অর্ণব আইচ: গাড়ি চালাতে চালাতে চোখে নেমে আসছে ঘুম। জুড়িয়ে আসছে চোখ। গত বছর শুধু গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়ার কারণেই রাজ্যে ঘটেছে ৫৯টি পথদুর্ঘটনা (Road Accident)। যদিও ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি)-র তথ্য জানাচ্ছে, রাজ্যের দুর্ঘটনার মূল কারণ বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো আর গাড়ির রেষারেষি। আর তার সঙ্গে রয়েছে যানবাহনের অতিরিক্ত গতিও।
রাজ্যের ট্রাফিক পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, একটানা গাড়ি চালাতে চালাতে ক্লান্ত হয়ে যান চালকরা। এই প্রবণতা বেশি রয়েছে মালবাহী গাড়ির চালকদের মধ্যে। আবার কখনও দূরপাল্লার বাস বা লং ড্রাইভে বের হওয়া গাড়ির চালকদের মধ্যেও তা দেখা যায়। ট্রাফিক আধিকারিকদের মতে, প্রায় সারা রাত ধরে গাড়ি চালানোর পর বেশিরভাগ সময় ভোরবেলার দিকেই বুজে আসে চালকদের চোখের পাতা। কেউ ঝিমিয়ে পড়েন। কেউ আবার অল্প সময়ের জন্য ঘুমিয়েও পড়েন। স্টিয়ারিং থেকে হাত শিথিল হয়ে যায়। আর তাতেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। এভাবেই লং ড্রাইভের সময় হাইওয়েতে মৃত্যু হয়েছিল গায়ক কালিকাপ্রসাদের। প্রাণ হারিয়েছিলেন রাজ্যের পুলিশকর্তা দেবশ্রী চট্টোপাধ্যায়।
দেখা গিয়েছে, শুধু চালকদের এই আচরণেই সারা দেশে ১৭৯৫টি পথদুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে মৃত্যু হয়েছে ১৮০৮ জনের, মৃত্যু হয়েছে ৯১৬ জনের। ব্যতিক্রম নয় এই রাজ্যও। গাড়ির চালক ঘুমিয়ে পড়ার কারণে গত বছর এই রাজ্যেই ঘটেছে ৫৯টি পথ দুর্ঘটনা। তাতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। আহত হয়েছেন ৪৩ জন। কলকাতায়ও এই একই কারণে দু’টি পথদুর্ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ট্রাফিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কারণে পথদুর্ঘটনার সংখ্যা আগের থেকে কমেছে। অবশ্য রাত বা ভোরে দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক পুলিশ ও প্রত্যেকটি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চালকদের গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাঁদের চা ও জল দেওয়া হচ্ছে। চালকরা যাতে চোখমুখ ধুয়ে ঘুম কাটাতে পারেন সেই ব্যবস্থা করছে পুলিশই। এর পর পুলিশের হাতের চা খেয়েই ফের গাড়ি নিয়ে রওনা দিচ্ছেন চালকরা।
এনসিআরবি-র রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর সারা দেশে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ১১১টি পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ১০০ জনের। আহত হয়েছেন ৪ লাখ ৭ হাজার ৮৮১ জন। এর আগে রাজ্যে ১০ হাজার ৬৩৫টি পথদুর্ঘটনায় ৫৭৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে ও আহত হয়েছেন ৮১২৪ জন। কলকাতায় ১০৩৭টি পথদুর্ঘটনায় ২১৭ জনের মৃত্যু ও ৮১৬ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি এনসিআরবি-র। বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও ওভারটেক বা দুই গাড়ির রেষারেষির কারণে এই রাজ্যে ৩১৩৭টি পথদুর্ঘটনা ঘটেছে। তার ফলে ২০১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ও আহত হয়েছেন ২৪২৪ জন। এই কারণে কলকাতায় ১৬৮টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৩৯ জনের। আহতের সংখ্যা পাঁচ।
অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে ২১৬০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে প্রাণ হারিয়েছেন ১২৯২ জন ও ১৪৯৭ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার এই কারণে কলকাতায় ২৭টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনের। মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর ফলে গত বছর রাজ্যে ১৮৩টি দুর্ঘটনা ঘটে, যাতে মৃত্যু হয় ৮৮ জনের। আহত হন ১৪৬ জন। মদ্যপ চালক কলকাতায় ৭৭টি দুর্ঘটনা ঘটায়। তাতে ৯ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন ৬০ জন। গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রাজ্যে ৫২৯টি দুর্ঘটনা ঘটে, যাতে ৩৬৯ জনের মৃত্যু হয় ও আহতের সংখ্যা ৪৬৭।
কুয়াশা, বৃষ্টির মতো খারাপ আবহাওয়ার কারণে রাজ্যে ৪৯৯টি দুর্ঘটনায় ২৮২ জনের মৃত্যু ও ৪৯২ জন আহত হয়েছেন। রাস্তা খারাপ থাকার জন্য রাজ্যে ১২৯টি দুর্ঘটনায় ৪১ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ১১৩ জন। যদিও কলকাতায় ৩০৪টি পথদুর্ঘটনা-সহ রাজ্যে ৭৯২টি পথদুর্ঘটনায় ৩৩৯ জনের মৃত্যু ও ৫৪৩ জন আহত হওয়ার পিছনে কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে এনসিআরবি।