সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ধর্ম নয়, মানবিকতাই শেষ কথা। দেখাল এক বর্ধমানের অজ গ্রাম।
আচমকাই পিতৃবিয়োগ হয় পূর্ব বর্ধমানের গলসির নতুনপল্লির লক্ষ্মণ মণ্ডলের। বাবা দুলাল মণ্ডলের (৭০) মৃত্যুতে দিশাহারা হয়ে পড়েন তিনি। দেহ সৎকার করতে খাটিয়া কাঁধে তোলারই যে পর্যাপ্ত লোক নেই! দিশাহারা অবস্থা। শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এলেন গ্রামেরই শেখ জিয়ারুল, শেখ কালু, জয়সীম মণ্ডল, লালন মণ্ডল, সাইফুল শেখরা। বাঁশ কেটে খাটিয়া তৈরি করা থেকে ফুলের ব্যবস্থা করলেন চাঁদা তুলে। আবার কাঁধে তুলে দেহ নিয়ে গেলেন শ্মশানে। সৎকারের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করলেন মুসলিম পড়শিরাই। দিকে দিকে ধর্মের নামে হানাহানি, দ্বেষের বিরুদ্ধে মানবতার বার্তা দিলেন এখানকার বাসিন্দারা। হিন্দুর দেহ কাঁধে তুলে শেষকৃত্য সম্পন্ন করে মুসলিম ভাইয়েরা বুঝিয়ে দিলেন মনুষ্যত্বই পরম ধর্ম। এই নিয়ে এখন জোর চর্চা গলসিজুড়ে। জেলাতেও।
[ আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তালা ভেঙে ওষুধ নিয়ে পালাল চোর, তদন্তে নেমে অবাক পুলিশ ]
রবিবার সকালে মৃত্যু হয় দুলালের। তিনি পেশায় বিড়ি শ্রমিক ছিলেন। তাঁর ছেলেও পেশায় দিনমজুর। বাবার মৃত্যুতে কীভাবে দেহ সৎকার করবেন, বুঝতে পারছিলেন না ছেলে। দেহ কাঁধে তুলে শ্মাশানে নিয়ে যাওয়ার মতো পাড়ায় রয়েছেন মাত্র দু’জন হিন্দু। চারজন না হলে কাঁধ দেবে কে? এই নিয়ে ভেবে দিশা পাচ্ছিলেন না লক্ষ্ণণ। শেষ পর্যন্ত জিয়ারুল-সাইদুলরাই সেই দায়িত্ব তুলে নেন নিজেদের কাঁধে। দেহ কাঁধে নিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে গেলেন নউলেশ্বর শ্মশাণে। সঙ্গী হয়েছিলেন আরও প্রায় ৬০ জন মুসলিম যুবক। শ্মশানে দেহ দাহ হওয়া পর্যন্ত ছিলেন তাঁরা। মুখাগ্নি অবশ্য লক্ষ্মণই করেছেন।
[ আরও পড়ুন: মানুষ মানুষেরই জন্য, রবিবাসরীয় দুপুরে ভবঘুরে অতিথিদের ভোজ খাওয়াল যুবকদল ]
লক্ষ্মণ বলেন, “বাবার মৃত্যুর পর শ্মশানে দেহ কীভাবে নিয়ে যাব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। আমরা মাত্র দু’জন। খাটিয়া তুলতে চারজনের প্রয়োজন। শেষ পর্যন্ত মুসলিম ভাইয়েরা এগিয়ে এসে সাহায্য করলেন। না হলে যে কী করতাম, জানি না।” লক্ষ্মণের প্রতিবেশী কল্পনা কর্মকার, শ্মশান কমিটির সম্পাদিকা মনামী দে’রা জানান, ওই এলাকায় মাত্র তিনঘর হিন্দু পরিবার। বাকি প্রায় ৩০০ পরিবার মুসলিম। বিপদে-আপদে সকলেই সকলের পাশে থাকে। এদিনও তাই হয়েছে। তাঁর কথায়, “এদিন মুসলিম ভাইয়েরা একজোট হয়ে দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করেছেন।” আর জিয়ারুলরা জানাচ্ছেন, “ওই মাত্র তিনঘর মাত্র হিন্দুর বসবাস। দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই। এই বিপদের দিনে পাশে না দাঁড়ালে আর কখন দাঁড়াব?”
The post ধর্মের ঊর্ধ্বে মানবতা, হিন্দুর দেহ সৎকার করলেন মুসলিম পড়শিরা appeared first on Sangbad Pratidin.
