অর্ণব দাস, বারাকপুর: নৈহাটির বড়মার অনলাইনের পুজোর নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা! নৈহাটি বড় কালী পুজো সমিতির তরফে শুক্রবার নৈহাটি থানায় এমনই অভিযোগ দায়ের হলে রাতেই কালপিটকে হুগলির রিষড়া ষষ্ঠীতলার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃতের নাম সুরজিৎ কুন্ডু। শনিবার ধৃতকে বারাকপুর আদালতে পেশ করা হলে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি নর্থ গণেশ বিশ্বাস বলেন, "ধৃত কতদিন ধরে এই প্রতারণা চালাচ্ছিল, কত টাকা প্রতারণা করছে তা জানতে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।" ধৃতের কাছ থেকে ল্যাপটপ-সহ ব্যাঙ্কের নথি উদ্ধার হয়েছে বলেই পুলিশ সূত্রে খবর। সেগুলি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
আর্থিক প্রতারণার দায়ে ধৃত সুরজিৎ কুণ্ডু
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১০১তম বর্ষের কালী পুজোয় লক্ষাধিক ভক্তের আগমনের অনুমান সহ রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ, বিদেশের বড়মার ভক্তদের পুজোর ব্যবস্থা করতে কয়েকমাস আগেই 'জয় বড় মা' অ্যাপ চালু করেছে নৈহাটি বড়কালী পুজো সমিতি। অনলাইনে অফিশিয়ালি এই অ্যাপের মাধ্যমে পুজো দিতে গেলে প্রণামী বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু, গত বৃহস্পতিবার পুজো সমিতির সম্পাদকের কাছে কানাডা থেকে এক ভক্ত জানায় 'অনলাইন পুজো' নামে একটি ওয়েবসাইটে বড়মার পুজোর নামে ১০০১ টাকা থেকে ৫০০১টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। এরপরই পুজো সমিতির সদস্যরা জানতে পারেন বহু ভক্তই ওই ভুয়ো ওয়েবসাইটে পুজো দিয়ে প্রচারিত হয়েছেন। পুজো সমিতির সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগ যাচাই করতে পুজো সমিতির সদস্যরা ওয়েবসাইটে গেলে দেখেন বড়মার অসংখ্য ছবি ওয়েবসাইটি সাজানো। সাধারণ মানুষ এক ঝলকে দেখলে বুঝবেন না ওয়েবসাইটটি ভুয়ো না আসল। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পুজো দিতে হলে নাম, ঠিকানা, গোত্র পূরণ করে একজনের জন্য পুজোর দিতে ১ হাজার ১টাকা, পরিবারের পুজো দিতে ২ হাজার ৫০১টাকা ও ভোগ সমেত পুজো দিতে ৫ হাজার ১ টাকার অপশন রয়েছে।
এরপরই এক সদস্য ওয়েবসাইটে থাকা ফোন নম্বরে কল করলে তাকে পুজো সংক্রান্ত বিষয় জানতে আরেকটি নম্বর দেওয়া হয়। সেই নম্বরে ফোন করতেই ধৃত সুরজিৎ কুন্ডু ফোন তুলে নিজেকে বড়মা ট্রাস্টের সম্পাদক বলে পরিচয় দেয়। এরপরই প্রতারণার বিষয় নিশ্চিত হয়ে নৈহাটি থানায় অভিযোগ জানালে রাতেই গ্রেপ্তার হয় অভিযুক্ত। বড় কালী পূজার সমিতির সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য বলেন, "অনলাইনে আমাদের পুজো দেওয়ার অফিসিয়াল অ্যাপের নাম 'জয় বড় মা'। গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে সেটি পাওয়া যাবে। কিন্তু সুরজিৎ কুন্ডু 'পুজো অনলাইন' নামে একটি ওয়েবসাইট খুলে সেখানে অনলাইনে বড়মার পুজো দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছে। প্রতারণা করতে সে নিজে কাজু-কিশমিশ কিনে প্রসাদ বলে পাঠাচ্ছে। এছাড়াও ওই ভুয়ো ওয়েবসাইটে প্রায় সব হিন্দু দেবদেবীর পুজো দেওয়ার নামেও প্রতারণার ব্যবস্থা আছে। প্রায় সব ব্যাঙ্কেই ওদের অ্যাকাউন্ট আছে। যারা ধর্মের নামে মানুষের আবেগকে এভাবে আঘাত করে তাদের জেলবন্দি থাকা উচিত।"