সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কাশ্মীরি লাল আপেলের চাষ এবার জঙ্গলমহলে! কাশ্মীরের পাহাড়ের ঢালে সুস্বাদু মিষ্টি আপেল চাষের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে পুরুলিয়ার বনমহল বান্দোয়ানে। আঙুর, স্ট্রবেরির পর এবার ‘অরণ্য সুন্দরী’ বান্দোয়ানের মাটিতে ফলবে এই মিষ্ট ফল। যা সরকারি উদ্যোগে পুরুলিয়ায় এই প্রথম। মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে ১০০ দিনের কাজে উদ্যান পালন দপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে জৈব সারের মাধ্যমে এই কাজ হাতে নিয়েছে বান্দোয়ান ব্লক প্রশাসন।
আপাতত বান্দোয়ানের চাঁদড়া গ্রামে এক বিঘা জমির উপর পরীক্ষামূলকভাবে এই চাষ করা হচ্ছে। কাজ সফল হলে এই চাষ ছড়িয়ে দেওয়া হবে সমগ্র বান্দোয়ানে। বৃহস্পতিবার প্রায় ৪০টি আপেল গাছের চারা তুলে দেওয়া হয় ব্লক প্রশাসনের তরফে। বান্দোয়ানের বিডিও কাসিফ সাবির বলেন, “এই মিষ্টি লাল আপেল সাধারণত শীতপ্রধান এলাকাতেই হয়ে থাকে। তবে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়াতে এই ফল চাষ একেবারেই হয় না তা কিন্তু নয়। তাই উদ্যানপালন দপ্তরের পরামর্শ মতো আমরা বান্দোয়ানের মাটিতে এই ফল চাষ করার চ্যালেঞ্জটা নিলাম।”
[আরও পড়ুন: ‘২২০ টা আসন না পেলে রাজনীতি ছেড়ে দেব’, কেতুগ্রামের সভা থেকে চ্যালেঞ্জ অনুব্রতর]
আজ থেকে দশ বছর আগেও এই বনমহল ছিল অশান্ত। সূর্য ডুবলেই এখানে যেন রাত নেমে আসতো। গোলাগুলি, ল্যান্ডমাইন ছিল কার্যত নিত্য দিনের ঘটনা। সেই অতীতের মাও, হার্মাদ নাশকতায় রক্ত ভেজা মাটিতেই আঙুর, স্ট্রবেরি চাষে যে সাফল্য মিলেছে এবার আপেল চাষে সেই সাফল্যের ধারাকে বজায় রাখতে চাইছে বান্দোয়ান ব্লক প্রশাসন। ইতিমধ্যেই জমি প্রস্তুত করে ফেলেছেন তাঁরা। চাঁদড়া গ্রামের এক কৃষক মহিলা চম্পাবতী মাহাতোর জমিতে এই আপেল চাষ করা হচ্ছে। বান্দোয়ানের একটি সংস্থার মাধ্যমে হিমাচল প্রদেশ থেকে পাঁচ প্রজাতির আপেলের চারা নিয়ে আসা হয়। সেই এক-একটি আপেল চারা গাছের (Apple Tree) দাম প্রায় ৬০০ টাকা। প্রস্তুত হওয়া জমিতে দুই বছর বয়সের গাছ লাগানো হচ্ছে। চার বছর বয়স পর্যন্ত গাছ থেকে প্রায় দশ কেজি করে আপেল পাওয়া যায়।
এক-একটি আপেল ফলের গাছ প্রায় ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল আসে। ওই কৃষক মহিলা চম্পাবতী মাহাতো বলেন,
“আমার জমি কার্যত ফাঁকা পড়েছিল। ব্লক প্রশাসন আপেল চাষের কথা বললে আমরা ভীষণভাবে উৎসাহী হয়ে যাই। জমি প্রস্তুতি থেকে শুরু করে উদ্যানপালন দপ্তর যেভাবে পরামর্শ দিয়ে চলেছে আশা করছি এই রুখা মাটিতেও আপেল ফলাব।” উদ্যানপালন বিভাগ জানিয়েছে, এই বনমহল রুখা হলেও এখানে শীতে প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ে। আর হাড় হিম করা শীত-ই এই চাষের সহায়ক। ফলে এই চাষ বান্দোয়ানের মাটিতে সফল হবেই বলে আশাবাদী উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিকরা। এই ব্লকের উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিক আশীষ মোহন্ত বলেন, “ এই ফলের চাষ এঁটেল, দোঁয়াশ ও বেলে মাটিতে হয়ে থাকে। তবে বেলে, দোঁয়াশ মাটিতে গাছের বৃদ্ধি ভাল হয়। পরাগ সংযোগ ভাল হওয়ার জন্য তিন থেকে চারটি প্রজাতির গাছ থাকা উচিত। তবে এখানে পাঁচ প্রজাতির গাছ লাগানোর কাজ চলছে।” এখানে যে আপেল আসে তা মোমের প্রলেপ লাগানো। কিন্তু বান্দোয়ানের আপেল একেবারে জৈব সারে চাষ হচ্ছে। ফলে চাষিরা অনেকটাই দাম পাবেন।
[আরও পড়ুন: চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে নাবালিকাকে ‘ধর্ষণ’, অভিযুক্তকে গণধোলাই প্রতিবেশীদের]
এই চাষের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে সমস্ত উদ্ভিদ সর্বপ্রথম চাষের আওতায় আসে, তার মধ্যে একেবারে গোড়ার দিকে রয়েছে আপেল। আলেকজান্ডার সর্বপ্রথম ৩২৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কাজাখস্তানে খাটো প্রজাতির আপেল খুঁজে পান। যা তিনি মেসিডোনিয়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন। এখন বিশ্বব্যাপী এই ফলের চাষ হলেও মূলত মধ্য এশিয়া এই চাষের উৎপত্তিস্থল।