গোবিন্দ রায়: শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা। আপামর বাঙালির দিঘা-ই ভরসা।

শুধু বাঙালিই নয়, সারা বছরই বাংলা-সহ পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলো থেকেও সমুদ্রের টানে পর্যটকরা দিঘায় ভিড় জমান। আর তার উপর আগামী অক্ষয় তৃতীয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে উদ্বোধন হতে চলেছে দিঘার জগন্নাথ মন্দির। যাকে কেন্দ্র করে উৎসুক ভক্তকুল। ইতিমধ্যেই দিঘার নিরাপত্তাও বাড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। সেই রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা ও নজরদারির জন্য আলাদা করে উচ্চ-পদমর্যাদার এক আধিকারিক চায় কলকাতা হাই কোর্ট। সম্প্রতি একটি মামলার সূত্রে দিঘার জন্য একজন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিককে নিয়োগ করার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।
বাঁশদ্রোণী থানা এলাকার বাসিন্দা এক যুবতীর অভিযোগ, গত বছর বিহারের বেগুসরাইয়ের বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তারপর গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। অভিযোগ, বন্ধুত্বের সুযোগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ওই মহিলাকে দিঘা নিয়ে যায় ওই যুবক। সেখানে গিয়ে একটি হোটেল ভাড়া করা হয়। মহিলার আইনজীবী রণজিৎ রায়ের দাবি, সেখানেই তাঁর মক্কেল ওই যুবতীকে যৌন নির্যাতন করে। নির্যাতিতা ওই যুবকের সঙ্গে একই ঘরে থাকতে অস্বীকার করলে তাঁকে বন্দুক দেখিয়ে তাঁর সঙ্গে থাকতে বাধ্য করে সে। এখানেই শেষ নয়, এরপর ওই যুবতীর অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তাঁর অশ্লীল ফটো ও ভিডিও তোলা হয়। সেগুলি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দু’দিন ধরে ওই যুবক তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন চালান বলেও অভিযোগ। কোথায় বিষয়টি জানালে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেয় সে।
দিঘা থেকে ফিরে আসার পর ওই যুবকের বিরুদ্ধে বাঁশদ্রোণী থানায় অভিযোগ জানান ওই মহিলা। বাঁশদ্রোণী থানা ‘জিরো’ এফআইআর দায়ের করে সেটি দিঘা থানায় পাঠিয়ে দেয়। অভিযোগ, দিঘা থানার পুলিশও দীর্ঘদিন কোনও তদন্ত না করায় আপাতত দেশ ছেড়ে পালিয়েছে ওই যুবক। তার পরই বিষয়টি নিয়ে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা অভিযোগে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ওই যুবতী। শুক্রবার ওই যুবতীর সমস্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে আপাতত দিঘা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনারকে তদন্তের দায়িত্বভার দিয়েছেন বিচারপতি ঘোষ।
যেহেতু, ওই যুবক দেশ ছেড়ে পালিয়েছে বলে অভিযোগ, তাই তাঁকে দেশে ফেরাতে অবিলম্বে বিদেশ মন্ত্রক ও পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ করারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই মামলার শুনানিতেই উঠে আসে একজন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিককে নিয়োগের বিষয়। আদালতের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বিচারপতির মন্তব্য, "বিশেষত দিঘায় হোটেলগুলিতে নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একটু বেশি টাকায় গ্রাহক পাওয়ার জন্য পর্যটকদের কাছ থেকে কিছু যাচাই না করেই হোটেল ভাড়া দেওয়া হয় কি না পুলিশের তা খতিয়ে দেখা উচিত।" এমনকী, আদালতের মতে, দিঘা একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। সেখানে বহু মানুষের সমাগম হয়। তাই দিঘার আইনশৃঙ্খলার জন্য একজন ডেপুটি পুলিস কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিককে নিয়োগ করা উচিত।