেই মশা মারতে কামান দাগার মতো অবস্থা। শেষে মশা মারার ধূপ জ্বালিয়ে ক্লাস করার নির্দেশ দিতে হয়। পুরুলিয়া জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক বারিদবরন মিশ্র বলেন, “মশা যে এমন উৎপাত করতে পারে তা ভাবনার বাইরে ছিল। ক্লাসরুমে পাঠদানের জন্য সমস্ত প্রস্তুতিই নিয়েছিলাম। কিন্তু ঝোপঝাড় পরিষ্কার করার পর গুচ্ছ গুচ্ছ মশা যে ক্লাস রুমে বাসা বাঁধবে তা কে জানত!”
করোনা (Coronavirus) কালে স্কুল খোলার দ্বিতীয় পর্বে শুধু পুরুলিয়া জেলা স্কুল নয় এই শহরের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়েও মশার গুনগুনানিতে প্রথম দিনের ক্লাস খানিকটা এভাবেই মাটি হয়েছে। একই ছবি বাঘমুন্ডি থেকে বান্দোয়ানেও। পুরুলিয়া জেলা স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র সায়নদীপ পাল, স্বস্তিক গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “এত মশা এল কোথা থেকে সেটাই ভাবতে পারছি না! তবে ক্লাস শুরুর প্রথম দিকে সমস্যা হলেও মশা মারার ধূপ জ্বালানোয় আর সেভাবে অসুবিধা হয়নি।”
তবে এদিন ক্লাসরুমে দিনভর যেন মশা তাড়াতেই ব্যস্ত থাকতে হল ছাত্র থেকে শিক্ষককে। তা দেখে পুরুলিয়া শহরের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা সাহা বলেন, “পুরসভা থেকে স্কুল স্যানিটাইজ করে দিয়েছে। যতটা পারা গিয়েছে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করানো গিয়েছে। কিন্তু মশা মারার জন্য আলাদা স্প্রে তো করা হয়নি।” তাহলে কি এবার মশা মারতে কামনে দাগবে স্কুল?” পুরুলিয়ায় সুষ্ঠুভাবে ক্লাসরুম চালাতে মশা মারার ধোঁয়া দিতেই তোড়জোড় শুরু করেছে এই জেলার একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ।